আসে রজনি সন্ধ্যামণির প্রদীপ জ্বলে
পিলু কাহারবা
আসে রজনি, সন্ধ্যামণির প্রদীপ জ্বলে।
ছায়া-আঁচল-ঢাকা কাননতলে॥
তিমির দু-কূল দুলে গগনে
গোধূলি-ধূসর সাঁঝ-পবনে,
তারার মানিক অলকে ঝলে॥
পূজা-আরতি লয়ে চাঁদের থালায়
আসিল সে অস্ত-তোরণ নিরালায়।
ললাটের টিপ জ্বলে সন্ধ্যাতারা,
গিরি-দরি-বনে পেরে আপনহারা,
থামে ধীরে বিরহীর নয়নজলে॥
ঈদজ্জোহার চাঁদ হাসে ওই
ভৈরবী কাহারবা
ঈদজ্জোহার চাঁদ হাসে ওই
এল আবার দুসরা ঈদ।
কোরবানি দে কোরবানি দে,
শোন খোদার ফরমান তাকীদ ॥
এমনি দিনে কোরবানি দেন
পুত্রে হজরত ইব্রাহিম,
তেমনি তোরা খোদার রাহে
আয় রে হবি কে শহিদ॥
মনের মাঝে পশু যে তোর
আজকে তারে কর জবেহ
পুলসরাতের পুল হতে পার
নিয়ে রাখ আগাম রসিদ॥
গলায় গলায় মিল রে সবে
ভুলে যা ঘরোয়া বিবাদ,
শিরনি দে তুই শিরীন জবান
তশতরীতে প্রেম মফিদ ॥
মিলনের আরফাত ময়দান
হোক আজি গ্রামে গ্রামে,
হজের অধিক পাবি সওয়াব
এক হলে সব মুসলিমে।
বাজবে আবার নূতন করে
দীন-ই ডঙ্কা, হয় উমীদ ॥
উম্মত আমি গুনাহ্গার তবু ভয় নাহি রে আমার
সিন্ধু – ভৈরবী কাহারবা
উম্মত আমি গুনাহ্গার
তবু ভয় নাহি রে আমার।
আহ্মদ আমার নবি
যিনি খোদ হবিব খোদার॥
যাঁহার উম্মত হতে চাহে সকল নবি,
তাঁহারই দামন ধরি
পুলসরাত হব পার॥
কাঁদিবে রোজ-হাশরে সবে
যবে নফসি-য়্যা-নফসি রবে,
য়্যা উম্মতি বলে একা
কাঁদিবেন আমার মোখতার ॥
কাঁদিবেন সাথে মা ফাতেমা
ধরিয়া আর্শ আল্লার
হোসায়নের খুনের বদলায়
মাফি চাই পাপী সবাকার॥
দোজখ হয়েছে হারাম
যেদিন পড়েছি কলেমা
যেদিন হয়েছি আমি
কোরানের নিশান-বর্দার ॥
এ কুঞ্জে পথ ভুলি কোন বুলবুলি আজ
ভৈরবী লাউনি
এ কুঞ্জে পথ ভুলি কোন বুলবুলি আজ
গাইতে এলে গান।
বসন্ত গত মোর আজ পুস্প-বিহীন
লতিকা-বিতান॥
এলে কি দলিতে আজ ধূলি-ঢাকা
ফুল-সমাধি মোর,
নাহি আর চৈতি হাওয়া, বহে আজি
বৈশাখী তুফান॥
সাজায়ে ফুলের বাসর ছিনু তব পথ চেয়ে,
সে-বাসর বাসি হল, কেঁদে নিশি হল অবসান॥
বাজে মোর তোরণ-দ্বারে
খেলা-শেষের বিদায়-বাঁশরি,
ফিরে যাও শেষ-অতিথি,
দাও যেতে দাও লয়ে অভিমান॥
এ কোথায় আসিলে হায়, তৃষিত ভিখারি
কাফি মিশ্র কাহারবা
এ কোথায় আসিলে হায়, তৃষিত ভিখারি
হায় পথভোলা পথিক হায় মৃগ মরুচারী॥
তোমার আসার পথে প্রিয় ছিলাম যবে আমার পরান পাতি
সেদিন যদি আসিতে নাথ হইতে ব্যথার সাথি।
ধোয়ালে নয়নজলে পা মুছাতাম আকুল কেশে
আজ কেন দিবাশেষে এলে নাথ মলিন বেশে
হায় বুকে লয়ে ব্যথা আসিলে ব্যথাহারী॥
স্মৃতির যে শুকাল মালা যতনে রেখেছি তুলি
ছুঁইয়ে সে হার ঝরায়ো না ম্লান তার কুসুমগুলি
হায় জ্বলুক বুকে চিতা, তায় ঢেলো না আর বারি॥
এই দেহেরই রংমহলায়
ভৈরবী একতালা
এই দেহেরই রংমহলায়
খেলিছেন লীলা-বিহারী।
মিথ্যা মায়া নয় এ কায়া
কায়ায় হেরি ছায়া তাঁরই॥
রূপের রসিক রূপে রূপে
খেলে বেড়ায় চুপে চুপে,
মনের বনে বাজায় বাঁশি
মন-উদাসী বনচারী॥
তার খেলাঘর তোর এ দেহ,
সে তো নহে অন্য কেহ,
সে যে রে তুই, – তবু মোহ
ঘুচল না তোর হায় পূজারি॥
খুঁজিস তারে ঠাকুর-পূজায়,
উপাসনায় নামাজ রোজায়,
চালকলা আর শিন্নি দিয়ে
ধরবি তারে, হায় শিকারি!
