পথ চলিতে যদি চকিতে
বারোয়াঁ-মিশ্র কাহারবা
পথ চলিতে যদি চকিতে
কভু দেখা হয়, পরান-প্রিয়!
চাহিতে যেমন আগের দিনে
তেমনই মদির-চোখে চাহিয়ো॥
যদি গো সেদিন চোখে আসে জল,
লুকাতে সে-জল করিয়ো না ছল,
যে প্রিয়-নামে ডাকিতে মোরে
সে-নাম ধরে বারেক ডাকিয়ো॥
তোমার বঁধু পাশে যদি রয়,
মোর-ও প্রিয় সে, করিয়ো না ভয়,
কহিব তারে, ‘আমার প্রিয়ারে
আমারও অধিক ভালোবাসিয়ো’।
বিরহ-বিধুর মোরে হেরিয়া
ব্যথা যদি পাও, যাব সরিয়া,
রব না হয়ে পথের কাঁটা,
মাগিব এ বর – মোরে ভুলিয়ো॥
পরো পরো চৈতালি-সাঁঝে কুসমি শাড়ি
চৈতি কাহারবা
পরো পরো চৈতালি-সাঁঝে কুসমি শাড়ি।
আজি তোমার রূপের সাথে চাঁদের আড়ি॥
পরো ললাটে কাচপোকার টিপ,
তুমি আলতা পরো পায়ে হৃদি নিঙাড়ি॥
প্রজাপতির ডানা-ঝরা সোনার টোপাতে,
ভাঙা ভুরু জোড়া দিয়ো রাতুল শোভাতে।
বেল-যূথিকার গোড়ে-মালা পরো খোঁপাতে,
দিয়ো উত্তরীয় শিউলি-বোঁটার রঙে ছোপাতে।
রাঙা সাঁঝের সতিনি তুমি রূপ-কুমারী॥
পাষাণ-গিরির বাঁধন টুটে
পিলু-মিশ্র রূপক
পাষাণ-গিরির বাঁধন টুটে
নির্ঝরিণী আয় নেমে আয়।
ডাকছে উদার নীল পারাবার
আয় তটিনী আয় নেমে আয়॥
বেলাভূমে আছড়ে পড়ে
কাঁদছে সাগর তোরই তরে,
তরঙ্গেরই নূপুর পরে
জল-নটিনি আয় নেমে আয়॥
দুই ধারে তোর জল ছিটিয়ে
ফুল ফুটিয়ে আয় নেমে আয়,
শ্যামল তৃণে চঞ্চল অঞ্চল লুটিয়ে
আয় নেমে আয়॥
সজল যে তোর চোখের চাওয়ায়
সাগর জলে জোয়ার জাগায় –
সেই নয়নের স্বপন দিয়ে
বনহরিণী আয় নেমে আয়॥
পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে
পিলু দাদরা
পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে।
‘পিউ পিউ পিউ কাঁহা’
পাপিয়া পিয়া বোলে॥
সে পিয়া-পিয়া সুরে
বাদল ঝুরে,
নদী-তরঙ্গ দোলে॥
কূলে কূলে কুলুকুলু
নদী-তরঙ্গ দোলে॥
ফুটিল দল মেলি
কেতকী, বেলি,
শিখী পেখম খোলে॥
দুলে দুলে দুলে নেচে
শিখী পেখম খোলে॥
পিয়ায় যারা নাহি পেল হেথায়, তাহারা কি
এসেছে ধরায় পুন হইয়া পাপিয়া পাখি?
দেখিয়া ঘরে ঘরে তরুণীর কালো আঁখি
‘পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা আজিও উঠিছে ডাকি!
পিয়া পাপিয়া পিয়া বোলে॥
ফিরি পথে পথে মজনুঁ দিওয়ানা হয়ে
ফিরি পথে পথে মজনুঁ দিওয়ানা হয়ে।
বুকে মোর এয়্ খোদা তোমারই এশ্ক্ লয়ে॥
তোমার নামের তসবীহ লয়ে ফিরি গলে,
দুনিয়াদার বোঝে না মোরে পাগল বলে,
ওরা চাহে ধনজন আমি চাহি প্রেমময়ে॥
আছ সকল ঠাঁয়ে শুনে বলে সবে,
এমনি চোখে তোমার দিদার কবে হবে,
আমি মনসুর নহি যে পাগল হব আনাল্হক কয়ে॥
তোমার হবিবের আমি উম্মত এয় খোদা,
তাইতো দেখিতে তোমায় সাধ জাগে সদা,
আমি মুসা নহি যে বেহোশ হয়ে পড়ব ভয়ে॥
তোমারই করুণায় যাবই তোমায় জেনে,
বসাব মোর হৃদে তোমার আর্শ এনে,
আমি চাই না বেহেশ্ত, রব বেহেশ্তের মালিক লয়ে॥
বকুল-চাঁপার বনে কে মোর
মাঢ় লাউনি
বকুল-চাঁপার বনে কে মোর
চাঁদের স্বপন জাগালে।
অনুরাগের সোনার রঙে
হৃদয়-গগন রাঙালে॥
ঘুমিয়ে ছিলাম কুমুদ-কুঁড়ি
বিজন ঝিলের নীল জলে,
পূর্ণ-শশী তুমি আসি
আমার সে ঘুম ভাঙালে॥
হে মায়াবী! তোমার ছোঁয়ায়
সুন্দর আজ আমার তনু।
তোমার মায়া রচিল মোর
বাদল-মেঘে ইন্দ্রধনু।
তোমার টানে, হে দরদি,
দোল খেয়ে যায় কাঁদন-নদী!
