নারী হচ্ছে অমৃতভাষিণী গোপন শত্র। সে শিকারীদের ফাঁদের থেকে বিপজ্জনক ফাঁদ, সে শয়তানের ফাঁদ। পুরুষ যখন নারীদের দেখে বা তাদেব কথা শোনে, তখন পুরুষ ধরা পড়ে তাদেব কামজালে ; যেমন সন্ত বার্নার্ড বলেন : তাদের মুখ প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখার মতো, তাদের স্বর সৰ্পের শোঁ শোঁ ধ্বনির মতো; তাছাড়াও তারা দুষ্ট সম্মোহন ছড়ায় অসংখ্য পুরুষ ও প্রাণীর ওপর। তাদেব মন বিদ্বেষের রাষ্ট্র। তাদের হাত হচ্ছে বেড়ি; তারা যখন কারো গায়ে হাত রাখে, তখন তারা শয়তানের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত করে নিজেদের পরিকল্পনা।
ভারতীয় ত্রিকালদর্শীরা নারীর দানবীরূপ আঁকায় ও ছন্দোবদ্ধ ধিক্কার রচনায় পরিচয় দিয়েছেন লোকোত্তর প্রতিভার। ওই ঋষিরা লকলকে কামুক ও নারীবিদ্বেষী। নারী দেখলেই লক্ষ বছরেব ধ্যান আবর্জনার মতো ছুঁড়ে ফেলে তাঁরা অসুস্থের মতো উত্তেজিত হন, প্রকাশ্যে বা কুয়াশা ছড়িয়ে ধর্ষণ-রমণ করেন, যোনি না পেলে যেখানে সেখানে বীর্যপাত ক’রে শান্তি পান; এবং রচনা করেন শ্লোকের পর শ্লোক নারীনিন্দা। তাঁদের শ্ৰেষ্ঠ ধ্যান হচ্ছে কামধ্যান; আর তাঁরা প্ৰায় সবাই ছিলেন অকালস্খলনগ্ৰস্ত, যার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁদের সামান্য উত্তেজনায় রতিস্খলনের মধ্যে। তাঁদের চোখে নারী কামদানবী। নারীনিন্দায় বৌদ্ধহিন্দু সবাই সমান। জাতক, পঞ্চতন্ত্র, কথাসরিৎসাগর, রামায়ণ, মহাভারত, বিভিন্ন পুরাণ, মনুসংহিতা ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ভরে আছে নারীর দানবীরূপে ও নারীবিদ্বেষে; মুক্তকণ্ঠ ঋষিদের রচিত অশ্লীল উপাখ্যান ও শ্লোকে। জাতকের গল্পে ফিরে ফিরে আসে কামচণ্ডালী নারীরা, যারা কাম ছাড়া কোনো নীতি জানে না। জাতকের একটি গল্পে আছে নারীরা বুড়ী জরতী হয়ে গেলেও থেকে যায় কামদাসী দানবী। বোধিসত্ত্বের মায়ের বয়স একশো বিশ, যাকে বোধিসত্ত্ব নিজে সেবাযত্ন করে। ওই মা’ও কামার্তে হয়ে ওঠে এক যুবকের জন্যে এবং উদ্যত হয় নিজের পুত্রকে হত্যা করতে। আরেকটি গল্পে রাজা শত্ৰু দমনের জন্যে রাজধানী ছেড়ে দূরে যায়; এবং যাওয়ার পথেপথে এক-এক ক’রে বত্ৰিশজন দূত পাঠায় রানীর কুশল জানার জন্যে। রানী বত্ৰিশজনের সাথেই লিপ্ত হয় কামে। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে রাজা রানীর কুশল জানার জন্যে পাঠায় আবার বত্ৰিশজন দূত; রানী তাদের সাথেও কামে জড়িত হয়। এমনই দানবিক কাম ক্ষুধা নারীদের! নারীদের ক্ষুধার নানা উপাখ্যান রয়েছে পঞ্চতন্ত্র ও কথাসরিৎসাগর-এ। আর্য ঋষিদের চোখে নারী হচ্ছে সমস্ত অশুভ ও দোষের সমষ্টি। নারীকে দেখেছেন তাঁরা একটি বিশাল অতৃপ্ত যোনিরূপে; নারী হচ্ছে আপাদমস্তক যোনি, যে কাম ছাড়া আর কোনো সুখ বা নীতি জানে না। মনু [মনুসংহিতা, ৯:১৪; দ্র মুরারিমোহন (১৯৮৫)] বলেছেন :