পালিয়ে বেড়ায় মন-আঙিনায়
সে যে শিশু প্রেম-ভিখারি॥
একলা ভাসাই গানের কমল সুরের স্রোতে
বেহাগ-মিশ্র দাদরা
একলা ভাসাই গানের কমল সুরের স্রোতে।
খেলার ছলে ওপার পানে এপার হতে॥
আসবে গো এ গাঙের কূলে হয়তো ভুলে
আমার প্রিয়া,
খোঁপায় নেবে আমার গানের কমল তুলে
আমার প্রিয়া।
খুঁজতে আমায় আসবে সুরের নদী-পথে॥
নাম-হারা কোন গাঁয়ে থাকে অচেনা সে
না-ই জানিলাম, গান ভেসে যাক তাহার আশে।
নদীর জলে আলতা-রাঙা পা ডুবায়ে
রয় সে মেয়ে,
গানের কমল লাগে গো তার কমল-পায়ে
উজান বেয়ে।
সেদিন অমর হয় মোর গান
যায় অমরায় পুষ্পরথে॥
এল শোকের সেই মোহররম কারবালার স্মৃতি লয়ে
মর্সিয়া
এল শোকের সেই মোহররম কারবালার স্মৃতি লয়ে।
আজি বেতাব বিশ্ব-মুসলিম সেই শোকে রোয়ে রোয়ে॥
মনে পড়ে আসগরে আজ পিয়াসা দুধের বাচ্চায়
পানি চাহিয়া পেল শাহাদত হোসেনের বক্ষে রয়ে॥
এক হাতে বিবাহের কাঙন এক হাতে কাসেমের লাশ,
বেহোশ খিমাতে সকিনা অসহ বেদনা সয়ে॥
ঝরিছে আঁখিতে খুন হায় জয়নাল বেহোশ কেঁদে
মানুষ বলে সহে এত পাথরও যেত ক্ষয়ে॥
শূন্য পিঠে কাঁদে দুলদুল হজরত হোসেন শহিদ,
আশমানে শোকের বারেষ ঝরে আজি খুন হয়ে॥
এসো এসো রসলোকবিহারী
ভৈরবী একতালা
এসো এসো রসলোকবিহারী
এসো মধুকরদল।
এসো নভোচারী স্বপনকুমার
এসো ধ্যান-নিরমল॥
এসো হে মরাল কমল-বিলাসী,
বুলবুল পিক সুরলোকবাসী,
এসো হে মরাল কমল-বিলাসী,
বুলবুল পিক সুরলোকবাসী,
এসো হে স্রষ্টা এসো অ-বিনাশী
এসো জ্ঞান-প্রোজ্জ্বল॥
দিওয়ানা প্রেমিক এসো মুসাফির,
ধূলি-ম্লান তবু উন্নত শির,
অমরা-অমৃতজয়ী এসো বীর
আনন্দ-বিহ্বল॥
মাতাল মানব করি মাতামাতি
দশ হাতে যবে লুটে যশ-খ্যাতি,
তোমরা সৃজিলে নব দেশ জাতি
অগোচর অচপল॥
খেলো চির-ভোলা শত ব্যথা সয়ে,
সংহাত ওঠে সংগীত হয়ে,
শত বেদনার শতদল লয়ে
লীলা তব অবিরল॥
ভুলি অবহেলা অভাব বিষাদ
ধরণিতে আনো স্বর্গের স্বাদ,
লভি তোমাদের পুণ্য প্রসাদ
পেনু তীর্থের ফল॥