তোমার আকাশে উঠেছিনু চাঁদ
টোড়ি একতালা
তোমার আকাশে উঠেছিনু চাঁদ
ডুবিয়া যাই এখন।
দিনের আলোকে ভুলিয়ো তোমার
রাতের দুঃস্বপন॥
তুমি সুখে থাকো, আমি চলে যাই,
তোমারে চাহিয়া ব্যথা যেন পাই,
জনমে জনমে এই শুধু চাই
না-ই যদি পাই মন॥
ভয় নাই রানি, রেখে গেনু শুধু
চোখের জলের লেখা,
জলের লিখন শুকাবে প্রভাতে
আমি চলে যাব একা।
ঊর্ধ্বে তোমার প্রহরী দেবতা,
মধ্যে দাঁড়ায়ে তুমি ব্যথাহতা,
পায়ের তলার দৈত্যের কথা
ভুলিতে কতক্ষণ॥
তোমার কুসুমবনে আমি আসিয়াছি ভুলে
খাম্বাজ-মিশ্র কাহারবা
তোমার কুসুমবনে আমি আসিয়াছি ভুলে।
তবু মুখপানে প্রিয় চাহো আঁখি তুলে॥
দেখি সেদিনের সম
ওগো ভুলে-যাওয়া স্মৃতি মম
তব ও-নয়নে আজও ওঠে কি না দুলে॥
ওগো ভুল করে আসিয়াছি, জানি ভুলেছ তুমিও,
তবু ক্ষণেকের তরে এ-ভুল ভেঙো না প্রিয়।
তীর্থে এসেছি মম দেবীর দেউলে॥
তোমার মাধবী-রাতে
আসিনি আমি কাঁদাতে,
কাঁদিতে এসেছি একা বিদায়-নদীর কূলে॥
তোমারই প্রকাশ মহান এ নিখিল দুনিয়া জাহান
দেশি-টোড়ি-মিশ্র কাহারবা
তোমারই প্রকাশ মহান এ নিখিল দুনিয়া জাহান।
তোমারই জ্যোতিতে রওশন নিশিদিন জমিন ও আশমান॥
নিভিল কোটি তপন চাঁদ খুঁজিয়া তোমারে প্রভু,
কত দাউদ ইশা মুসা করিল তব গুণগান॥
তোমারে কত নামে হায় ডাকিছে বিশ্ব শিশুর প্রায়,
কত ভাবে পূজে তোমায় ফেরেশতা হুরপরি ইনসান॥
নিরাকার তুমি নিরঞ্জন ব্যাপিয়া আছ ত্রিভুবন,
পাতিয়া মনের সিংহাসন ধরিতে চাহে তবু প্রাণ॥
দুধে আলতায় রং যেন তার সোনার অঙ্গ ছেয়ে
ভাটিয়ালি কাহারবা
দুধে আলতায় রং যেন তার সোনার অঙ্গ ছেয়ে—
সে ভিন-গাঁয়েরই মেয়ে।
চাঁদের কথা যায় ভুলে লোক তাহার মুখে চেয়ে।
সে ভিন-গাঁয়েরই মেয়ে॥
ও-পারের ওই চরে যখন চুল খুলে সে দাঁড়ায়,
কালো মেঘের ভিড় লেগে যায় আকাশের ওই পাড়ায়।
পা ছুঁতে তার নদীর জলে জোয়ার আসে ধেয়ে।
সে ভিন-গাঁয়েরই মেয়ে॥
চোখ তুলে সে মেঘের পানে ভুরু যখন হানে,
অমনি ওঠে রামধনু গো সেই চাহনির টানে।
কপালের সে ঘাম মুছে গো আঁচল যখন খুলে,
ধানের খেতে ঢেউ খেলে যায়, দরিয়া ওঠে দুলে।
আমি চোখের জলে খুঁজি তারেই দুখের তরি বেয়ে।
সে ভিন-গাঁয়েরই মেয়ে॥
দুপুরবেলাতে একলা পথে
দেশ দাদরা
দুপুরবেলাতে একলা পথে
ও কে হেলিয়া দুলিয়া চলিয়া যায়।
খ্যাপা হাওয়াতে উড়িছে আঁচলা,
খোঁপা খুলিয়া খুলিয়া খুলিয়া যায়॥
ছল করে জল যায় সে আনিতে
দেখিয়া গুরুজন ঘোমটা দিতে
ও সে ভুলিয়া ভুলিয়া ভুলিয়া যায়॥
কাহার গলার মালার তরে
আপন মনে আঁচল ভরে
