১৯২১ ভারতীয় নারীদের ভোটাধিকার লাভ। প্রথমে মাদ্রজ প্রদেশে, ১৯২১-এ; ১৯২৯-এর মধ্যে সব প্রদেশে। বাঙলায় ১৯২৫-এ। তারা ভোটাধিকার পান, তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার পান আরো পরে।
১৯২৭ প্রথম বাঙালি মুসলমান এম এ : ফজিলতুন্নেসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে প্রথম শ্রেণীতে প্ৰথম।
১৯২৯ ভার্জিনিয়া উল্ফ্-এর এ রুম অফ ওয়ান্স্ অঔন। তাঁর এ-বইয়ের বিষয় নারী ও কথাসাহিত্য, তিনি এ-বক্তৃতাগ্রন্থে একটিই প্রশ্ন করেন–নারী কেনো সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারে নি? তাঁর উত্তর হচ্ছে–দারিদ্র্য। নারীবাদী সাহিত্য সমালোচনার সূত্রপাত।
১৯৪৯ আধুনিক আমূল্যবাদী নারীবাদের মহাগ্রন্থ সিমোন দ্য বোভোয়ার-এর দ্বিতীয় লিঙ্গ। বোভোয়ার উগ্র বাঁজালো নন, তিনি গভীর মননশীল এবং আধুনিক নারীবাদের শ্রেষ্ঠ নারী; তাঁর প্রজ্ঞা অতুলনীয়, লক্ষ্য অবিচল। তাঁর বইয়ের দর্শন সার্ত্রীয় অস্তিত্ববাদ। এ-বইয়ে তাঁর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে যে ইতিহাস ভ’রে নারী পরিণত হয়েছে। পুরুষের সামগ্ৰীতে; নারীকে তৈরি করা হয়ছে পুরুষের ‘অপর’রূপে, অস্বীকার করা হয়ছে তার নিজস্বতা, এবং নিজ দায়িত্বভারের অধিকার। বার বার তিনি, অস্তিত্ববাদী পরিভাষায়, বলেছেন, পিতৃতান্ত্রিক ভাবাদর্শ নারীকে দেখে সীমাবদ্ধ’ আর পুরুষকে ‘অসীম’ বা ‘সীমাতিক্রান্ত রূপে। এটি পরবতী নারীবাদী সমস্ত চিন্তা ও গ্রন্থের জননী। বইটি লেখাব সময় তার বিশ্বাস ছিলো সমাজতন্ত্রের বিকাশই সমাধান করবে: নারীর সব সমস্যার, তাই তিনি নারীবাদী নন, তিনি সমাজতান্ত্রিক। ক্রমশ তার বিশ্বাস ভেঙে যায়, ১৯৭২-এ তিনি যোগ দেন নারীবাদী আন্দোলনে, এবং প্ৰথমবারের মতো নিজেকে ঘোষণা করেন নারীবাদী বলে। তিনি বলেন। [দ্র মোই (১৯৮৫, ৯১-৯২)] :
‘১৯৭০-এ এমএলএফ নারীমুক্তি আন্দোলন স্থাপিত হওয়ার আগে ফ্রান্সে যে-সব নারীসংঘ ছিলো, সেগুলো ছিলো সাধারণত সংস্কার ও আইনবাদী। তাদের সাথে জড়িত হওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার হয় নি! তুলনায় নবনারীবাদ আমূল্যবাদী।…দ্বিতীয় লিঙ্গ-এর শেষভাগে বলেছিলাম। আমি নারীবাদী নই, কেননা আমি বিশ্বাস কবিতাম যে সমাজতান্ত্রিক বিকাশের সাথে আপনাআপনি সমাধান হয়ে যাবে নারীয় সমস্যা। নারীবাদী বলতে আমি বোঝাতাম শ্রেণীসংগ্রামনিরপেক্ষভাবে বিশেষ নারীসমস্যা নিয়ে লড়াইকে। আমি আজো একই ধারণা পোষণ কবি! আমাব সংজ্ঞায় নারীবাদীরা এমন নারী-বা এমন পুরুষও-যারা, সংগ্রাম কবছেন নারীর অবস্থা বদলেব জন্যে, সাথে থাকছে শ্রেণীসংগ্রাম; এবং তারা শ্রেণীসংগ্রামনিবাপেক্ষভাবেও, সমস্ত সমাজবদলেব ওপর নির্ভব না করে, নারীর অবস্থা বদলের জন্যে সংগ্রাম করতে পারেন। আমি বলবো, এ-অর্থেই আমি আজ নারীবাদী, কেননা আমি বুঝতে পেরেছি যে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার আগে নারীর পরিস্থিতির জন্যে আমাদেবী লড়াই করতে হবে, এখানে এবং এখনই।
