দুঃখের বিষয়, ভিয়েনা– জর্মন ভাষার বড় কেন্দ্র এখনও এক্সপেরিমেন্টাল স্টেজে, এবং ফরাসি কৃষ্টির বৃহৎ কেন্দ্র ব্রাসস্ আমি কখনও পাইনি।
মস্কো একদা অতি সযত্নে রুশ ভাষা শেখাত। আরবি, ফারসিতে যাদের দিলচসপি, তাঁরা অনায়াসে বাগদাদ, কাইরো এবং তেহেরান খুঁজে পাবেন। কাবুল ফরাসি ও ইংরেজিতে অল্পক্ষণের জন্য ব্রডকাস্ট করে। ফারসি এবং পশতু প্রচুর।
আমি শুধু সেসব স্টেশনের কথাই উল্লেখ করেছি, যেগুলো এদেশে মোটামুটি ভালোই পাওয়া যায় এবং বিদেশি ভাষা-জ্ঞান সড়গড় রাখতে সাহায্য করবে।
———
*সব স্টেশনই কোনও না কোনও সময় আপন ঠিকানা দেয়। সে ঠিকানায় চিঠি লিখলে তারা প্রোগ্রাম ফ্রি পাঠায়। যারা ভাষা শেখায় তারা কেউ কেউ ফ্রি চটি পাঠ্যবইও পাঠায়, কোনও কোনও স্থলে পয়সা দিতে হয়। কখন কোন মিটারে কে ব্রডকাস্ট করে তার সবিস্তর বর্ণনা পাওয়া যায় World Radio Handbook, Lindorffs, Allee1, Hellerup, Denmark বইয়ে। দাম পাঁচ টাকার মতো। এবং সকরুণ নিবেদন, আমাকে দয়া করে চিঠি লিখবেন না। আমি অসুস্থ। সেক্রেটারি নেই।
অর্থমর্থম
বিশ্বের অন্যতম অসাধারণ লেখক, প্রত্নতাত্তিক, যোদ্ধা টমাস এডওয়ার্ড লরনস (Lawrence) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আরব জগতে যে সুখ্যাতি অর্জন করেন তার কিংবদন্তি আজও সে অঞ্চলে সুপ্রচলিত। সে যুদ্ধের সময় তুর্কি রাষ্ট্রের পরাধীন আরবভূমি তুর্কির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ মনোভাব দেখালে পর তাঁর ওপর ভার পড়ে আরবদের গেরিলা ও সাবোতাজ কর্মে পাকাপোক্ত করে তোলার। …একদা তুর্কি থেকে বেরিয়ে একখানা হজযাত্রী ট্রেন মদিনা যাবে। ওটাকে বিস্ফোরক দিয়ে কী করে ওড়াতে হয় তারই তালিম দিচ্ছেন লরন আরবদের। আসলে নিরীহ যাত্রীবাহী গাড়ি চুরমার করতে তাঁর মন মানছিল না কিন্তু নবগীতায় নাকি সান্ধ্যসংস্কৃতে আছে রণে চ প্রেমে চ দাক্ষিণ্য নৈব নৈব চ। এন্তের তোড়জোড় করে লরনস তো রেললাইনের তলায় বিস্ফোরক পোতার কায়দাকেতা আরবদের শেখালেন বিশেষজ্ঞের গাম্ভীর্য ও তাচ্ছিল্য সহকারে। তার পর সবাই বিস্ফোরকের আওতার বাইরে এসে আশ্রয় নিলেন মরুভূমির একটা বালির ঢিপির পিছনে। দেখা গেল, দূর থেকে আসছে খেলনার গাড়ির মতো হেলেদুলে মান্ধাতার আমলের ধাপামার্কা যাত্রীগাড়ি। সক্কলের চোখ গাড়িটার ওপর ডাকটিকিটের মতো সাঁটা। এই এল– এই এল– এই এসে গেল বিস্ফোরকের ভিসুভিয়াসটার উপর ওইয্য- কোথায়। কী! গাড়িখানা দিব্য ঝ্যাক ঝাক করে কাশতে কাশতে ফাঁড়াটা মোলায়েমসে পেরিয়ে গেল।