***
আমরা একবাক্যে বলি ভগবান আচার্য তুচ্চিকে জয়যুক্ত করুন।
আজাদ হিন্দ ফৌজের সমর-সঙ্গীত
কদম কদমা বঢ়ায়ে জা এগিয়ে যা এগিয়ে যা,
খুশিকে গীত্ব গায়ে জা খুশির গীত গাইতে যা।
ইয়েহ জিন্দগী হ্যায় কৌম কী দেশের তরে জীবন ধন
(তো) কৌম পৈ লুটায়ে জা।। দেশের লাগি করবি নে পণ?
তু শেরে হিন্দ আগে বঢ় শেরে হিন্দ এগিয়ে যা।
মরণেসে ফিরভি তু ন ডর সামনে মরণ ফিরে না চা।।
আসমান তক্ উঠায়ে শির আকাশ বিধে তুলবি শির
জোশে ওতন বঢ়ায়ে জা।। দেশের জোশ বাড়বে বীর।
তেরে হিম্মৎ বঢ়তী রহে বাড়ুক বাড়ুক সাহস তোর
খুদা তেরী সুনন্ত রহে খুদা তোরে দেবেন। জোর।
জো সামনে তেরে চঢ়ে সামনে বাধা পরোয়া না কর
(তো) খাকমে মিলায়ে জায়।। ধুলায় তারা পাবে যে গোর।।
চলো দিল্লী পুকারকে হুঙ্কারিয়া দিল্লী চল
কোমী নিসান সম্ভালকে কৌমী নিশান জাগিয়ে তোল
লাল কিল্লে গাঢ়কে লালকেল্লায় ঝাণ্ডা খোল
লহ রায়ে জা লহ রায়ে জা।। এগিয়ে যা ফুর্তিতে চল।।
কদম কদমা বঢ়ায়ে জা।। এগিয়ে যা, এগিয়ে যা।।
———–
শেরে হিন্দ = হিন্দুস্থানের ব্যাঘ্র, জোশ্ = শক্তি, কৌমী নিশান = জাতীয় পতাকা।
আমরা হাসি কেন?
প্রায় ত্রিশ বৎসর পূর্বে কবিগুরু বিশ্বভারতী সাহিত্য-সভায় এক খ্যাতনামা লেখকের সদ্যপ্রকাশিত একটা রচনা পাঠ করেন। রচনার আলোচ্য বিষয়বস্তু ছিল, ‘আমরা হাসি কেন’?
এতদিন বাদে আজ আর সব কথা মনে নেই, তবে এইটুকু স্পষ্ট স্মরণে পড়ছে যে, বের্গসন হাসির কারণ অনুসন্ধান করে যে সব তত্ত্বকথা আবিষ্কার করেছিলেন, প্ৰবন্ধটি মোটের উপর তারই উপর খাড়া ছিল।
প্ৰবন্ধ পাঠের পর রবীন্দ্ৰনাথ আপনি বক্তব্য বলেন।
সভায় উপস্থিত অন্যান্য গুণীরাও তখন নানারকম মতামত দেন এবং সবাই মিলে প্রাণপণ অনুসন্ধান করেন, ‘আমরা হাসি কেন?’ যতদূর মনে পড়ছে, শেষ পর্যন্ত সর্বজনগ্রাহ্য কোনো পাকাপাকি কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না।
পরদিন আচাৰ্য ক্ষিতিমোহন সেন সবার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘হাসির কারণ বের করতে গিয়ে সকলের চোখের জল বেরিয়ে গিয়েছিল।’ (ঠিক কি ভাষায় তিনি জিনিসটি রাসিয়ে বলেছিলেন আজ আর আমার সম্পূর্ণ মনে নেই-আশা করি আচার্য অপরাধ নেবেন না)।
***
দিল্লির ফরাসিস ক্লাবের (সের্কল ফ্রাসেঁ’ অর্থাৎ ‘ফরাসি-চক্ৰ’) এক বিশেষ সভায় মসিয়ে মার্তে নামক এক ফরাসি গুণী গত বুধবার দিন ঐ একই বিষয় নিয়ে অর্থাৎ ‘আমরা হাসি কেন?’ একখানি প্ৰমাণিক প্ৰবন্ধ পাঠ করেন।
ফরাসি রাজদূত এবং আরো মেলা ফরাসি-জাননেওয়ালা ফরাসি অ-ফরাসি ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা সভায় উপস্থিত ছিলেন। ফরাসি কামিনীগণ সর্বদাই অত্যুত্তম সুগন্ধ ব্যবহার করেন বলে ক্ষণে ক্ষণে মনে হচ্ছিল। আমি বুঝি প্যারিসে বসে আছি।