কূল-হারা মোর ভালোবাসা আজকে কূলে লাগালে॥
বনে চলে বনমালী বনমালা দুলায়ে
কাফি ঠুংরি
বনে চলে বনমালী বনমালা দুলায়ে!
তমালে কাজল-মেঘে শ্যাম-তুলি বুলায়ে॥
ললিত মধুর ঠামে কভু চলে কভু থামে,
চাঁচর চিকুরে বামে শিখী-পাখা ঢুলায়ে॥
ডাকিছে রাখালদলে, ‘আয় রে কানাই’ বলে
ডাকে রাধা তরুতলে ঝুলনিয়া ঝুলায়ে॥
যমুনার তীর ধরি চলুছে কিশোর হরি,
বাজে বাঁশের বাঁশরি ব্রজনারী ভুলায়ে॥
বরষ মাস যায় – সে নাহি আসে
পিলু-কাফি-মিশ্র ঠুংরি
বরষ মাস যায় – সে নাহি আসে,
বরষ মাস যায়।
সখী রে সেই চাঁদ ওঠে নভে
ফুলবনে ফুল ফোটে বৃথায়॥
একা সহি মৌন হৃদয়-ব্যথা,
আমার কাঁদন শুনি
সে মোর যদি ব্যথা পায়॥
মরমর ধ্বনি শুনি পল্লবে চমকিয়া উঠি সখী
ভাবি বুঝি বঁধু মোর আসিল।
যে যায় চলিয়া, চলিয়া সে যায় চিরতরে
ফিরে আর আসে না সে হায়॥
বহিছে সাহারায় শোকেরই লু-হাওয়া
দেশ কাওয়ালি
বহিছে সাহারায় শোকেরই লু-হাওয়া,
দোলে অসীম আকাশ আকুল রোদনে।
নূহের প্লাবন আসিল ফিরে যেন
ঘোর অশ্রু শ্রাবণ-ধারা ঝরে সঘনে॥
হায় হোসেনা, হায় হোসেনা বলি
কাঁদে গিরিদরি মরু বনস্থলী,
কাঁদে পশু ও পাখি তরুলতার সনে॥
ফকির বাদশাহ গরিব ওমরাহে
কাঁদে তেমনই আজও, তারই মর্সিয়া গাহে,
বিশ্ব যাবে মুছে, মুছিবে না এ আঁসু,
চিরকাল ঝরিবে কালের নয়নে॥
সেই সে কারবালা সেই ফোরাত নদী
মুসলিম হৃদে গাহিছে নিরবধি,
আশমান জমিন রহিবে যতদিন
সবে কাঁদিবে এমনই আকুল কাঁদনে॥
বাজিছে দামামা, বাঁধো রে আমামা
ইমন – মিশ্র একতালা
বাজিছে দামামা, বাঁধো রে আমামা
শির উঁচু করি মুসলমান।
দাওত এসেছে নয়া জমানার
ভাঙা কিল্লায় ওড়ে নিশান॥
মুখেতে কলমা হাতে তলোয়ার,
বুকে ইসলামি জোশ দুর্বার,
হৃদয়ে লইয়া এশ্ক্ আল্লার
চল আগে চল বাজে বিষাণ।
ভয় নাই তোর গলায় তাবিজ
বাঁধা যে রে তোর পাক কোরান॥
নহি মোরা জীব ভোগ বিলাসের,
শাহাদত চিল কাম্য মোদের,
ভিখারির সাজে খলিফা যাদের
শাসন করিল আধা-জাহান
তারা আজ পড়ে ঘুমায় বেহোশ,
বাহিরে বহিছে ঝড় তুফান॥
ঘুমাইয়া কাজা করেছি ফজর,
তখনও জাগিনি যখন জোহর,
হেলা ও খেলায় কেটেছে আসর,
মগরেবের আজ শুনি আজান।
জমাত্ -শামিল হও রে এশাতে
এখনও জমাতে আছে স্থান॥
শুকনো রুটিরে সম্বল করে
যে ইমান আর যে প্রাণের জোরে
ফিরেছে জগৎ মন্থন করে
সে শক্তি আজ ফিরিয়ে আন।
আল্লাহু আকবর রবে পুন
কাঁপুক বিশ্ব দূর বিমান॥