১৮২৫ সমাজতান্ত্রিক দার্শনিক উইলিয়াম টমসন-এর মানবজাতির অর্ধেক, নারীদের, দাবি মানবজাতির অন্য অর্ধেক, পুরুষদের, দুরহঙ্কারের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, নারীদের পরিণত করা হয়েছে ‘অনিচ্ছুক প্রসব যন্ত্র ও গৃহদাসীতে’, ‘গৃহ হচ্ছে গৃহিণীর কারাগার’। তিনি ডাক দেন : ‘ইংল্যান্ডের নারীরা, জাগো! নারী, যে-দেশেই তুমি অধীনস্থ, জাগো। যখন তোমার সম্পূর্ণ মন ও শরীরের চর্চা ও বিকাশ ঘটবে, তখন তোমার জন্যে যে-সুখ অপেক্ষা ক’রে আছে, তার জন্যে জাগো।’ এর বিনিময়ে তিনি পান অবজ্ঞা ও উপহাস।
১৮২৯ সতীদাহ নিষিদ্ধ : ৪ ডিসেম্বরে লর্ড বেন্টিংকের সতীদাহ নিষেধ বিধিতে স্বাক্ষর।
১৮৩১ বিদ্যাদর্শন-এ নামহীন পতিতার পত্র; কৌলীন্য প্রথার মুখোশ-উন্মোচন।
১৮৩৭ আমেরিকায় প্রথম দাসপ্রথাবিরোধী নারীসম্মেলন। দাসপ্রথারহিতকরণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মার্কিন নারীরা প্রবেশ করেন রাজনীতিতে, গড়ে তোলেন সংঘ, জনসভায় ভাষণের সুযোগ পান, এবং বিকাশ ঘটান সমাজে তাদের স্থান ও অধিকার সম্বন্ধে মতাদর্শ। উনিশ শতকের প্রথম তিন দশক ধ’রে দাসমুক্তি আন্দোলন ও নারীমুক্তি আন্দোলন ছিলো পরস্পরনির্ভর। প্রথম যুগের মার্কিন নারীবাদীরা : গ্রিমকে বোনেরা, লুসি স্টোন, এলিজাবেথ কেডি স্ট্যান্টন, লুক্রেশিয়া মোট, সুসান বি অ্যান্থনি ছিলেন নিষ্ঠাপরায়ণ দাসপ্রথারহিতকরণবাদী।
১৮৩৮ গ্রিমকে বোনদের, এঞ্জেলিনা ই গ্রিমকের ক্রীতদাসপ্রথা ও দাসপ্রথা রহিতকরণ সম্পর্কে প্রবন্ধের উত্তরে ক্যাথেরিন বিচারের কাছে পত্রাবলি, এবং সারাহ এম গ্রিমকের নারীপুরুষের সাম্য ও নারীর অবস্থা সম্পর্কে পত্রাবলি। এ-দু মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ বোন ক্রীতদাস ও নারীর মুক্তিকে অভিন্ন ক’রে দেখে সমস্যার একই সমাধান দাবি করেন। তবে দাসপ্রথারহিতকরণবাদী পুরুষেরা ক্রীতদাসের মুক্তিতে বিশ্বাস করলেও নারীর মুক্তিতে বিশ্বাস করতো না: গৃহযুদ্ধে সাফল্যের পর তারা নারীদের প্রতারণা করতে দ্বিধা করে নি।
১৮৪৮ জুলাইয়ের ১৯ ও ২০ তারিখে নিউ ইয়র্কের সেনেকা ফলস্-এ প্রথম নারী অধিকার সম্মেলন। এতে অংশ নেন তিন শোর মতো নারীপুরুষ। এ-সম্মেলনে মার্কিন স্বাধীনতা ঘোষণার আদলে নারীমুক্তির ঘোষণা ক’রে বারোটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ঘোষণার রচয়িতা এলিজাবেথ কোড স্ট্যান্টন। ঘোষণায় বলা হয় :
‘আমরা মনে করি এগুলো স্বতঃসিদ্ধ সত্য : যে সব পুরুষ ও নারীকে সমানভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে: স্রষ্টা তাদের ভূষিত করেছে কতিপয় হস্তস্তর অযোগ্য অধিকারে; এগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবন, স্বাধীনতা, এবং সুখলাভের প্রয়াস…
