মনে হচ্ছে আপনি তন্ত্রের কিছুই জানেন না। তন্ত্রে নিগূঢ়তম মন্ত্রের অর্থ শোধান না গুরুকে। যদি তিনি প্রকৃত শুরু হন তবে আপনার হাড় ক’খানা আর আস্ত থাকবে না। আর অত গভীরে যাবার কী প্রয়োজন? এই যে পৃথিবীর কোটি কোটি নর-নারী উপাসনা করে ভিন্ন। ভিন্ন ভাষায়, তার কটা ভাষা লোকে বোঝে? আপনি উত্তরে হয়তো বলবেন, আমরা রস নিয়ে বিচার করছি। তা হলে স্মরণে আনুন, সেই বুড়ি দাড়িওয়ালা কথকঠাকুরের কথকতা শুনে হাউহাউ করে কেঁদেছিল– কথকতার এক বর্ণ না বুঝেও। তার স্মরণে কী এসেছিল সেটা অবান্তর। তার কান্নাটা সত্য। তার রসবোধটা সত্য।
অলঙ্কার-শাস্ত্র অধ্যয়ন করে তলিয়ে দেখুন, অর্থ বোঝামাত্রই রসোৎপন্ন হয় না– অর্থ পেরিয়ে যে ব্যঞ্জনা যে ধ্বনি যে অনির্বচনীয়তার সৃষ্টি হয়, রস সেই গভীর গুহায়। উপনিষদে আছে সত্য (এবং সত্যই অনুভূতির ক্ষেত্রে রস–কারণ সৎ আনন্দ এবং চিৎ নিয়ে সচ্চিদানন্দ) আছেন সোনার পাত্রে লুকানো। সাধারণ জন সোনার পাত্র দেখেই মুগ্ধ, ভেতরে তাকিয়ে দেখে না। কাব্যে, সঙ্গীতে সর্বত্রই অর্থ জিনিসটা সুবর্ণ পাত্র, তাই দেখে লোক মুগ্ধ। রস কিন্তু ভেতরে। তার সঙ্গে পাত্রের কী সম্পর্ক? পাত্রস্থিত অমৃতরসের সঙ্গে যে ধাতু (অর্থ) দিয়ে পাত্র নির্মিত হয়েছে তার কী সম্পর্ক কিছুই না। তাই, এসব বুঝেই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল গেয়েছিলেন,
‘জননী বঙ্গভাষা, এ জীবনে চাহি না অর্থ!’