যাবার বেলায় ফেলে যেয়ো একটি খোঁপার ফুল
মাঢ়–মিশ্র কাহারবা
যাবার বেলায় ফেলে যেয়ো
একটি খোঁপার ফুল।
আমার চোখে চেয়ে যেয়ো
একটু চোখের ভুল॥
অধর-কোণের ঈষৎ হাসির ক্ষণিক আলোকে
রাঙিয়ে যেয়ো আমার মনের গহন কালোকে,
যেয়ো না গো মুখ ফিরিয়ে
দুলিয়ে হিরের দুল॥
একটি কথা কয়ে যেয়ো, একটি নমস্কার,
সেই কথাটি গানের সুরে গাইব বারেবার,
হাত ধরে মোর বন্ধু বোলো
একটু মনের ভুল॥
যাহা কিছু মম আছে প্রিয়তম
সিন্ধু–ভৈরবী যৎ
যাহা কিছু মম আছে প্রিয়তম
সকলই নিয়ো হে স্বামী।
যত সাধ আশা প্রীতি ভালোবাসা
সঁপিনু চরণে আমি॥
পুতুল-খেলায় মায়ার ছলনায়
ভুলাইয়া প্রভু রেখেছিলে আমায়,
ভুলেছি সে খেলা, আজি অবেলায়
তোমার দুয়ারে থামি॥
ধরে রাখি যারে আমার বলিয়া
সহসা কাঁদায়ে যায় সে চলিয়া,
অনিমেষ-আঁখি তুমি ধ্রুবতারা
জাগো দিবসযামী॥
যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে
ভীমপলশ্রী কাহারবা
যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে
দেহের কূলে কে চঞ্চল দিগঞ্চলা,
মেঘ-ঘন-কুন্তলা।
দেয় দোলা সে দেয় দোলা
পুব-হাওয়াতে বনে বনে দেয় দোলা॥
চলে নাগরী দোলে ঘাগরি
কাঁখে বর্ষা-জলের গাগরি,
বাজে নূপুর-সুর-লহরি –
রিমিঝিম রিম ঝিম রিম ঝিম
চল-চপলা॥
দেয়ারই তালে কেয়া কদম নাচে,
ময়ূর-ময়ূরী নাচে তমাল-গাছে,
চাতক-চাতকী নাচে।
এলায়ে মেঘ-বেণি কাল-ফণী
আসিল কি দেবকুমারী
নন্দন-পথ-ভোলা॥
রঙ্গিলা আপনি রাধা তারে হোরির রং দিয়ো না
হোরি
কাফি–-সিন্ধু কাহারবা
রঙ্গিলা আপনি রাধা
তারে হোরির রং দিয়ো না।
ফাগুনের রানি যে, তায়,
আর ফাগে রাঙিয়ো না॥
রাঙা আবির-রাঙা ঠোঁটে
গালে ফাগের লালি ফোটে,
রং-সায়রে নেয়ে উঠে
অঙ্গে ঝরে রঙের সোনা॥
অনুরাগ-রাঙা মনে
রঙের খেলা ক্ষণে ক্ষণে,
অন্তরে যার রঙের লীলা
(তারে) বাহিরের রং লাগিয়ো না॥
রাত্রিশেষের যাত্রী আমি যাই চলে যাই একা
মালকোষ মিশ্র দাদরা
রাত্রিশেষের যাত্রী আমি
যাই চলে যাই একা।
শুকতারাতে রইল আমার
চোখের জলের লেখা॥
ফোটার আগে ঝরল যে ফুল
সঙ্গী আমার সেই সে মুকুল,
ছায়াপথে জাগে আমার
বিদায়-পদ-রেখা॥
অনেক ছিল আশা আমার
অনেক ছিল সাধ
ব্যর্থ হল না পেয়ে কার
আঁখির পরসাদ।
অনেক রাতে ঘুমের ঘোরে
এসো না আর খুঁজতে মোরে,
তারার দেশে চন্দ্রলোকে
হবে আবার দেখা॥
লুকোচুরি খেলতে হরি হার মেনেছ আমার সনে
ধানী মিশ্র কাওয়ালি
লুকোচুরি খেলতে হরি হার মেনেছ আমার সনে।
লুকাতে চাও বৃথাই হে শ্যাম, ধরা পড় ক্ষণে ক্ষণে॥
গহন মেঘে লুকাতে চাও, অমনি রাঙা চরণ লেগে
যে পথে ধাও সে পথ ওঠে ইন্দ্রধনুর রঙে রেঙে,
