বাদল-বায়ে মোর নিভিয়া গেছে বাতি
দেশ আদ্ধা কাওয়ালি
বাদল-বায়ে মোর নিভিয়া গেছে বাতি।
তোমার ঘরে আজ উৎসবের রাতি।
তোমার আছে হাসি, আমার আঁখি-জল,
তোমার আছে চাঁদ, আমার মেঘ-দল;
তোমার আছে ঘর, ঝড় আমার সাথি॥
শূন্য করি মোর মনের বনভূমি,
সেজেছ সেই ফুলে রানির সাজে তুমি।
নব বাসরঘরে যাও সে সাজ পরে
ঘুমাতে দাও মোরে কাঁটার শেজ পাতি॥
বাসন্তী রং শাড়ি পোরো
সিন্ধু দাদরা
বাসন্তী রং শাড়ি পোরো
খয়ের রঙের টিপ।
সাঁঝের বেলায় সাজবে যখন
জ্বালবে যখন দীপ॥
দুলিয়ে দিয়ো দোলন-খোঁপায়
আমের মুকুল বকুল-চাঁপায়,
মেখলা কোরো কটি-তটে
শিউরে-ওঠা নীপ॥
কর্ণ-মূলে দুল দুলিয়ো দুলাল-চাঁপার কুঁড়ি,
বন-অতসীর কাঁকন পোরো, কনক-গাঁদার চুড়ি।
আধখানা চাঁদ গরব ভরে
হাসে হাসুক আকাশ পরে,
তুমি বাকি আধখানা চাঁদ
ধরার মণি-দীপ॥
বুকে তোমায় নাই-বা পেলাম
ভৈরবী-মিশ্র কাহারবা
বুকে তোমায় নাই-বা পেলাম
রইবে আমার চোখের জলে।
ওগো বঁধু! তোমার আসন
গভীর ব্যথায় হিয়ার তলে॥
আসবে যখন তিমির-রাতি
রইবে না কেউ জাগার সাথি,
আসব সেদিন জ্বালব বাতি,
মুছব নয়ন-জল আঁচলে॥
নাই-বা হলাম প্রিয় তোমার,
বন্ধু হতে দোষ কি বঁধু?
মুখের মধুর তৃষ্ণা শেষে
আমি দিব বুকের মধু।
আমি ভালোবাসিনিতো,
ভালোবাসা পাবার ছলে॥
বাহুর পাশে প্রিয়ায় বেঁধে
আমার তরে উঠবে কেঁদে,
সেই তো আমার জয় গো, প্রিয়,
অন্তরে রই, রই না গলে॥
বৃথা তুই কাহার পরে করিস অভিমান
তিলক-কামোদ মিশ্র কাহারবা
বৃথা তুই কাহার পরে করিস অভিমান।
পাষাণ-প্রতিমা সে-যে হৃদয় পাষাণ॥
রুপসির নয়নে জল নয়ন-শোভার তরে,
ও শুধু মেঘের লীলা নভে যে বাদল ঝরে,
চাতকের তরে তাহার কাঁদে না পরান॥
প্রণয়ের স্বপন-মায়া
ধরিতে মিলায় কায়া,
গোধূলির রঙের খেলা ক্ষণে অবসান॥
ফোটে ফুল কানন ভরে,
সে কি তো মালার তরে?
