হিটলার বিড়বিড় করলেন, “শোন্ গুট শোন্ গুট’–অনেকটা যেন ঠিক আছে, ঠিক আছে, মেলা বকো না।
টি সেট চাওয়া হল। এল। গ্যোবলস্ ন্যাটার সেট চাইলেন।
ছোকরা প্রথমটায় হকচকিয়ে গেল।
পরমুহূর্তেই সম্বিত ফিরে একগাল হেসে বললে, ‘এখুনি নিয়ে আসছি, স্যার! বলে যে সেট ট্রের উপর সাজিয়ে রেখে দেখিয়েছিল সেইটে তুলে নিয়ে গুদোমঘরে অদৃশ্য হল। দু-মিনিট পরেই আরেকটা আরও বাড়িয়া ট্রের উপর সাজিয়ে নিয়ে এল ন্যাটাদের সেট।
তালেবর ছোকরা করেছে কী, এবার ওই আগেকার সেটই উল্টো করে সাজিয়েছে অর্থাৎ টি-কাপগুলোর আঙটিগুলো রয়েছে খদ্দেরের-বাঁ দিকে; তার মানে, খদ্দের বাঁ-হাত বাড়ালে আঙুল ঠিক আঙটার যথাস্থানে পড়বে।
গ্যোবলস্ বাক্যব্যয় না করে যথামূল্যে সেট কিনে নিলেন।
বেরিয়ে এসে বললেন, ‘দেখলেন ইহুদিটার চালাকিটা?’
হিটলার অতিশয় সরল দরদী কণ্ঠে বললেন, ‘চালাকিটা আবার কোথায়? বেচারি আর্যের ন্যাটা সেট ছিল না স্টকে তো সে আর করবে কী?
***
এবারে সিরিয়স কথা– ব্যাটারা বলে, তারা নাকি আর্যোত্তম। আরে মোলো, আর্যোত্তম যদি হবিই, তবে সর্ব-আর্যের– তা সে গ্রিকই হোক, লাতিনই হোক কিংবা তাদের বহু পূর্বের মিটানির হিটাইটই হোক– সর্বপ্রাচীন সংহিতা চতুর্বেদ আছে ভারতীয় আর্যের শ্রুতিতে ভিন্ন অন্য কোন আর্য গোসাঁইয়ের খট্টাঙ্গ প্রত্যঙ্গে?
কিন্তু, আমরা তো দিয়েছি আশ্রয়– প্রথম ইহুদিরা যখন জীবনমৃতাবস্থায় নিমজ্জমান তরণীতে করে বোম্বাই উপকূলে পৌঁছয়। গ্যাস-চেম্বারের কথা এই দু-বা আড়াই হাজার বছর ধরে আমাদের মাথায়ই খেলল না! তবে, হ্যাঁ, এদানির কেউ কেউ বলেন, আমরা যে অস্মদ্দেশে ইজরায়েল প্রেসিডেন্টের শুভানুগমনোপলক্ষে উদ্বাহু হয়ে ‘লৃত্ত’ করিনি সেটা গ্যাস চেম্বারে পোরার চেয়েও সৎ গুনাহ্! তোবা! তোবা!
৩০/৪/৬৬
———-
১. অক্সফোর্ডের ইতিহাস-অধ্যাপক ট্রেভর-রোপারের মতো জর্মনির জাতশত্রু শতকে গোটেক; তদুপরি তিনি একটি আস্ত স্নবশ্য স্নব। তিনি বলেন “and it was the Latin luidity of his Goebbels’) mind, the un-German suppleness of his argument which made him so much more successful as a preacher than the forthblowing nationalists of the South.”
