পূর্বেই বয়ান দিয়েছি, মানুষের ভিতরকার আটিস্ট দুশমনকেও সাহায্য করে, আর আমি দুশমনের দুশমনকে করব না? কারণ আমার ভিতরেও একটা আবৃটিটু রয়েছে। আত্মশ্লাঘা? আদৌ না। কোন মানুষের রক্তে আটিসৃটের ছোঁয়াচ বিলকুল লাগেনি বলতে পারেন? এমনকি আমরা যাকে অভদ্র ভাষায় মিথ্যুক বলি সে-ও তো বেচারা সুযোগ থেকে বঞ্চিত-ইংরেজিতে যেমন দড়কচ্চা-মারা গাছের বেলা বলে এটার গ্রোৎ স্টানটিড়- ঔপন্যাসিক, কবি, এক, কথায়, আরটিস। নোট যে লোক জাল করে সে-ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত রবিবর্মা।
অতএব আমি যখন কম্যুনিস্ট ভায়াদের সদুপদেশ দিই তখন সেটা দম্ভজনিত আত্মশ্লাঘাবশত নয়। অবশ্য তারা সেটা নেবেন কি না, সেটা নিতান্তই তাদের বিবেচ্য। এবং আমি মনের কোণে এ আশাও পোষণ করি যে তথাকথিত ধর্মভীরুজনও এদিকে খেয়াল করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। অর্থনীতিবিদ শুমপেটার বলেছেন :- মার যখন বিশ্বশ্রমিক সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেন তখন অনুমান করতে পারেননি যে, পৃথিবীর যে কোনও স্থলে প্রথম ইনকিলাবের ফলস্বরূপ প্রথম প্রলেতারিয়া-রাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়া মাত্রই অন্যান্য দেশের ক্যাপিটালিস্ট্রা সেটা দেখে তার থেকে লে ড্র করে নিজেদের সেই অনুযায়ী এজাস্ট করে নেবে, মানিয়ে নেবে।(১) অর্থাৎ এযাবৎ যে যে বেধড়ক শোষণনীতি চালিয়েছে সেটাকে মডিফাই করে প্রলেতারিয়াকে কিছু পরিমাণে ব্যবসাতে হক দিয়ে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেয়ার, পেনশন, বেকারির সময় ডোল, চিকিৎসার ব্যবস্থা, নানাবিধ ইনসিওরেনস দিয়ে এমনই তার স্বার্থ নিজের স্বার্থে জড়িয়ে ফেলবে যে একদিন সে দেখবে, হি হ্যাঁজ মোর টু লুজ দ্যান মিয়ারলি ফেটারজ অর্থাৎ ইনকিলাব এনে সে অর্থনৈতিক পায়ের বেড়ি হাতের কড়ার দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে বটে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার ইনসিওরেনসের সুবিধাও হারাবে। নবীন প্রলেতারিয়া রাষ্ট্র বিনা মেহন্নতে ফোকটে পয়সা কামানোটা বিলকুল বরদাস্ত করে না। ক্যাপিটালিস্টদের এই এড়জাস্ট করে নেওয়াটাকে শুমপেটার তুলনা করেছেন রোগের বীজাণুর সঙ্গে; তারা যেরকম প্রাণঘাতী ওষুধের ইনজেকশন খেয়ে খেয়ে কালক্রমে ওষুধের সঙ্গে নিজেদের এজাসট করে নেয় তার পর সহজে নি মূল হতে চায় না।
প্রশ্ন উঠবে, আমি কি তবে কম্যুনিস্ট ভায়াদের লেলিয়ে দিচ্ছি ধর্মের পিছনে, আর ওদিকে ধর্মানুরাগীজনকে বলছি, সাধু সাবধান!?