ফুল তুলিয়া তুলিয়া তুলিয়া যায়॥
কার বিরহে পরান দহে,
কীসের নেশায় মদির মোহে
ও সে ঢুলিয়া ঢুলিয়া ঢুলিয়া যায়॥
দুরন্ত দুর্মদ প্রাণ অফুরান
মার্চের সুর
দুরন্ত দুর্মদ প্রাণ অফুরান
গাহে আজি উদ্ধত গান।
লঙ্ঘি গিরি-দরি
ঝঞ্ঝা-নূপুর পরি
ফেরে মন্থর করি অসীম বিমান॥
আমাদের পদভরে ধরা টলমল,
অগ্নিগিরি ভয়ে মন্থর নিশ্চল,
কম্প্রমানা ধরা শান্ত অটল,
চরণে লুটায় ঘোর সিন্ধু-তুফান॥
মোরা উচ্ছৃঙ্খল ঘোর স্পর্ধাভরে,
ভাঙি দ্বার, নিষেধের বজ্র-করে,
করি অসম্ভবের পানে নব অভিযান॥
মোদেরে প্রণমি যায় কাল-ভৈরব,
আমাদের হাতে মৃত্যুর পরাভব,
মৃত্যু নিঙাড়ি আনি জীবন-আসব,
মানুষে করেছি মোরা মহামহীয়ান॥
দুলিবি কে আয় মেঘের দোলায়
দেশ – মিশ্র দাদরা
দুলিবি কে আয় মেঘের দোলায়।
কুসুম দোলে পাতার কোলে
পুবালি হাওয়ায়॥
অলকা-পরি অলক খুলে
কাজরি নাচে গগন-কূলে,
বলাকা-মালার ঝুলন ঝুলায়॥
দাদুরি বোলে, ডাহুকি ডাকে,
ময়ূরী নাচে তমাল-শাখে,
ময়ূর দোলে কদম-তলায়॥
তটিনী দুলে ঢেউ-এর তালে
নিবিড় আঁধার ঝাউয়ের ডালে,
বেণুর ছায়া ঘনায় মায়া
পরান ভোলায়॥
দোপাটি লো, লো করবী, নেই সুরভি, রূপ আছে
ভৈরবী দাদরা
দোপাটি লো, লো করবী, নেই সুরভি, রূপ আছে।
রঙের পাগল রূপ-পিয়াসি সেই ভালো আমার কাছে॥
গন্ধ-ফুলের জলসাতে তোর
গুণীর সভায় নেইকো আদর
গুল্ম-বনে দুল হয়ে তুই দুলিস একা ফুল-গাছে॥
লাজুক মেয়ে পল্লি-বধূ জল নিতে যায় একলাটি,
করবী নেয় কবরীতে, বেণির শেষে দোপাটি।
গন্ধ লয়ে স্নিগ্ধ মিঠে
আলো করে থাকিস ভিটে,
নেই সুবাস সাথে, গায়ে কাঁটা,
সেই গরবে মন নাচে॥
নাচে সুনীল দরিয়া আজি দিল-দরিয়া
ভৈরবী – দাদরা
নাচে সুনীল দরিয়া আজি দিল-দরিয়া
পূর্ণিমা চাঁদেরে পেয়ে।
কূলে তার ঝুমুর ঝুমুর ঘুমুর বাজে মিঠে আওয়াজে
নাচে জল-পরির মেয়ে॥
তার জল-ছলছল কূলে কূলে
ফেনিল যৌবন ওঠে দুলে;
চাঁদিনি উজল তনু ঝলমল
পরানে উছল জাগে জোয়ার,
আধো ঘুমে আসে তার নয়ন ছেয়ে॥
জল-বালা মুক্তামালা গাঁথে নিরালা
চাঁদের তরে,
কাজল-বরনি তরুণী তটিনী চলেছে ধেয়ে॥
নাহি কেহ আমার ব্যথার সাথি
ভীমপলশ্রী কাহারবা
নাহি কেহ আমার ব্যথার সাথি।
জ্বলি পিলসুজে একা মোমের বাতি॥
পতঙ্গ সুখী, পুড়ে এক নিমেষে,
পুড়িয়া মরি আমি সারা রাতি॥
আসে যে সুখের দিনে বন্ধুরূপে,
অসময়ে যায় সরে চুপে চুপে।
উড়ে গেছে অলি ফুল ঝরেছে বলি,
কাঁদি একাকী কন্টক-শয্যা পাতি॥
কেহ কারও নয় তবু প্রাণ কাঁদে
চকোর চাহে যেন সুদূর চাঁদে,
শুধু বেদনা পাই প্রেম-মোহে মাতি॥