মানবজাতির ইতিহাস হচ্ছে নারীর ওপর পুরুষের পৌনপুনিক পীড়ন ও বলপ্রয়োগের ইতিহাস, যাব লক্ষ্য নারীর ওপর পুরুষেব চরম স্বৈব্যাচার প্রতিষ্ঠা। এটা প্রমাণের জন্যে অকপট বিশ্বের কাছে পেশ করতে চাই তথ্য। সে [পুরুষ] তাকে নারী কখনো তার সহজাত অধিকার ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার দেয় নি।
সে তাকে সে-সব বিধান মানতে বাধ্য করেছে, যা প্রণয়নে তার কথা শোনা হয় নি…
সে তাকে বিবাহিত অবস্থায়, আইনের চোখে, আইনগতভাবে মৃত বলে নির্দেশ কবেছে…
সে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে সম্পত্তিক মালিক হওয়ার সব অধিকার, এমনকি নিজের উপার্জিত পারিশ্রমিকের ওপবের অধিকার…
সে তাকে পরিণত করেছে নৈতিক দায়িত্বহীন প্রাণীতে, কেননা সে স্বামীব উপস্থিতিতে যে-কোনো অপবাধ করে অব্যাহতি পেতে পাবে শাস্তি থেকে।…
সে নিজের জন্যে একচেটে বেখেছে সমস্ত লাভজনক পেশা, এবং নারীর জন্যে রেখেছে যে-সমস্ত কাজ, তার পারিশ্রমিক অত্যন্ত তুচ্ছ…
সে পুরুষ ও নারীর জন্যে ভিন্ন নৈতিকতা বিধি দিয়ে জনগণেব মধ্যে সৃষ্টি করেছে মিথ্যা সুভাবাবেগ…
সে জোর করে নিজে অধিকার কাবেছে জিহোভার সমস্ত অধিকার, দাবি করেছে যে নারীর জনো এক পৃথক এলাকা বরাদ্দ করা তার অধিকার…
সে সব রকমে চেষ্টা করেছে নারীর আত্মবিশ্বাস ধ্বংস ক’লে দিতে, তার আত্মসম্মানবোধ খৰ্ব করতে, এবং তাকে স্বেচ্ছায় পর্যাশ্রিত ও শোচনীয় জীবনযাপনে সম্মত হতে।…
এ-সম্মেলনের একটি লক্ষ্য ছিলো নারীর ভোট ‘ধকার অর্জন, তবে ভোটাধিকারের প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় নি। অনেকে মনে করেছিলেন ভোটাধিকার চাইতে গেলে তারা তা তো পাবেনই না, বরং অন্যান্য লক্ষ্য অর্জনে ও ব্যর্থ হবেন। তবে এলিজাবেথ স্ট্যান্টন ও ফ্রেডরিক ডগলাস মনে করেন শাসক নির্বাচন ও আইন প্রণয়নের অধিকার পেলেই অন্য অধিকারগুলোও পাওয়া যাবে, তাই তারা প্ৰস্তাবটি পাশ করাতে যারপরনাই চেষ্টা করেন। এর পর প্রায় প্রতি বছরই একেক শহরে অনুষ্ঠিত হয় নারী অধিকার সম্মেলন। তাদের আন্দোলন যতোই শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে, রক্ষণশীলেরা হতে থাকে ততোই ক্ষিপ্ত। তাদের বিরুদ্ধে রক্ষণশীলেরা পত্রপত্রিকায়, গির্জায় আক্রমণ চালাতে থাকে অকথ্য ভাষায়। প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদপত্রগুলো তাদের উপকারে আসবে না। ব’লে তারা প্ৰকাশ করেন নিজেদের সাময়িকী : দি লিলি, দি ইউনা, ওম্যানস অ্যাডভোকেট প্রভৃতি। রক্ষণশীলেরা নারীবাদীদের আক্রমণ করতো অশীল ভাষা ও পবিত্র বাইবেল দিয়ে। তারা আদি মার্কিন নারীবাদী ফ্যানি রাইটকে আখ্যা দেয় ‘ধর্মহীনতার লাল বেশা’, এরনেস্টিন রোজকে বলে ‘বেশ্যার থেকে হাজার হাজার গুণ নিচের পতিতা’। পাদ্রিরা নারীবাদী সম্মেলনে হানা দিয়ে বাইবেল উঁচিয়ে ধ’রে চিৎকার করতো, ‘সেইন্ট পল বলেছেন. সেইন্ট পিটার বলেছেন…।’