এসো বঁধু ফিরে এসো, ভোলো ভোলো অভিমান
ইমন মিশ্র দাদরা
এসো বঁধু ফিরে এসো, ভোলো ভোলো অভিমান।
দিব ও চরণে ডারি মোর তনু-মন-প্রাণ॥
জানি আমি অপরাধী তাই দিবানিশি কাঁদি,
নিমিষের অপরাধের কবে হবে অবসান॥
ফিরে গেলে দ্বারে আসি বাসি কিনা ভালোবাসি,
কাঁদে আজ তব দাসী, তুমি তার হৃদে ধ্যান॥
সেদিন বালিকা-বধূ শরমে মরম-মধু
পিয়াতে পারিনি বঁধু আজ এসে করো পান॥
ফিরিয়া আসিয়া হেথা দিয়ো দুখ দিয়ো ব্যথা,
সহে না এ নীরবতা হে দেবতা পাষাণ॥
কত কথা ছিল তোমায় বলিতে
সারং কাহারবা
কত কথা ছিল তোমায় বলিতে।
ভুলে যাই হয় না বলা পথ চলিতে॥
ভ্রমর আসে যবে বনের পথে,
না-বলা সেই কথা কয় ফুল-কলিতে॥
পুড়ে মরে পতঙ্গ, দীপ তবু
পারে না বলিতে, থাকে জ্বলিতে॥
সে কথা কইতে গিয়ে গুণীর বীণা
কাঁদে কভু সারং-এ কভু ললিতে॥
যত বলিতে চাই লুকাই তত,
গেল মোর এ জনম হায় মন ছলিতে॥
কত কথা ছিল বলিবার, বলা হল না
ভীমপলশ্রী কাহারবা
কত কথা ছিল বলিবার, বলা হল না।
বুকে পাষাণসম রহিল তারই বেদনা।
মনে রহিল মনের আশা,
মিটিল না প্রাণের পিপাসা,
বুকে শুকাল বুকের ভাষা
মুখে এল না॥
এত চোখের জল এত গান,
এত সোহাগ আদর অভিমান
কখন যে হল অবসান
বোঝা গেল না॥
ঝরিল কুসুম যদি হায়,
কেন স্বৃতির কাঁটাও নাহি যায়,
বুঝিল না কেহ কারও মন
বিধির ছলনা।
কপোত কপোতী উড়িয়া বেড়াই
পিলু-বারোয়াঁ ত্রিতাল
(দ্বৈত গান)
উভয়ে॥ কপোত কপোতী উড়িয়া বেড়াই
সুদূর বিমানে আমরা দুজনে।
কানন-কান্তার শিহরি ওঠে
মোদের প্রণয়-মদির কূজনে॥
স্ত্রী॥ ভ্রমর গুঞ্জে মঞ্জুল গীতি
হেরিয়া আমার বঁধুর প্রীতি,
পুরুষ॥ আমার প্রিয়ার নয়নে চাহি
কুসুম ফুটে ওঠে বিপিনে বিজনে॥
স্ত্রী॥ তোমা ছাড়া স্বর্গ চাহি না, প্রিয়!
মোদের প্রেমে চাঁদ আসে নেমে
মাটির পাত্রে পান করি অমিয়।
পুরুষ॥ বিশ্ব ভুলায়ে ওই রাঙা পায়ে
আমারে বেঁধেছ জীবনে মরণে॥
কাঁদিছে তিমির-কুন্তলা সাঁঝ
ধানশ্রী একতালা
কাঁদিছে তিমির-কুন্তলা সাঁঝ
আমার হৃদয়-গগনে।
এসো প্রিয়া এসো বধূ-বেশে এই
বিদায়-গোধূলি-লগনে॥
দিনের চিতার রক্ত-আলোকে
শুভদৃষ্টি গো হবে চোখে চোখে,
আমার মরণ-উৎসবক্ষণে
শঙ্খ বাজুক সঘনে॥
চাঁদের প্রদীপ জ্বালাইয়া হেরো
খুঁজিছে মোদেরে তারাদল,
সজল-বসনা বাদল-পরির
নয়ন করিছে ছলছল।
মরণে তোমারে পাইব বলিয়া
জীবনে করেছি আরাধনা প্রিয়া,
এসো মায়ালোক-বিহারিণী মোর
কুহেলি-আঁধার স্বপনে॥
কাঁদিছে তিমির-কুন্তলা সাঁঝ
ধানশ্রী একতালা
কাঁদিছে তিমির-কুন্তলা সাঁঝ
আমার হৃদয়-গগনে।
এসো প্রিয়া এসো বধূ-বেশে এই
বিদায়-গোধূলি-লগনে॥
দিনের চিতার রক্ত-আলোকে
শুভদৃষ্টি গো হবে চোখে চোখে,
আমার মরণ-উৎসবক্ষণে
শঙ্খ বাজুক সঘনে॥
চাঁদের প্রদীপ জ্বালাইয়া হেরো
খুঁজিছে মোদেরে তারাদল,
সজল-বসনা বাদল-পরির
নয়ন করিছে ছলছল।
মরণে তোমারে পাইব বলিয়া
জীবনে করেছি আরাধনা প্রিয়া,
এসো মায়ালোক-বিহারিণী মোর
কুহেলি-আঁধার স্বপনে॥
কেন ফোটে, কেন কুসুম ঝরে যায়
পিলু-বারোয়াঁ কাহারবা
কেন ফোটে, কেন কুসুম ঝরে যায়!
