মোগল পাঠান হদ্দ হল ফারসি পড়ে তাঁতি। চিতেবাঘের চিত্তির মুছতে লেগে গেলেন সঁসিয়ে ল্য জেনেরাল শার্ল দ্য গল। না হলেই তো চিত্তির! তবে শুনেছি, এ রবির পিছনেও নাকি একটি বিরাট ছায়া আছে। তিনি নাকি মাদাম। তিনিই নাকি ফ্রান্সের নব জোয়ান অব আর্ক পদি পিসি।
এ সুবাদে আমার মনে পড়ল, এমিল জোলারও নাকি কয়েকটি পদি পিসি দোস্ত ছিলেন। তারা নাকি একাধিকবার বায়না ধরে তাকে বলেন, ভাই, তুমি লেখো ভালো; কিন্তু তোমার কোনও বই-ই নিঃসঙ্কোচে পুত্রকন্যার হাতে তুলে দেওয়া যায় না। একখানা ক্লিন বই লেখ না কেন? জোলা ঢেঁকি গিললেন।
সে বইয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে আনাতোল ফ্ৰাস বলেন, মঁসিয়ে জোলা যখন শূয়ারটার মতো কাদাতে গড়াগড়ি দেন তিনি সেটি করেন বড়ই গ্রেসফুলি (অর্থাৎ প্রকৃত সমঝদার আর্টিস্টের মতো), কিন্তু তিনি যখন বন্ধুজনের অনুরোধে পাখনা গজিয়ে দেবশিশুপারা স্বগৃগোপানে ওড়বার চেষ্টা করেন তখন সেই এলোপাতাড়ি ড্যানার বাড়ি দেখে হাসি সামলানো রীতিমতো মুশকিল হয়– হি ডাজ ইট মোস্ট গ্রেসূলেসলি। তার পর তিনি বলেন, আই প্রেফার মঁসিয়ে জোলা ওয়ালোইং ইন মাড়–মসিয়ো জোলার নর্দমাতে হুটোপুটি করাটাই আমি পছন্দ করি বেশি (৮)
***
প্যারিস ড্যানা গজিয়ে ফেরেশতার মতো বেহেশৎ পানে ওড়বার চেষ্টা করছে ইয়াল্লা!!
———-
১. সাবরকরকে যখন বন্দি করে ইংরেজ ভারতে পাঠাচ্ছে, তখন তিনি ফরাসি বন্দরে পালিয়ে গিয়ে ডাঙায় উঠেন। ইংরেজ সেলার তাড়া করলে সাবরকর ফরাসি পুলিশম্যানকে বোঝাতে পারলেন না যে, তিনি রাজনৈতিক বন্দি ফরাসি ভাষা জানতেন না বলে। সাধারণ খুনি আসামি ভেবে পুলিশ তাকে ইংরেজের হাতে সমর্পণ করে। পরে ইংরেজ বলে, ফরাসি পুলিশ ফরাসি সরকারের প্রতিভূরূপে সাবরকরকে ইংরেজের হাতে যখন সমর্পণ করেছে, তখন পরে ফরাসি সরকারের আপত্তি করার কোনও হেতু নেই।… এসব কিন্তু আমার শোনা কথা।
২. Aristophanes, Terence, Plautas, Apleus, Ovid, Virgil, Shakespeare, Rabelais, Boccacio, La Fontaine, Saint-Amant, Voltaire, J. J. Rousseau, Diderot, Mirabeau, Gautier, Musset etc. etc.
