সাহারাতে ডেকেছে আজ বান, দেখে যা
হাম্বির – মিশ্র কাহারবা
সাহারাতে ডেকেছে আজ বান, দেখে যা।
মরুভুমি হল গুলিস্তান, দেখে যা॥
সেই বানেরই ছোঁয়ায় আবার আবাদ হল দুনিয়া,
শুকনো গাছে মুঞ্জরিল প্রাণ দেখে যা॥
বিরান মুলুক আবার হল গুলে গুলে গুলজার,
মক্কাতে আজ চাঁদের বাথান, দেখে যা॥
সেই দরিয়ায় পারাপারের তরি ভাসে কোরআন,
ওড়ে তাহে কলেমার নিশান, দেখে যা॥
কান্ডারি তার বন্ধু খোদার হজরত মোহাম্মদ,
যাত্রী – যারা এনেছে ইমান, দেখে যা॥
সেই বানে কে ভাসবি রে আয়,
যাবি রে কে ফিরদৌস,
খেয়াঘাটে ডাকিছে আজান, দেখে যা॥
সোনার মেয়ে সোনার মেয়ে
মিশ্র-পিলু দাদরা
সোনার মেয়ে! সোনার মেয়ে!
তোমার রূপের মায়ায় আমার
নয়ন ভুবন গেল ছেয়ে॥
ঝরে তোমার রূপের ধারা
চন্দ্র জাগে তন্দ্রাহারা,
আকাশ-ভরা হাজার তারা
তোমার মুখে আছে চেয়ে॥
কোন গ্রহ-লোক ব্যথায় ভরে
কোন অমরা শূন্য করে
ওলো রাখলে চরণ ধরার পরে
রং-সাগরের রঙে নেয়ে॥
শিল্পী আঁকে তোমার ছবি,
তোমারই গান গাহে কবি,
নিশীথিনী হারিয়ে রবি
চাঁদ হাতে পায় তোমায় পেয়ে॥
স্বদেশ আমার জানি না তোমার
কেদারা একতালা
স্বদেশ আমার! জানি না তোমার
শুধিব মা কবে ঋণ।
দিনের পরে মা দিন চলে যায়,
এল না সে শুভদিন॥
খাই দাই আর আরামে ঘুমাই,
পাগলের যেন ব্যথা-বোধ নাই,
ললাট-লিখন বলিয়া এড়াই
ভীরুতা, শক্তি ক্ষীণ।
অভাগিনি তুমি, সন্তান তব
সমান ভাগ্যহীন॥
কত শতাব্দী করেছে মা পাপ
মানুষেরে করি ঘৃণা,
জানি মা মুক্তি পাব না তাহার
প্রায়শ্চিত্ত বিনা।
স্বদেশ বলিতে বুঝেছি কেবল
দেশের পাহাড়, মাটি, বায়ু, জল,
দেশের মানুষে ঘৃণা করি চাই
করিতে দেশ স্বাধীন।
যত যেতে চাই তত পথে তাই
হই মা ধূলি-বিলীন॥
ক্ষুদ্র ম্লেচ্ছ কাঙাল ভাবিয়া
রেখেছি যাদেরে চরণে দাবিয়া
তাদের চরণধূলি মাখি যদি,
আসিবে সে শুভদিন।
নূতন আলোকে জাগিবে পুলকে
জননী ব্যথা-মলিন॥
স্বপনে দেখেছি ভারত-জননী
পাহাড়ি একতালা
স্বপনে দেখেছি ভারত-জননী
তুই যেন রাজরাজেশ্বরী।
নবীন ভারত! নবীন ভারত!
স্তবগান ওঠে ভুবন ভরি॥
শস্যে ফসলে ডেকেছে মা বান,
মাঠে ও খামারে ধরে নাকো ধান,
মুখভরা হাসি, হাসিভরা প্রাণ,
নদীভরা যেন পণ্য-তরি।
পড়ুয়ারা পড়ে বকুলছায়ে
সুস্থ সবল আদুল গায়ে,
মেয়েরা ফিরিছে মুক্ত বায়ে
কলভাষে দিক মুখর করি॥
ভুলিয়া ঈর্ষা ভোগ আসক্তি
ধরার ক্লান্ত অসুর-শক্তি
এসেছে শিখিতে প্রেম ও ভক্তি
নব-ভারতের চরণ ধরি॥
তব প্রেমে তব শুভ ইঙ্গিতে
অভাব যেন মা নাই পৃথিবীতে,
স্বর্গ নামিয়া এসেছে মাটিতে,
শুধু আনন্দ পড়িছে ঝরি॥
হে চির-সুন্দর, বিশ্ব-চরাচর
ভজন
ভৈরবী কাহারবা
হে চির-সুন্দর, বিশ্ব-চরাচর
তোমারই মনোহর রূপের ছায়া।
রবি-শশী-তারকায় তোমারই জ্যোতি ভায়
রূপে রূপে তব অরূপ কায়া॥
দেহের সুবাস তব কুসুমগন্ধে,
তোমার হাসি হেরি শিশুর আনন্দে।
জননীর রূপে তুমি আমাদের যাও চুমি
তব স্নেহ-প্রেমরূপ কন্যা জায়া॥
হে বিরাট শিশু! এ যে তব খেলনা –
ভাঙাগড়া নিতি নব, দুখ-শোক-বেদনা।
শ্যামল পল্লবে সাগর-তরঙ্গে
তব রূপলাবণি দুলে ওঠে রঙ্গে,
বিহগের কণ্ঠে তব মধু কাকলি,
মায়াময়! শত রূপে বিছাও মায়া॥
হেরি আজ শূন্য নিখিল
ভীমপলশ্রী দাদরা
হেরি আজ শূন্য নিখিল
প্রিয় তোমারই বিহনে।
কোথা হায় তুমি কোথায়,
উঠিছে কাঁদন পবনে॥
কেন বা এলে তুমি কেন বা বিদায় নিলে,
স্বপনে দিয়ে দেখা মিশালে জাগরণে॥
কান্তা-বিরহে হেথা ক্লান্ত কপোত কাঁদে,
সে কোথায় গেছে উড়ে সাথি তার কোন গগনে॥
আঁধার ঘরে মম কেন জ্বলালে বাতি
যদি নিভায়ে দেবে ছিল গো তোমার মনে॥
ভাসিয়া চলেছি আজ স্রোতের কুসুম-সম
নিরাশার পাথার-জলে তোমারই অন্বেষণে॥