তোমরাই আবার আমাদের সঙ্গে একই রাষ্ট্রে বাস করতে পারবে না কেন?
অসম্ভব! অসম্ভব! ইহুদি জানে সে আড়াই হাজার বছর ধরে ইজরাএলে যে নবীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুখস্বপ্ন গড়েছে সে রাজা দাউদ (ডেভিড) সুলেমানের রাজ্যের হুবহু ফটোগ্রাফ। সে রাজ্য পূত-পবিত্র। তাতে কোনও বিধর্মী নেই। যারা ছিল তাদের বহু পূর্বেই নির্মূল করা হয়েছে। সলমনের গ্লরি তো তার বিধর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে নির্মিত হয়নি। এসব প্রস্তাব শুনলেই কানে আঙুল দিতে হয়।(৩)
তাই বলেছিলুম, আরব-ইহুদি সমস্যার সমাধান কোথায়?
————
১. দুর্বল স্মৃতিশক্তির জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করে নিবেদন, চসার বোধহয় ওই ধরনের একটি নিষ্পাপ বালকের কাহিনী লিখেছেন। ইহুদিরা নাকি তার গলা পুরোপুরি কেটে ফেলতে পারেনি বলে সে বেঁচে যায় ও তার করুণ কাহিনী খ্রিস্টানদের সামনে বর্ণনা করে।
২. আসলে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইজরাএল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যখন ইহুদিরা সে রাজ্যের চাষিদের সঙ্গিনের খোঁচায় তাড়িয়ে দিয়ে, তাদের জমিতে বিদেশাগত জাতভাইদের বসাল তখন ইরাক, সিরিয়া ইত্যাদিতে (মিশর ও উত্তর আফরিকায় অপেক্ষাকৃত অনেক কম) আরবরা সেখানকার ইহুদি বাসিন্দাদের ওপর দাদ তুলতে লাগল। ফলে বাধ্য হয়ে এরা ইজরাএলে চলে যেতে লাগল।
৩. অতীতের কোনও বিশেষ পূত-পবিত্র যুগে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাটা ইহুদিদের একচেটে নয়। মুসলমানদের ওয়াহাবি আন্দোলন এককালে তাই চাইত। অবশ্য তাদের প্রোগ্রামে বিধর্মীদের খেদাবার ব্যবস্থা নেই। কারণ তা হলে মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করবার জন্য লোক পাবে কোথায়? শুনেছি, স্বামী শ্ৰদ্ধানন্দও বৈদিক যুগ পুনরুজ্জীবিত করতে চাইতেন কিন্তু সেই ধর্মরাজ্যে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের শুদ্ধি করে নেবার ব্যবস্থা ছিল (ব্রাত্য ব্যবস্থা তুলনীয়)। এটাকেই যখন বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পেশ করা হয় তখন তার জিগির Back to nature!
হাতে কমণ্ডলু, মাথায় তুর্কি টুপি
প্রভাঁসের লোক বড়ই অনাড়ম্বর। তাই স্যুটের বড়ফাট্টাই নিয়ে সেখানে মশকরা জমে ভালো।
স্যুট বাবদে একদা মহামুশকিলে পড়েছিলেন লর্ড কার্জন।