১৯৫৯ দ্বিশতজন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, প্রায় দেড় শো বছর স্বেচ্ছায় ভুলে থাকার পর, সেইন্ট প্যাংক্রাস পুরোনো গির্জায় মেরি ওলস্টোনক্র্যাফটের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য। অৰ্পণ করে ফসেট সমিতি।
১৯৬০ নারী সরকার প্রধানদের আবির্ভাব : শ্ৰীমাভো বন্দরনায়েক (শ্ৰীলঙ্কা, প্রধান মন্ত্রী, ১৯৬০), ইন্দিরা গান্ধি (ভারত, প্রধান মন্ত্রী, ১৯৬৬, ১৯৬৭, ১৯৭১, ১৯৮১), গোল্ড মেয়ার (ইসরায়েল, প্রধান মন্ত্রী, ১৯৬৯), ইসাবেলা পেরন (আর্জেন্টিনা, রাষ্ট্রপতি, ১৯৭৪), মাৰ্গারেট থ্যাচার (যুক্তরাজ্য, প্রধান মন্ত্রী, ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৮৭), কোরাজান অ্যাকিনো (রাষ্ট্রপতি, ফিলিপাইনস, ১৯৮৬), বেনজিব ভুট্টো (পাকিস্তান, প্রধান মন্ত্রী, ১৯৮৮), খালেদা জিয়া (বাঙলাদেশ, প্ৰধান মন্ত্রী, ১৯৯১), শেখ হাসিনা (বাঙলাদেশ, প্রধান মন্ত্রী, ১৯৯৬)। তবে এঁরা নারীবাদী নন, পুরুষতন্ত্রেরই প্রতিনিধি; অধিকাংশই নারীর জন্যে ক্ষতিকর।
১৯৬৩ বেটি ফ্রাইডান-এর দি ফেমিনিন মিষ্টিক। মার্কিন নরনারীবাদের প্রথম বই এটি, তিনি দেখান কীভাবে বিলাসে নষ্ট হচ্ছে মার্কিন গৃহিণীরা।
১৯৬৬ ফ্রাইডানের ‘ন্যাশনাল অরগানাইজেশন অফ উইমেন’ (নাউ)।
১৯৬৮ মেরি এলমানের নারীসম্পর্কে ভাবনা : নারীবাদী সাহিত্য সমালোচনা।
১৯৬৯ কেইট মিলেট-এর লৈঙ্গিক রাজনীতি, অ্যান কোড্ট্-এর ‘যোনীয় পুলকের উপকথা’। কেইট মিলেটই প্রথম নারীপুরুষের সম্পর্ককে নির্দেশ করেন রাজনীতিক সম্পর্ক ব’লে, যার নাম দেন। তিনি লৈঙ্গিক রাজনীতি’। এটি তাঁর পিএইচডি অভিসন্দৰ্ভ, একই সাথে মননশীল ও প্রচণ্ড। দ্বিতীয় লিঙ্গ-এর পর সবচেয়ে প্রভাবশালী ও প্রেরণাদায়ক গ্ৰন্থ। নারীবাদী সাহিত্য সমালোচনার জন্যেও উল্লেখযোগ্য : লরেন্স, মিলার, মেইলার, জাঁ জোনের সাহিত্য আলোচনা করে দেখান তাদের রুগ্ন পুরুষতান্ত্রিকতা।
১৯৭০ জারমেইন গ্রিয়ার-এর দি ফিমেল ইউনাক শুলামিথ ফায়ারস্টোন-এর লিঙ্গ দ্বাদ্রিকতা : নারীবাদী বিপ্লবের পক্ষে।
১৯৭২ সুজান কোপেলম্যান কোরানিলন সম্পাদিত নারীবাদী সমালোচনাসংগ্ৰহ কথাসাহিত্যে নারীভাবমূর্তি। তারা দেখান, কথাসাহিত্যে চিত্রিত হয়েছে ‘অসত্য’ নারীচরিত্র; এ-কাজে পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছেন নারী লেখকেরা, তাঁরা পুরুষদের থেকেও নিকৃষ্ট; বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তাঁরা নিজ লিঙ্গের সাথে।