প্রেমে হায় জোর চলে না, নাহি প্রতিদান॥
ভুল করে কোন ফুল-বিতানে
মাঢ় মিশ্র লাউনি
ভুল করে কোন ফুল-বিতানে
গানের পাখি পথ হারালি।
প্রেম-সমাধির বুকে এ-যে
সাজানো ম্লান ফুলের ডালি॥
বাণ-বেঁধা বুক লয়ে কোথায়
উড়ে এলি শান্তি-আশায়,
চোখের জলের নদীর পাশেই
রয় নিরাশার চোরাবালি॥
জানিসনে তুই ফুলের বনে
কাল-সাপিনি রয় গোপনে,
তৃষ্ণা-কাতর হৃদয়ে তোর
বিষের জ্বালা দিলি ঢালি॥
আলেয়ারই আলোয় ভুলে
এলি এ-কোন মরণ-কূলে
হৃদয়ের এ শ্মশান-ভূমে
প্রেমের চিতা জ্বলছে খালি॥
ভেঙো না ভেঙো না বঁধু তরুণ চামেলি-শাখা
খাম্বাজ দাদরা
ভেঙো না ভেঙো না বঁধু তরুণ চামেলি-শাখা।
ফুলের নজরানা এর আজিও পাতায় ঢাকা॥
কুঞ্জ-দ্বারে থাকি থাকি বৃথা এত ডাকাডাকি,
আজিও এ বনের পাখি ঘুমায় হেরো গুটিয়ে পাখা॥
অসময়ে হে রসময় ভাঙিয়ো না লতার হৃদয়,
তনুতে এলে অনুরাগ হেরিবে না ফাঁকা-ফাঁকা॥
আসছে-ফাগুনমাসে আসিয়ো ইহার পাশে,
আজ যে-লতা কয় না কথা, সেদিন তায় যাবে না রাখা॥
মদির আবেশে কে চলে ঢুলুঢুলু-আঁখি
পিলু মিশ্র কাহারবা
মদির আবেশে কে চলে ঢুলুঢুলু-আঁখি।
মদির কার আঁখি।
হেরিয়া পাপিয়া উঠিছে পিউ পিউ ডাকি॥
আলতা-রাঙা পায়ে আলপনা আঁকে,
পথের যত ধূলি তাই বুক পেতে থাকে,
দুধারে তরুলতা দেয় চরণ ফুলে ফুলে ঢাকি॥
তারই চোখের চাওয়ায় গো দোলা লাগে হাওয়ায়,
তালীবন তাল দিয়ে যায় তাল-ফেরতায়।
আকুল তানে গাহে বকুল-বনের পাখি॥
তারই মুখ-মদের ছিটে
জোগায় ফুলে মধু মিঠে,
চাঁদের জৌলুসে তাহারই রওশনি মাখি॥
মনে যে মোর মনের ঠাকুর
কানাড়া – মিশ্র রূপক
মনে যে মোর মনের ঠাকুর
তারেই আমি পূজা করি,
আমার দেহের পঞ্চভূতের
পঞ্চপ্রদীপ তুলে ধরি॥
ফকির যোগী হয়ে বনে
ফিরি না তার অন্বেষণে,
আমি মনের দুয়ার খুলে দেখি
রূপের জোয়ার, মরি মরি॥
আছেন যিনি ঘিরে আমায়,
তাঁরে আমি খুঁজব কোথায়,
সাগরে খুঁজে বেড়াই
সাগর-বুকে ভাসিয়ে তরি॥
মন্দিরের ওই বন্ধ খোপে
ঠাকুর কি রয় পূজার লোভে?
পেতে রাখি ভক্তিবেদি
আসবে নেমে প্রেমের হরি॥
মরহাবা সৈয়দে মক্কি মদনি আল-আরবি
বেহাগ কাহারবা
মরহাবা সৈয়দে মক্কি মদনি আল-আরবি।
বাদশারও বাদশাহ নবিদের রাজা নবি॥
ছিলে মিশে আহাদে , আসিলে আহমদ হয়ে,
বাঁচাতে সৃষ্টি খোদার, এলে খোদার সনদ লয়ে;
মানুষে উদ্ধারিলে মানুষের আঘাত সয়ে;
মলিন দুনিয়ায় আনিলে তুমি সে বেহেশতি ছবি॥
পাপের জেহাদ-রণে দাঁড়াইলে তুমি একা,
নিশান ছিল হাতে ‘লা শরীক আল্লাহ্’ লেখা,
গেল দুনিয়া হতে ধুয়ে মুছে পাপের রেখা,
বহিল খুশির তুফান উদিল পুণ্যের রবি॥
মহুয়া ফুলের মদির বাসে
পিলু-মিশ্র কাহারবা
মহুয়া ফুলের মদির বাসে,
নেশাতে নয়ন ঝিমিয়ে আসে॥
মাতাল পাপিয়া পিয়া পিয়া ডাকে,
দোলন-চাঁপার ঝুলন-শাখে,
মদালস বায়ে মন উদাসে॥
নিদালি ছাওয়া চৈতালি হাওয়া,
স্বপনের ঘোর লাগে আকাশে
মৌমাছির পাখা জড়িয়ে আসে॥
মাধবীলতার আজি মিলন সখী
তিলক-কামোদ মিশ্র কাহারবা
মাধবীলতার আজি মিলন সখী
শ্যাম-সহকার তরুর সাথে।
আকাশে পূর্ণিমা-চাঁদের জলসা
হেরো গো তাই আজি চৈতালি রাতে॥
ফুলে ফুলে তার ফুল্ল তনু-লতা,
গাহিয়া ওঠে পাখি, বউ গো কও কথা;
স্বর্ণলতার শতনরী হার
দুলিছে গলায় রাতুল শোভাতে॥
তারই আমন্ত্রণ-লিপি থরে থরে
শ্যামল পল্লবে কুসুম-আখরে।
তরুলতা দুলে পুলকে নাচি নাচি,
মিলন-মন্ত্র গাহিছে মৌমাছি,
আলপনা আঁকে আলো ও ছায়াতে॥