১৮৪৯ বাঙলায় প্রাতিষ্ঠানিক নারীশিক্ষার সূচনা। মে মাসে জে ই ডি বেথুন কলকাতায় স্থাপন করেন ভিক্টোরিয়া গার্লস স্কুল, পরে এটি পরিচিত হয় বেথুন স্কুল নামে। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত লেখেন :
আগে মেয়েগুলো ছিল ভাল,
ব্ৰতধর্ম কর্তো সবে।
একা বেথুন এসে শেষ করেছে,
আর কি তাদের তেমন পাবে৷
যত ছুঁড়িগুলো তুড়ি মেরে,
কেতাব হাতে নিচ্ছে যবে।
তখন ‘এ বি’ শিখে, বিবি সেজে,
বিলাতী বোল কবেই কাবে।।
লেখাপড়া শিখে মেয়েরা ‘বিন্দু বিন্দু ব্ৰান্ডি খাবে’ বলেও আকর্ষণীয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ঈশ্বর গুপ্ত। শিক্ষিত মেয়েদের নিয়ে কবিতায় কৌতুক করলেও ঈশ্বর গুপ্ত নারীশিক্ষার বিরোধী ছিলেন না, তার সম্বাদপ্রভাকর-এ তিনি নারীশিক্ষার পক্ষে লিখতেন। সারা পৃথিবীর পুরুষদের মতো বাঙালি পুরুষেরাও যখন মেনে নেয় নারীশিক্ষা, স্ত্রীদের উৎসাহ দেয় শিক্ষায়, তখন তারা নারীশিক্ষাকে পণ্ড ক’রে দেয়ার জন্যে চমৎকার যাদু সৃষ্টি করে, নারীশিক্ষার প্রধান লক্ষ্য ক’রে তোলে ‘উৎকৃষ্ট গৃহিণী ও মাতা’ উৎপাদন। তারা স্টুয়ার্ট মিলকে ছেড়ে গ্রহণ করে রাসকিনের ক্ষতিকর আদর্শ: ‘ভদ্রমহিলা’ উৎপাদন ক’রে করে নষ্ট ক’রে দেয় নারীশিক্ষাকে।
১৮৫৫ ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্ৰস্তাব (প্রথম পুস্তক) ও বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (দ্বিতীয় পুস্তক)। রামমোহন নারীদের দিতে চেয়েছিলেন প্ৰাণ, বিদ্যাসাগর দিতে চান জীবন।
১৮৫৬ ২৬ জুলাই বিধবাবিবাহ আইন প্রবর্তন।
১৮৬৬ মারিয়া দোসরাইসমে প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম ফরাশি নারী-অধিকার সংঘ।
১৮৬৮ সুসান বি অ্যান্থনি ও এলিজাবেথ স্ট্যান্টন-এর নারীবাদী সাময়িকী দি রেভোলিউশন f এর মূলমন্ত্র ছিলো : ‘পুরুষ, তার অধিকার এবং এর বেশি নয়; নারী, তার অধিকার এবং এর কম নয়।’ ভোটাধিকার ছাড়া এতে আলোচিত হতো বিয়ে, আইন, প্রথাগত ধর্ম প্রভৃতি।
১৮৬৯ জন স্টুয়ার্ট মিল-এর দি সাবজেকশন অফ উইমেন।
১৮৬১তে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ দেখা দিলে নারীবাদীবা নিজেদের আন্দোলন স্থগিত রাখেন, কিন্তু দেখেন যুদ্ধের পর নিগ্রোদের অধিকার মানা হ’লেও নারীদের অধিকার মানা হয় না। তাদের চোখে নারী নিগ্রোর থেকেও নিকৃষ্ট।
যুদ্ধের পর তারা ভোটাধিকারকেই প্রধান লক্ষ্য বলে গণ্য করেন; কিন্তু ১৮৬৯-এ নারীমুক্তি আন্দোলন আদর্শ ও কৌশলগত কারণে বিভক্ত হয় দুটি শিবিরে। মে মাসে সুসান বি অ্যান্থনি ও এলিজাবেথ কেডি স্ট্যান্টন গঠন করেন ‘জাতীয় নারী ভোটাধিকার সংঘ’; নভেম্বরে লুসি স্টোন গঠন করেন ‘মার্কিন নারী ভোটাধিকার সংঘ’। মার্কিন সংঘটি শুধু ভোটাধিকারেই নিজেদের সীমিত রাখে; জাতীয় সংঘটি ভোটাধিকারের সাথে অন্যান্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও নিজেদের ব্যাপৃত রাখে।