… আরবরা বিশেষজ্ঞের দিকে আড়নয়নে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিল কি না বলতে পারব না। লস্ বলেছেন, দ্য আরটিসট ইন মি ওয়োজ ফুরিয়স, দ্য ম্যান ইন মি ওয়োজ হ্যাপি। ইংরেজিটা আমার হুবহু মনে নেই, কিন্তু এটা পরিষ্কার এখনও যেন কানে বাজছে, ভাষাটি তাঁর ছিল চমৎকার আর বলার ধরনটি সরেসেরও সরেস।… যেখানে লরস হুনুরির মতো ফাঁদ পাতছেন সেখানে তিনি আরটিস্ট পার-একসেলাস, সেখানে বেবাক বন্দোবস্ত বরবাদ-ভণ্ডুল হলে ভিতরকার আবৃটিস সত্তা তো চটে যাবেই। কিন্তু সেই আরটিসটের পাশেই যে দরদী মাটির মানুষটি রয়েছে সে তো কতকগুলো নিরীহ বালবৃদ্ধকে খুন করতে চায়নি। সে তখন বগল বাজিয়ে নৃত্য করছে।
ঘটনাটি যে এতখানি ফলিয়ে বললুম তার কারণ, এ ব্যাপারটা একটুখানি ভোল বদলে আমাদের জীবনে নিতা নিত্য ঘটে। যেমন মনে করুন, আপনি উদ্ভিদবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ, তদুপরি শখের বাগান করেছেন বহু বহু বছর ধরে। আপনার প্রতিবেশী একটা আস্ত জানোয়ার পাড়াটা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনি একদিন দেখেন, পন্টকটার প্রাণে শখ জেগেছে, কোত্থেকে একটি অতি সুন্দর কামিনীর চারা জোগাড় করে সেটা পুঁততে যাচ্ছে এমনভাবে যে, সজ্ঞানে চেষ্টা করলেও এর চেয়ে বেশি ভুল করা যায় না। জায়গাটা বাছাই করেছে ভুল, গর্ত যা করেছে এবং সেটাতে জল আর কাঁচা গোবর যা রেখেছে তাতে দিল্লির মিঞা কুবৃমিনার একবার পা হড়কে পড়ে গেলে কাগজে বেরুবে মিঞা কুত্ত্ব জলে ডুবে আত্মহত্যা করেছেন। পূর্বেই বলেছি– না বলিনি? –ফাঁসুড়েটার আশু পঞ্চত্ব কামনা করে আপনি কালীঘাটে শির্নি মানত করেছেন।… কিন্তু তখন আপনি আর থাকতে পারবেন না। আপনার ভিতরে যে হুনুরি, যে আটিস্ট ঘুমিয়ে আছে সে মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠে চিৎকার করে বলবে, ওরে, ও আহাম্মুখ, কামিনী এভাবে পেতে?– তার পর ইস্পাইট অব ইওর সেল অর্থাৎ আপনার ভিতরকার হুনুরি আপনার ভিতরকার দুশমন মানুষটাকে পরোয়া না করে তাকে বাৎলে দেবে চারা পোঁতার কায়দাকেতা!!!
ভূমিকাটা মাত্রাধিক দীর্ঘ হয়ে গেল; তা হবেই। কথায় বলে
বাইরে যাদের লম্বা কোঁচা
ঘরেতে চড়ে না হাঁড়ি।
খেতে মাখতে তেল জোটে না।
কেরোসিনে বাগায় তেড়ি।
কালোবাজারিকে আমি আমার দুশমন বলে বিবেচনা করি। কালোবাজারি মাত্রই ক্যাপিটালিস্ট; অবশ্য সর্ব ক্যাপিটালিস্টুই কালোবাজারি নয়। কম্যুনিসট্রা আবার সর্ব ক্যাপিটালিসটকেই দুশমন সমঝেন। অর্থাৎ কম্যুনিস্টরা আমার দুশমনের দুশমন। ফারসিতেও বলে,
দোসৎনিস্ত (নাস্তি), দুশমন-ই দুশমন অসৎ (অস্তি)- দোস্ত নয়, কিন্তু আমার দুশমনের দুশমন!…