মেঘের হিন্দোলা দেয় পুব-হাওয়াতে দোলা
পিলু কাফি দাদরা
মেঘের হিন্দোলা দেয় পুব-হাওয়াতে দোলা।
কে দুলিবি এ দোলায় আয় আয় ওরে কাজ-ভোলা॥
মেঘ-নটীর নূপুর
ওই বাজে ঝুমুর ঝুমুর,
শীর্ণা-তনু ঝরনা তরঙ্গ-উতরোলা॥
ফুল-পসারিনি ওই দুলিছে বনানী,
বিনিমূলে বিলায় সে সুরভি ফুল ছানি।
আজ ঘরে ঘরে ফুল-দোল সব বন্ধ দুয়ার খোলা॥
জলদ-মৃদঙ বাজে
গভীর ঘন আওয়াজে,
বাদলা-নিশীথ দুলে ওই তিমির-কুন্তলা॥
মোর পুষ্প-পাগল মধবী কুঞ্জে
কীর্তন
মোর পুষ্প-পাগল মধবী কুঞ্জে
এই তো প্রথম মধুপ গুঞ্জে,
তুমি যেয়ো না আজি যেয়ো না॥
মম চন্দ্র-হসিত মাধবী নিশীথ
বিষাদের মেঘে ছেয়ো না॥
হেরো তরুণ তমাল করুণ ছায়ায়
আসন বিছায়ে তোমারে সে চায়;
তোমার বাঁশির বিদায়-সুরে
বনে কদম্ব-কেশর ঝুরে;
ওগে অকরুণ! ওই সকরুণ গীতি গেয়ো না।
তুমি যেয়ো না আজি যেয়ো না॥
তোলা বনফুল রয়েছে আঁচলে
হয়নিকো মালা গাঁথা,
বকুলের ছায়ে নব কিশলয়ে
হয়নি আসন পাতা।
মুকুলিকা মোর কামনা সলাজ
দলিয়ো না পায়ে, হে রাজাধিরাজ!
মম অধরের হাসি করিয়ো না বাসি,
পরবাসী যেতে চেয়ো না!
তুমি যেয়ো না আজি যেয়ো না॥
মোহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লে আলা
ভীমপলশ্রী কাহারবা
মোহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লে আলা,
তুমি বাদশারও বাদশাহ কমলিওয়ালা॥
পাপে-তাপে পূর্ণ আঁধার দুনিয়া
হল পুণ্য বেহেশতি নূরে উজালা॥
গুনাহ্গার উম্মত লাগি তব
আজও চয়ন নাহি, কাঁদিছ নিরালা॥
কিয়ামতে পিয়াসি উম্মত লাগি
দাঁড়ায়ে রবে লয়ে তহুরার পিয়ালা॥
জ্বলিবে রোজহাশরে দ্বাদশ রবি,
কাঁদিবে নফসি বলে সকল নবি,
‘য়্যা উম্মতি, য়্যা উম্মতি’ , একেলা তুমি
কাঁদিবে খোদার পাক আর্শ চুমি –
পাপী উম্মতত্রাণ তব জপমালা॥
করে আউলিয়া আম্বিয়া তোমারই ধ্যান,
তব গুণ গাহিল খোদ আল্লাহ্তালা॥
যেন ফিরে না যায় এসে আজ
বেহাগ খেমটা
যেন ফিরে না যায় এসে আজ
বঁধুয়া ফিরে না যায়।
সখী দিসনে তোরা তারে লাজ
বঁধুয়া ফিরে না যায়॥
পথ ভুল করে
যায় আন-ঘরে জানি সই,
তবু আমারই সে রাজাধিরাজ
বঁধুয়া ফিরে না যায়॥
ফুল চুরি ওর পেশা
ও শুধু চোখের নেশা, জানি সই,
একা আমার ছবি তার হিয়া-মাঝ
বঁধুয়া ফিরে না যায়॥
সুন্দর বলে তায়
সকলে পাইতে চায়,
সে পরাল মোরে প্রেমের তাজ
বঁধুয়া ফিরে না যায়॥
যৌবন-সিন্ধু টলমল টলমল
সিন্ধু ত্রিতাল
যৌবন-সিন্ধু টলমল টলমল,
প্রেমের ইন্দু আকাশে ঝলমল।
হৃদয়-তটিনী জোয়ারে নেচে যায়,
তরঙ্গ-রঙ্গে ছলছল ছলছল॥
অন্তর-মন্দিরবাসিনী আজি
আসিল আলোকে ফুল-সাজে সাজি,
নাচুনি ছন্দে চলে সে আনন্দে
মৃদুল মন্দে দুলায়ে বনতল॥
মল্লিকা অতসী ওঠে বনে বিকশি
তার তনু-চন্দন-গন্ধে
বাজে চুড়ি ও কঙ্কণ মণিবন্ধে,
কোকিল কুহরে কুহু অবিরল॥
রিমি ঝিম রিমি ঝিম ওই নামিল দেয়া
পিলু কাহারবা
রিমি ঝিম রিমি ঝিম ওই নামিল দেয়া!
শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া॥
ঝিলে শাপলা কমল
ওই মেলিল দল,
মেঘ-অন্ধ গগন, বন্ধ খেয়া॥
বারি-ধারে কাঁদে চারিধার,
ঘরে ঘরে রুদ্ধ দুয়ার;
তেপান্তরে নাচে একা আলেয়া॥
কাঁদে চখাচখি, কাঁদে বনে কেকা,
দীপ নিভায়ে কাঁদি আমি একা,
আজ মনে পড়ে সেই মন দেয়া-নেয়া॥
শিউলিতলায় ভোরবেলায়
বেহাগ – মিশ্র কাহারবা
শিউলিতলায় ভোরবেলায়
কুসুম কুড়ায় পল্লি-বালা।
শেফালি পুলকে ঝরে পড়ে মুখে
খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা॥
ঘোমটা খুলিয়া তার পিঠে লুটায়,
শিথিল কবরী লুটিছে পায়,
নৃত্যের ভঙ্গে ফুল তোলে রঙ্গে,
আধো আঁধার বন তার রূপে উজালা॥
নিলাজ পাঁয়জোরে তার ওঠে ঝংকার রিনিঝিনি,
মন কয় চিনি চিনি,
এ কি গো বন-দেবীর সতিনি।
শিশির ধরে পায় আলতার রং চায়,
পাখি তারই গান গায় বনে নিরালা॥
শিউলিফুলের মালা দোলে
সিন্ধু মিশ্র কাহারবা
শিউলিফুলের মালা দোলে
শারদ-রাতের বুকে ওই।
এমন রাতে একলা জাগি
সাথে জাগার সাথি কই॥
বকুলবনে একলা পাখি,
আকুল হল ডাকি-ডাকি,
আমার প্রাণ থাকি-থাকি
তেমনই ডেকে ওঠে সই॥
কবরীতে করবীফুল পরিয়া প্রেমে গরবিনি
ঘুমায় বঁধুর বাহু-পাশে, ঝিমায় দ্বারে নিশীথিনী।
ডাকে আমায় দূরের বাঁশি
কেমনে আর ঘরে রই॥
শেষ হল মোর এ জীবনে ফুল ফোটাবার পালা
জৌনপুরী টোড়ি দাদরা
শেষ হল মোর এ জীবনে ফুল ফোটাবার পালা,
ওগো মরণ, অর্ঘ্য লহো সেই কুসুমের ডালা॥
কাটল কীটে ঝরল যে ফুল
শুকাল যে আশার মুকুল,
তাই দিয়ে হে মরণ তোমার গেঁথেছি আজ মালা॥
সুন্দর এই ধরণিতে কতই ছিল সাধ বাঁচিতে
হঠাৎ তোমার বাজল বেণু বিদায়-করুণ ভৈরবীতে।
তোমার আঁধার-শান্ত কোলে
শ্রান্ত তনু পড়ুক ঢলে,
আর সহে না কুসুমবিহীন কন্টকের জ্বালা॥
সাধ জাগে মনে পর-জীবনে
তিলং কাহারবা
সাধ জাগে মনে পর-জীবনে
তব কপোলে যেন তিল হই।
ভালোবাসিয়া মোরে দিল্ দিবে তুমি
যেন আমি তোমার মতো বে-দিল্ হই।
মোর দেওয়া হার নিলে না অকরুণা,
যেন হয়ে সে হার তব বক্ষে রই॥
যাহারে ভালোবেসে তুমি চাহ না মোরে
মরিয়া আসি যেন তাহারই রূপ ধরে,
তুমি হার মানিবে আমি হব জয়ী॥
হৃদি নিঙাড়ি মম আলতা হব পায়ে;
অধরে হব হাসি, রূপ লাবণি গায়ে,
আমার যাহা কিছু তোমাতে হবে হারা,
তুমি জানিবে না আমা বই॥