আমি জানি আমার নগণ্যতম অর্থাৎ আমার প্রিয়তম পাঠকও প্রত্যয় যাবেন না যে, লর্ড কার্জনের মতো বিলেতের খানদানি পরিবারের নিকষ্যি কুলীন স্যুটের মতো ডালভাত– সরি, আই মিন বেকন-আন্ডা নিয়ে গর্দিশে পড়তে পারেন। টাকাকড়ির অভাব এমনিতেই ছিল না, তদুপরি বিয়ে করেছিলেন মার্কিন কোটিপতির দুহিতা নিশ্চয়ই শ্বশুরবাড়িতে আসার সময় (আবার ভুল করলুম, মার্কিনিংরেজ মেয়ে শাদি করে শ্বশুরবাড়ি যায় না, স্বামীকে সেখান থেকে ছোঁ মেরে শিকার করে ঘরে বাঁধে অন্য মোকামে) পিতাকে উত্তমরূপে দোহন করেই এসেছিলেন। তাই স্বীকার করে নিচ্ছি গল্পটি অন্য কারও বাবদে হতে পারে এবং ডিটেলে ভুল থাকবে এন্তের। কিন্তু আমার নিপীড়িত কর্মক্লান্ত স্মৃতিশক্তি তবু যেন ক্ষীণ কণ্ঠে বার বার অভিমানভরে বলছে, এটা লর্ড কার্জন অব্ কিডলস্টনেরই কাহিনী কার্জনের মুসলমানপ্রীতি দেখে অনেকেই বলতেন লর্ড কার্জন অব্ খিদিলস্তান।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কিকে কচুকাটা করা হল সে-এর সন্ধিচুক্তিতে (তখনই এদেশে খেলাফত আন্দোলনের দানা বাঁধে), কিন্তু ওই সময় উদয় হল মুস্তফা কামাল পাশার, (পরে আতা ত্যুরক) এবং তিনি সে সন্ধিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে খেদিয়ে বার করে দিলেন গ্রিকদের তুর্কি থেকে। তখন আবার নয়া করে সন্ধিপত্র তৈরি করতে হবে। ইউরোপময় হাহাকার রব উঠেছে, বর্বর মুসলমান তুর্ক সুসভ্য খ্রিস্টান গ্রিকদের তাড়িয়ে দিয়েছে তার হকের (বে-) দখলি জমি থেকে নতুন সন্ধিতে এটা মানা চলবে না। (ফ্যাতাপ্লি নয়)। তাই নয়, সন্ধিটা যাতে চোস্ত-দুরস্ত হয় সেজন্য লজান বৈঠকে পাঠানো হল তামাম ইউরোপের কুটিলস্য কৌটিল্য মহামান্য কার্জনকে।
গণ্ডা দশেক সটকেশ ট্রাঙ্ক নিয়ে নামলেন পরমপ্রতাপান্বিত কার্জন লজান শহরে। দুনিয়ার রিপোর্টার জড় হয়েছে তাঁর অবতরণভূমিতে।
মালপত্র যখন নামছে তখন দেখা গেল, সেই বাষট্টি ভাজা লগেজের সঙ্গে আলাদা করে অতি সন্তর্পণে নামানো হল একখানি ছোট্ট ফুট-স্টুল- লর্ড কার্জন মিটিং-মাটিং সর্বত্রই এই জিনিসটির উপর পা না রেখে দু-দণ্ড বসতে পারেন না। ওইটে দেখামাত্রই এক ঠোঁট-কাটা ফরাসি সাংবাদিক টিপ্পনী কাটলে– ভোয়ালা ল্য ত্রোন দ্য দামা! (Voila le trone de Danas!)–এই হেরো, দামাস্কাসের সিংহাসন–অর্থাৎ নয়া মাহমুদ কার্জনের চলচৌকি পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন নগর (স্থান পরিবর্তন না করে একটানা এক জায়গায় আছে) দমস্কের সমতুল্য।…তা সে যাক গে, এটা ঈষৎ অবান্তর।
তুর্কির পক্ষ থেকে এসেছেন জেনারেল ইসমে পাশা (পরে প্রেসিডেন্ট ইনে)।
জোর কনফারেন্স, জোরালো উপ-কনফারেন্স, সাবকমিটি আরও কত কী। কার্জন বজ্রনির্ঘোষে থানডারিং– লেকচার ঝাড়লেন টেবিল থাবড়ে। ইসমে দিব্য ইংরেজি বোঝেন– ভান করলেন বোঝেন না, তদুপরি তিনি কানে খাটো। থানডারিং লেকচারের প্রতিটি তার কানের কাছে অনুবাদ করে দিতে হয়– থান্ডার ততক্ষণে ঠাণ্ডা। গরমাগরম উত্তর দিতে হল। সেপাই ইসমে পারবেন কেন অরেটর কার্জনের সঙ্গে? তবু চলল লড়াই।(১)