অবশ্য অধ্যাপককে বোঝা ভার। তিনি শতাধিক বার বলেছেন, জর্মনরা অতিশয় অগা জাত। উত্তরে বলি, অগারা পরিষ্কার যুক্তি বোঝে না; রহস্যের সন্ধানে কোটে মাথা। তাই জর্মন দার্শনিকদের ভিতর লাতিন ধরনের স্বচ্ছ লেখক শোপেনহাওয়ার ভোতা লেখক হেগে-এর তুলনায় অবহেলিত।
২. নূরনবেরগের মোকদ্দমায় যখন আসামি নাৎসিদের বিরুদ্ধে বলা হল যে তাঁদের ফ্যুরার গুরুই ইহুদিদের ausrotten ‘সবংশে নির্বংশ করবেন বলে একাধিকবার সর্বজন সমক্ষে কবুল করেছিলেন, তখন আসামি পক্ষ বলে, “ওসব কথার কথা। কেউ যখন বলে “তোমার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাব” (বাংলায় বলতে গেলে এই অনুবাদই জুৎসই) তখন অন্য পক্ষ সেটা সিরিয়াসলি শব্দার্থ নিয়ে বিশ্বের তাবৎ ডুগডুগি বানাবার যন্ত্রপাতি বিনষ্ট করতে মাথায় গামছা বাঁধে না।’
৩. সবিস্তর কাহিনী পাঠক পাবেন, অধীনের ‘দু-হারা’ পুস্তকে, ‘হিটলারের শেষ দশ দিন’ প্রবন্ধে।
৪. এর অন্যতম বড়কর্তা হ্যাঁস নুরনবের্গ মোকদ্দমায় সাক্ষী দেন, এবং পরে এঁর ফাঁসি হয়। দু-জন হাড়ে-পাকা মনস্তত্ত্ববিদ মার্কিন চিকিৎসক এঁকে আগা-পাশতলা পুনঃপুন পরীক্ষা করেও এর ভিতর কোনো কিছু অ্যানরমাল পাননি। ইনি বলেন, হাজার খানেক মানুষ গ্যাস দিয়ে মারতে আমার ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় লাগত, কিন্তু আসল মুশকিল ছিল এদের পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করা– দিনের পর দিন নাগাড়ে চব্বিশ ঘন্টা চুল্লিগুলো চালু রেখেও কাজ খতম হত না। গ্যাস চেম্বারে ইহুদিদের চাবুক মেরে মেরে ঢোকানো থেকে, চুল্লি চব্বিশ ঘণ্টা চালু রেখে তাতে লাশ পুড়িয়ে ছাই করে জলে ভাসানো পর্যন্ত সব কাজ করত কোনও কোনও স্থলে ইহুদিরাই। তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে এই প্রলোভনে। পরে অবশ্য তাদেরও ঘাড়ে গুলি করে করে মারা হত, পিছন থেকে, অতর্কিতে।
চোখের জলের লেখক
ইংরেজির শব্দভাণ্ডার অতুলনীয়। তন্মধ্যে একটি শব্দ ‘গ্যাগা’– এর সঠিক উচ্চারণ না জানা থাকলেও ক্ষতি নেই। ‘গ্যাগা’ শব্দের অর্থ, লোকটার ব্রেন বকসে যা আছে–যদি কিছু আদৌ থাকে– সেটা এমনই হযবরল গোবলেট পাকানোর জগা-খিচুড়ি যে কেউ কিছু বললে তার গলা দিয়ে যে ধ্বনি বেরোয় সেটা ‘গাগা,’ ‘গ্যাগো’, ‘গ্যাগ্যা’ গোঙরানো ঢপের– কাজেই শব্দটির যে-কোনও উচ্চারণই মঞ্জুর। অর্থাৎ গাগার সঙ্গে ইমবেসাইল, ইডিয়ট, (‘পন্টক’ বললুম না, কারণ সুনীতিবাবু শব্দটির কপিরাইট মেরে দিয়ে সেটার পাইরেটিং সংস্করণ বের করার দরুন পাড়ার ছোঁড়ারা আমাকে ‘কণ্টক’ থেকে ‘কাঁটা’, ‘পন্টক’ থেকে ‘পাঁঠা’ বের না করে আড়াল থেকে আমাকে ‘পনঠক’ বলতে আরম্ভ করেছে), গোবর-গণেশ যে-কারও সঙ্গে তুলনা করলে শেষোক্তদের অপমান করা হয়।
সেই গ্যাগাদের গ্যাগা– গ্যাগায়েস্টের মতো আমি শুধু অর্থহীন কতকগুলো ধ্বনি বের করলুম যখন আমার এক নিত্যালাপী গুণী বললেন, জনৈক অধ্যাপক নাকি প্রকাশ্য সভাস্থলে রায় প্রকাশ করেন, স্বৰ্গত, প্রাতঃস্মরণীয় শিল্পীরাজ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নাকি থাডোকেলাস ‘চোখের জলের লেখক’! আচ্ছা, পাঠক তুমিও কও, সেস্থলে তুমি কী করতে! শরশ্চন্দ্র কাঁদিয়েছেন! শরৎচন্দ্র হাসাননি! সামাজিক নিষ্ঠুরতর কাঁটাবনের উপর দিয়ে আমাদের কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যাননি!–-কাঁদাবার জন্য নয়, যন্ত্রণায় চিৎকার করার জন্য! ব্যঙ্গ, শ্লেষ, বিদ্রূপ-বাণে আমাদের জর্জরিত করেননি?