পাঠক যদি অনুমতি দেন, তবে এ প্রশ্নের উত্তরটি আমি উপস্থিত মুলতবি রাখব। কারণ শুধু এরই জন্য আমাকে পুরো এক কিস্তি পঞ্চতন্ত্র লিখতে হবে। উপস্থিত যেটা লিখছি তাতে এর স্থান সঙ্কুলান হবে না।
***
কম্যুনিসটা একটি মোক্ষম তত্ত্ব-কথা বলেন যেটা সকলেরই বিচার করে দেখা উচিত। বস্তুত এ অধম এ বাবদে গত ত্রিশ বছর ধরে চিন্তা করেছে, দলিল-দস্তাবেজ সন্ধান করেছে, ফের চিন্তা করেছে, এখনও করছে, উপকৃত হয়েছে ও হচ্ছে।
তাঁরা বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব প্রগতিশীল আন্দোলন–ইনকিলাব– যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখতে পাই তার পিছনে থাকে অর্থনৈতিক কারণ– ইকনমি কনডিশন্।(২)
সকলেই স্বীকার করবেন, পৃথিবীতে সাতটি বড় বড় আন্দোলন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। তার ফলে সাতটি প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়, এবং তার পাঁচটি এখনও পৃথিবীতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি করে।
সে সাতটি সচরাচর ধর্ম নামে পরিচিত। ধর্মের নাম শুনে পাঠক অসহিষ্ণু হবে না। আগে কহি।
তার তিনটির জন্ম এদেশে হিন্দু (সনাতন), বৌদ্ধ, জৈন। এ তিনটি আর্যধর্ম। শেষের জৈনধর্ম এখন পৃথিবীর নাট্যমঞ্চে আর প্রায় দৃষ্টিগোচর হয় না। বৌদ্ধধর্মের রঙ্গভূমি বহু যুগ ধরে ভারতের বাইরে।
আর তিনটি আরব-প্যালেস্টাইন নিয়ে যে সেমিতি (সেমেটিক) ভূমি সেখানে : ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান ধর্ম (ইসলাম)। এ তিনটি সেমিতি ধর্ম। ইহুদিধর্মের বিশ্বাসীজন প্রায় দু হাজার বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর অধুনা সগৌরবে রঙ্গভূমিতে অবতীর্ণ হয়েছেন, বিশ্বলোক ভাবিছে বিস্ময়ে, যাহার পতাকা/ অম্বর আচ্ছন্ন করে, এতকাল এত ক্ষুদ্র হয়ে কোথায় ছিল ঢাকা।
সপ্তমটির জন্মস্থল ভারত এবং সেমিতি ভূখন্ত্রে মাঝখানে। এটিও খাঁটি আর্যধর্ম। প্রাচীন ইরানে এর জন্ম ও জরথুস্ত্রী বা জরথুস্ত্রের ধর্ম নামে পরিচিত। লোকমুখে এরা অগ্নি-উপাসক আখ্যায় পরিচিত। ভারতবর্ষে এখন এই পারসিদের একমাত্র না হলেও-প্রধান নিবাসস্থল। ইহুদিদের সাতশো বছর পূর্বে এঁরা রঙ্গভূমি থেকে বিদায় নেন। কিন্তু আজ যদি এঁরাও ইহুদিদের মতো দুই সেন– মারকিন জনসেন আর ইংরেজ উইলসেনকে হাত করে প্রাচীন ইরানে অধুনা আফগানিস্তানে অবতীর্ণ হয়ে বলুখ (সংস্কৃতে হিল) বদখশান দখল করে আরিয়ানা (আর্য) রাষ্ট্র প্রবর্তন করেন তবে অন্তত আমরা আশ্চর্য হব না। বলশ্য অঞ্চল রুশ সীমান্তের এ-পারে– মাঝখানে মাত্র আমুদরিয়া (নদী) এবং এশিয়ার বুকের মধ্যিখানে। এখানে মারকিন-ইংরেজের একটি কলোনি বা ঘাটির বড়ই প্রয়োজন!… লাওৎসে, কনফুৎসর নীতিবাদ ধর্ম নামে পরিচিত হয় না।
যে অর্থনৈতিক বাতাবরণের দরুন নবীন ধর্ম সৃষ্টি হয় তার অনুসন্ধান করতে গেলে ইসলাম নিয়ে আরম্ভ করাই প্রশস্ততম, কারণ এটি সর্বাপেক্ষা নবীন এবং ইসলামের পরে আর কোনও বিশ্বধর্ম জন্মগ্রহণ করেনি। তদুপরি আরবরা গোড়ার থেকেই জাত-ঐতিহাসিক। তারা হজরত সম্বন্ধে যতখানি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখে গেছে তার তুলনায় খ্রিস্ট বা বুদ্ধের জীবনী অনেক কাঁচা হাতে মহাপুরুষদের তিরোধানের প্রচুর সময়ের ব্যবধানে লেখা হয়েছে। ফলে তাঁদের ছবিগুলো আইডিয়ালাইজড– আরটিসট কল্পনার ওপর নির্ভর করেছেন বিস্তর।(৩)