চপল হাসি চমকে বেড়ায় বিজলিতে নীল গগনে॥
রবি-শশী-গ্রহ-তারা তোমার কথা দেয় প্রকাশি,
ওই আলোতে হেরি তোমার তনুর জ্যোতি মুখের হাসি।
হাজার কুসুম ফুটে ওঠে লুকাও যখন শ্যামল বনে॥
মনের মাঝে যেমনি লুকাও, মন হয়ে যায় অমনি মুনি,
ব্যথায় তোমার পরশ যে পাই, ঝড়ের রাতে বংশী শুনি,
দুষ্টু তুমি দৃষ্টি হয়ে লুকাও আমার এই নয়নে॥
শঙ্কাশূন্য লক্ষ কণ্ঠে বাজিছে শঙ্খ ওই
মার্চের সুর
শঙ্কাশূন্য লক্ষ কণ্ঠে বাজিছে শঙ্খ ওই।
পুণ্য-চিত্ত মৃত্যু-তীর্থ-পথের যাত্রী কই॥
আগে জাগে বাধা ও ভয়,
ও ভয়ে ভীত নয় হৃদয়,
জানি মোরা হবই হব জয়ী॥
জাগায়ে প্রাণে প্রাণে নব আশা,
ভাষাহীন মুখে ভাষা,
হে নবীন, আনো নব পথের দিশা,
নিশি শেষের উষা,
কেহ নাই দেশে মানুষ তোমরা বই॥
স্বর্গ রচিয়া মৃত্যুহীন –
চল ওরে কাঁচা চল নবীন,
দৃপ্ত চরণে নৃত্য দোল জাগায়ে মরুতে রে বেদুইন!
‘নাই নিশি নাই’ ডাকে শুভ্র দীপ্ত দিন!
নাই ওরে ভয় নাই,
জাগে ঊর্ধ্বে দেবী জননী শক্তিময়ী॥
শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল
লচ্ছাশাখ ত্রিতাল
শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল
শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব-জ্যোতি।
অশান্ত এ চিত করো হে সমাহিত
সদা আনন্দিত রাখো মতি॥
দুঃখ শোক সহি অসীম সাহসে,
অটল রহি যেন সম্মানে যশে,
তোমার ধ্যানের আনন্দ-রসে
নিমগ্ন রহি হে বিশ্বপতি॥
মন যেন না টলে কলকোলাহলে
হে রাজ-রাজ।
অন্তরে তুমি নাথ সতত বিরাজ!
বহে তব ত্রিলোক ব্যাপিয়া, হে গুণী,
ওংকার-সংগীত-সুর-সুরধুনী,
হে মহামৌনী, যেন সদা শুনি
সে সুরে তোমার নীরব আরতি॥
শূন্য এ-বুকে পাখি মোর আয় ফিরে আয় ফিরে আয়
ছায়ানট একতালা
শূন্য এ-বুকে পাখি মোর আয়
ফিরে আয় ফিরে আয়!
তোরে না হেরিয়া সকালের ফুল
অকালে ঝরিয়া যায়॥
তুই নাই বলে ওরে উন্মাদ
পাণ্ডুর হল আকাশের চাঁদ,
কেঁদে নদীজল করুণ বিষাদ
ডাকে, ‘আয় ফিরে আয়!’
গগনে মেলিয়া শত শত কর
খোঁজে তোরে তরু, ওরে সুন্দর!
তোর তরে বনে উঠিয়াছে ঝড়
লুটায় লতা ধুলায়।
তুই ফিরে এলে, ওরে চঞ্চল
আবার ফুটিবে বনে ফুলদল,
ধূসর আকাশ হইবে সুনীল
তোর চোখের চাওয়ায়॥
শ্মশান-কালীর নাম শুনে রে
বারোয়াঁ দাদরা
শ্মশান-কালীর নাম শুনে রে
ভয় কে পায়?
মা যে আমার শবের মাঝে
শিব জাগায়॥
আনন্দেরই নন্দিনী সে,
অমৃত নীল-কণ্ঠ-বিষে,
চরণ শোভে অরুণ আলোর
লাল জবায়॥
চার হাতে তার চার যুগেরই খঞ্জনি
নৃত্য-তালে নিত্য ওঠে রনঝনি।
অন্নদা মোর নিল তুলি
সাধ করে রে ভিক্ষা-ঝুলি,
পায় না ধ্যানে যোগীন্দ্র সেই যোগ-মায়ায়॥