১৮৭১ বিদ্যাসাগরের বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার।
১৯৭৩ বিদ্যাসাগবের বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার–দ্বিতীয় পুস্তক।
১৯৭৯ হেনরিক ইবসেন-এর পুতুলের খেলাঘর। নায়িকা নোরা হয়ে ওঠে নারীবাদের কণ্ঠস্বর।
জর্মন ভাষায় আউগুষ্ট বেবেল-এর নারী ও সমাজতন্ত্র। প্রথম সংস্করণ গোপনে প্ৰকাশিত। ১৮৮৩তে সংশোধিত সংস্করণ : নারী : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নামে। জর্মন নারীবাদী ক্লারা জোঁটকিন এ-বই সম্পর্কে বলেছেন : ‘ডিনামাইট যেমন চুরমার করে দেয় কঠিনতম আদিম পাথর, তেমনই এ-বইয়ের বক্তব্য ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে গভীরতম কুসংস্কারকে।‘
১৮৮৩ প্রথম বি এ : কাদম্বিনী বসু [ব্ৰাহ্ম]।
১৮৮৪ প্রথম এম এ : চন্দ্ৰমুখী বসু। [খ্রিস্টান।]
ফ্রেডরিক এঙ্গেলস-এর পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি। তিনি দেখান পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ও ব্যক্তি মালিকানাই নারীর বিপর্যয়ের কারণ।
১৮৮৯ পুনায় মহারাষ্ট্র নারীবাদী পণ্ডিত রমাবাইয়ের নারীমুক্তি সম্বন্ধে বক্তৃতা। পুরুষদের হামলায় বক্তৃতা স্থগিত; রবীন্দ্রনাথ, যদিও নারীমুক্তিবিরোধী, লেখেন ‘রমাবাইয়ের বক্তৃতা উপলক্ষে’ (রর : ১২, ৪৫০-৪৫৫)।
১৮৯০ প্রথম এম বি; বিধুমুখী বসু। [খ্রিষ্টান]।
দুটি সংঘ মিলে গঠিত হয় ‘জাতীয় মার্কিন নারী ভোটাধিকার সংঘ’। প্রথম সভাপতি স্ট্যান্টন। কৃষ্ণভাবিনী দাসের প্রবন্ধ শিক্ষিতা নারী’। তিনি পেশ করেন একটি সরল ছোটো বক্তব্য :
পরোপকার ও অন্যের জন্য জীবন ধারণ করা যেমন নারীর উদ্দেশ্য, রমণী তেমনি নিজের নিমিত্তেও বাঁচিয়া থাকে।
১৮৯৫ স্টান্টন ও আরো তেইশজন নারীর ওমানস্ বাইবেল : নারীর বাইবেল।
স্ট্যান্টন ভোটাধিকারকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন, তবে তাঁর বিশ্বাস ছিলো গির্জা আর ধর্মই নারীর প্রধান শত্ৰু, কেননা নারীবাদবিরোধীদের প্রধান যুক্তিই ছিলো : নারী-অধীনতা ঈশ্বরের বিধান। দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৯৮। এতে আক্রমণ করা হয় বাইবেলে নারীর ভূমিকা ও ভাবমূর্তিকে। তাঁরা বলেন, ‘দীর্ঘকাল ধ’রে আমরা বাইবেলকে অন্ধভক্তির বস্তু ক’রে তুলেছি। এখন সময় এসেছে এটিকে অন্যান্য বইয়ের মতোই পড়ার, নিতে হবে এর ভালোটা বাদ দিতে হবে খারাপটা।’ স্ট্যান্টন ‘পাঁজরের হাড়ে’র উপাখ্যানকে ‘তুচ্ছ শল্যচিকিৎসা’ ব’লে দেখান যে সম্পূর্ণ বাইবেলই হাওয়া বা নারীর পাপের ওপর ভিত্তি ক’রে তৈরি। তিনি বলেন :
‘সাপটিকে, ফলগাছটিকে এবং নারীটিকে নিয়ে নাও, তখন আর কোনো পতন, রাগী বিচারক, নরক, চিরকালীন শাস্তি কিছুই থাকে না?–তাই কোনো ত্ৰাতাবও দবকার পড়ে না } এভাবে খসে পড়ে সমগ্র খ্রিষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের তলদেশ। এ-কারণেই সমস্ত বাইবেল গবেষণা ও উচ্চতর সমালোচনায় পণ্ডিতেবা কখনো নারীর অবস্থানটিকে স্পর্শ করেন না।‘