মুখের হাসি চোখের জলে মরে যায়॥
নিশীথে যে কাঁদিল প্রিয় বলে
নিশি-ভোরে সে কিন হায় সরে যায়॥
হায় আজ যাহার প্রেম করে গো রাজাধিরাজ
কাল কেন সে চির-কাঙাল করে যায়॥
মান অভিমান খেলার ছলে
ফেরে না আর যে যায় চলে,
মিলন-মালা মলিন ধুলায়, ভরে যায়॥
কোন কুসুমে তোমায় আমি
ভজন
কোন কুসুমে তোমায় আমি
পূজিব নাথ বলো বলো।
তোমার পূজার কুসুম-ডালা
সাজায় নিতি বনতল॥
কোটি তপন চন্দ্র তারা
খোঁজে যারে তন্দ্রাহারা
খুঁজি তারে লয়ে আমার
ক্ষীণ এ নয়ন ছলছল॥
বিশ্ব-ভুবন দেউল যাহার
কোথায় রচি মন্দির তাঁর,
লও চরণে ব্যথায়-রাঙা
আমার হৃদয়-শতদল॥
কোন দূরে ও কে যায় চলে যায়
ভৈরবী – মিশ্র কা
কোন দূরে ও কে যায় চলে যায়,
সে ফিরে ফিরে চায়
করুণ চোখে।
তার স্মৃতি মেশা হায়, চেনা-অচেনায়,
তারে দেখেছি কোথায় যেন সে কোন লোকে॥
শুনি স্বপ্নে তারই যেন বাঁশি মন-উদাসী
তারই বার্তা আসে নব মধুমাসে
পলাশ অশোকে॥
কৃষ্ণচূড়ার তার মালা লুটায়
চৈত্রশেষে বনের ধুলায়।
কান্না-বিধুর
তার ভৈরবী সুর
প্রভাতি তারায় অশ্রু ঘনায়।
চির-বিরহী চিনি ওকে॥
খোদার হবিব হলেন নাজেল
ভৈরবী মিশ্র কাহারবা
খোদার হবিব হলেন নাজেল
খোদার ঘর ওই কাবার পাশে।
ঝুঁকে পড়ে আর্শ কুর্শি,
চাঁদ সুরুজ তাঁয় দেখতে আসে॥
ভেঙে পড়ে মুরত-মন্দির,
লাত-মানাত , শয়তানি তখ্ত,
‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’র
উঠিছে তক্বীর আকাশে॥
খুশির মউজ তুফান তোরা
দেখে যা মরুভূমে,
কোহ-ই-তুরের পাথরে আজ
বেহে্শতি ফুল ফুটে হাসে॥
য়্যোতিম-তারণ য়্যেতিম হয়ে
এল রে এই দুনিয়ায়,
য়্যোতিম-মানুষ-জাতির ব্যথা
নইলে এমন বুঝত না সে॥
সূর্ব ওঠে, ওঠে রে চাঁদ,
মনের আঁধার যায় না তায়,
হৃদ-গগন যে করল রওশন,
সেই মোহাম্মদ ওই রে হাসে॥
আপন পুণ্যের বদলাতে যে
মাগিল মুক্তি সবার,
উম্মতি উম্মতি কয়ে
দেখ আঁখি তাঁর জলে ভাসে॥
গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা কাবেরী যমুনা ওই
খাম্বাজ দাদরা
গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা কাবেরী যমুনা ওই,
বহিয়া চলেছে আগের মতন
কই রে আগের মানুষ কই॥
মৌনী স্তব্ধ সে হিমালয়
তেমনই অটল মহিমময়,
নাহি তার সাথে সেই ধ্যানী ঋষি,
আমরাও আর সে জাতি নই॥
আছে সে আকাশ, ইন্দ্র নাই,
কৈলাসে সে যোগীন্দ্র নাই,
অন্নদাসুত ভিক্ষা চাই,
কী কহিব এরে কপাল ব-ই॥
সেই আগ্রা সে দিল্লি ভাই,
পড়ে আছে, সে বাদশা নাই
নাই কোহিনূর ময়ূর-তখ্ত্
নাই সে বাহিনী বিশ্বজয়ী॥
আমরা জানি না, জানে না কেউ,
কূলে বসে কত গণিব ঢেউ,
দেখিয়াছে কত, দেখিব এ-ও
নিঠুর বিধির লীলা কতই॥