(এ কিছু নূতন কথা নয়—এক পূর্ববঙ্গবাসী শিয়ালদা স্টেশনে নেমেও গেয়েছিলেন,-
ল্যামা ইস্টিশানে গাড়ির থনে
মনে মনে আমেজ করি
আইলাম বুঝি আলী-মিয়ার রঙমহলে
ঢাহা জেলায় বশ্যাল ছাড়ি।)
শুধু প্যারিস নয়। আমার মনে হচ্ছিল, আমি যেন ‘কোতি’, ‘উবিগাঁর’ কুশবায়ের দোকানে বসে আছি।
ডাঃ কেসকর উত্তম ফরাসি বলতে পারেন। তিনি সভাপতির আসন গ্ৰহণ করে প্ৰাঞ্জল ফরাসিতে বক্তার পরিচয় করিয়ে দিলেন।
বের্গসন আর সেই চিরন্তন কারণানুসন্ধান, ‘হাসি কেন?? আমি তো নাকের জলে চোখের জলে হয়ে গেলুম-ত্রিশ বৎসর পূর্বে যে রকমধারা হয়েছিলুম-কিন্তু তবু কোনো হদিস মিলল না।
কিন্তু সেইটো আসল কথা নয়। আসল কথা হচ্ছে, এই দিল্লিশহর যে ক্ৰমে ক্ৰমে আন্তর্জাতিক মহানগরী হতে চলল। সেইটেই বড় আনন্দের কথা।
এতদিন ধরে আমরা ইয়োরোপকে চিনতে শিখলুম ইংরেজের মাধ্যমে এবং তাতে করে মাঝে মাঝে আমরা যে মারাত্মক মার খেয়েছি, তার হিসেবা-নিকেশ এখনো আরম্ভ হয়। নি। একটা সামান্য উদাহরণ নিন।
ইংরেজের আইরিশ সন্টু, মাটন রাস্ট আর প্লামপুডিং খেয়ে খেয়ে আমরা ভেবেছি ইয়োরোপবাসী মাত্রই বুঝি আহারাদি বাবতে একদম হটেনটট। তারপর যেদিন উত্তম ফরাসি রান্না খেলুম, তখন বুঝতে পারলুম, ক্রোয়াসী রুটি কি রকম উপাদেয়, একটি মামুলী অমলেট বানাতে ফরাসি কতই না কেরদানি-কেরামতি দেখাতে পারে, পাকা টমাটো, কাঁচা শসা আর সামান্য লেটিসের পাতাকে একটুখানি মালমশলা লাগিয়ে কী অপুর্বস্যালড় নির্মাণ করতে পারে। মাস্টার্ড, উস্টারসস আর বিস্তর গোলমরিচ না মাখিয়েও যে ইয়োরোপীয় রান্না গলাধঃকরণ করা যায়। সেইটি হৃদয়ঙ্গম হল ফরাসি রান্না খেয়ে।
তাই আমার আনন্দ যে, ধীরে ধীরে একদিন ফ্রান্সের সঙ্গে আমাদের মোলাকাত এদেশে বসেই হবে।
সোর্কল ফ্রাঁসে দিল্লিবাসীকে তার জন্য তৈরি করে আনছেন।
***
প্ৰবন্ধ পাঠের পর মসিয়ো মার্তে কয়েকটি রসালো গল্প বলেন। তিনি যে অনবদ্য ভাষায় এবং তার সঙ্গে অঙ্গভঙ্গী সঞ্চালনে গল্পগুলো পেশ করেছিলেন সে জিনিস তো আর কলি-কলমে ওতরাবে না-তাই গল্পটি পছন্দ না হলে মসিয়োর নিন্দা না করে দোষটা আমারই ঘাড়ে চাপাবেন।
এক রমণী গিয়েছেন এক সাকিয়াট্রিস্টের কাছে। তিনি ডাক্তারের ঘরে ঢুকতেই ডাক্তার তাঁকে কোনো কথা বলবার সুযোগ না দিয়েই আধঘণ্টা ধরে বক্তৃতা দিতে লাগলেন। অত কষ্টে সুযোগ পাওয়ার পর রমণী বললেন, ‘ডাক্তার, আমাকে অতশত বোঝাচ্ছেন কেন? আমি এসেছি আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে।’