ফরাসি জাতটা বিদেশি নাম বিকৃত করতে ওস্তাদ– অনেকটা বাঙালির মতো কিংবা বলতে পারেন, পরকে আপনাতে জানে।
৩. অধুনা এদেশে নাকি তুলনাত্মক সাহিত্যচর্চা পড়ানো হয়। এ চর্চাতে যাদের হাতেখড়ি হচ্ছে, তাদের স্মরণ করিয়ে দিই যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক লোকই রোজনামচা লেখেন। এদের ভিতর একজন ফরাসি জিদ, দ্বিতীয়জন জর্মন– অ্যাঙার (স্ট্রোলুঙেন) এবং তৃতীয়জন সুইস ফ্রিশ (টাগেবুখ) যদিও যুদ্ধের পর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তবু তার মূল Weltanschauuang যুদ্ধ ও তৎপরবর্তী ধ্বংসকে কেন্দ্র করে। এরা তিন দেশের সর্বোত্তম না হলেও তারই কাছাকাছি লেখক।… পাঠক সবিস্ময়ে লক্ষ করবেন, ফরাসি জিদ কী মৈত্রীর চোখে জর্মনদের এবং জর্মন ঝুঙার ফরাসিদের শ্রদ্ধার চোখে দেখছেন! এর সঙ্গে পাঠক আইজেনহাওয়ারের ক্রুসেড ইন ইয়োরোপ মিলিয়ে পড়লে উপকৃত হবেন। এস্থলে উল্লেখ করা কর্তব্য মনে করি, শেষে ইংরেজি বই ভিন্ন বাদবাকি তিনখানা বই আমি এদেশের বিদেশি-পুস্তক বিক্রেতাদের কেরপায় পাইনি। ঈশ্বরাদেশে যারা পপলার গাছ পেতে, তাদেরই একজনের বদান্যতায়। তা সে যাক গে। কিন্তু এই সুবাদে আমি আমার বিশেষজ্ঞ পাঠকদের শুধোই আমার বাস মফস্বলে– আচ্ছা আজ যদি কোনও বন্টু বা হটেনটট বিদেশি বই কিনতে চায়, তবে তাকেও কী এক্সচেঞ্জের জন্য পন্টকদের পায়ে তেল দিতে হয়? বোধহয় না। কারণ তারা যে বর্বর। আর আমরা সভ্য। মহামানবের তীরে বাস করি।
৪. Dumesnil, Correspondance, পৃ. ১০৯।
৫. বইখানা অবশ্য মোপাসাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়ে শুধু ফ্রান্সে নয়, সর্ব সভ্য বিশ্বে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। আমি বিশেষ করে এ বইখানা যে উল্লেখ করলুম, তার কারণ, প্রবাদে আছে পেন ইজ মাইটিয়ার দ্যান সর্ড লেখনি তরবারি অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী- এবং এই বইখানি তকালীন ফরাসি সেনাবাহিনীর স্বেচ্ছাচারী মদমত্ততাকে সম্পূর্ণ পর্যদস্ত করে প্রবাদবাক্যটি সপ্রমাণ করে। আমার জানামতে এটি লেখনী তরবারিতে একমাত্র সরাসরি যুদ্ধ।
৬. আজকের দিনের সম্মানিত মহিলারা যে খাস কামরায় অতিথি-অভ্যাগতকে আপ্যায়িত করেন তার নাম বুদোআর। শব্দটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে সন্দেহ আছে। অনেকেই মনে করেন এই বুদর = to Sulk=অভিমান করা থেকে এসেছে।
৭. ক্রুসেড ইন ইউরোপ, পৃ. ৪৫৬।
৮. কাতরকণ্ঠে নিবেদন; দুনিয়ার কুল্লে বই- তা আমার জরুর যত কমই হোক আমি জোগাড় করি কী প্রকারে? তাই অনেক স্থলেই স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সরস্বতী সাক্ষী, সজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় কারও প্রতি অধম অবিচার করে না। এসব মহাজনদের বচন খাঁটি সোনার মোহর উদ্ধৃতির চাপে ব্যাকট্যাড়া হয়ে গেলেও সোনা সোনাই থাকে।
সত্য-ক্রেতা-দ্বাপর
সুইটজারল্যান্ডের রামগাড়ল হার পডি নাকি একদা একটা দাঁড়কাক পুষেছিল।
বন্ধু শুধাল, এ কী ব্যাপার! কাগ আবার কেউ পোষে নাকি? বৈজ্ঞানিকসুলভ অর্ধমুদ্রিতনয়নে পডি বলল, ওই যে লোকে বলে দাঁড়কাক একশো বছর বাঁচে, সেটা ঠিক কি না আমি হাতে-নাতে নিজে দেখে নিতে চাই।