নৈতা রূপং পরীক্ষন্তে নাসাং বয়সি সংস্থিতিঃ। সুরূপং বা বিরূপং বা পুমানিতেীব ভুঞ্জতে।
তারা রূপ বিচার করে না, বয়সও বিচার কবে না; সুরূপ বা কুরূপ যাই হোক, পুরুষ পেলেই তারা সম্ভোগের জন্যে অধীর হয়ে ওঠে।
পরের শ্লোকেই [৯:১৫) এ-মহর্ষি বলেছেন :
পুরুষ দেখামাত্রই তারা ভোগে মেতে ওঠে ব’লে তারা চঞ্চলচিত্ত ও স্নেহশূন্য; তাই সুরক্ষিত বাখ্যা হ’লেও তারা স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়।
মহাভারত-এ [অনুশাসনপর্ব : ৩৮] বলা হয়েছে নারী জন্মদুশ্চরিত্র : ‘নারীরা শুধু পরপুরুষের অভাব ও পরিজনের ভয়ে ভর্তার বশীভূত হয়ে থাকে।‘ তার কামক্ষুধার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় আর সব কিছু। মহাভারতের [অনুশাসনপৰ্ব : ১৯]। ঋষি বলেছেন :
স্ত্রীলোক স্বভাবতই রতিপ্রিয়। পুরুষসংসর্গ তাদের যেমন প্রীতিকর, অগ্নি বরুণ প্রভৃতি দেবতারাও তাদের কাছে ততো প্রীতিকর নয় ; সমস্ত স্ত্রীলোকোব মাঝে পতিব্ৰতা চোখে পড়ে মাত্র এক-আধটি। যখন তাদের কামপ্রবৃত্তি প্রবুদ্ধ হয়, তখন তারা পিতা, মাতা, ভ্রাতা, কর্তা, পুত্র ও দেবরেব কিছুমাত্র অপেক্ষা করে না। নিজেব অভিলাষ পূর্ণ করতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকে।
বলা হয়েছে, ‘তারা অনায়াসে লজ্জা ছেড়ে পরপুরুষদের সাথে সংসর্গ করে। পুরুষ পরস্ত্রীসম্ভোগে অভিলাষী হয়ে তার কাছে গিয়ে অল্প চাটুবাক্য প্রয়োগ করলেই সে তখনি তার প্রতি অনুরক্ত হয়। [অনুশাসনপর্ব : ৩৮]। দেবীভাগবত-এ [ ৯:১৮] বলা হয়েছে :
স্ত্রীজাতি স্বভাবত নিরন্তর অভিলাষিণী-কামচারিণী, কামের আধার স্বরূপা ও মনোহারিণী হয়ে থাকে। তারা অন্তরের কামলালসা ছলক্রমে গোপন করে। নারী প্রকাশ্যে অতি লজ্জাশীলা কিন্তু গোপনে কান্তকে পেলে যেনো তাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়। রমণী কোপশীলা, কলহের অঙ্কুর ও মৈথুনাভাবে সর্বদা মানিনী, বহু সম্ভোগে ভীতা ও অল্পসম্ভোগে অত্যন্ত দুঃখিত হয়। স্ত্রীজাতি সুমিষ্টান্ন ও সুশীতল জলেব চেয়েও সুন্দর সুরসিক গুণবান ও মনোহর যুবপুরুষকে সর্বদা মনেমনে কামনা করে। তারা রতিদাতা পুরুষকে নিজের পুত্রের থেকেও বেশি স্নেহ করে এবং সম্ভোগপারদররশী পুরুষই তাদের প্ৰাণাধিক প্ৰিয়তম।
এসব শ্লোক থেকে ধারণা করতে পারি। এ-শ্লোককারেরা কী ভয়াবহ কামদানবীরূপে দেখতেন ও কতোটা অবিশ্বাস করতেন নারীকে। তাই ঋষিগুরুরা কোথাও গেলে উদ্বিগ্ন থাকতেন ভাৰ্যাদের রন্ধ সম্পর্কে, প্রহরী হিসেবে রেখে যেতেন শিষ্যদের; এবং শিষ্যদের সম্পর্কেও নিশ্চিতবোধ করতেন না। তাই বিধান দেন যে পঞ্চমহাপাতকের একটি হচ্ছে গুরুপত্নীতে উপগমন। ঋষি [দেবীভাগবত, ৯:১] আরো বলেছেন :