তব যাবার বেলা বলে যাও মনের কথা
বারোয়াঁ লাউনি
তব যাবার বেলা বলে যাও মনের কথা।
কেন কহিতে এসে চলে যাও চাপিয়া ব্যথা॥
কেন এনেছিলে ফুল আঁচলে দিতে কাহারে,
কেন মলিন ধূলায় ছড়ালে সে ফুল অযথা॥
পরি খয়েরি শাড়ি আসিলে সাঁঝের আঁধারে
ও কি ভুল সবই ভুল, নয়নের ও বিহ্বলতা॥
তুমি পুতুল লয়ে খেলেছ বালিকা-বেলা,
বুঝি আমারে লয়ে তেমনই খেলিলে খেলা।
তব নয়নের জল সে কি ছল, জানাইয়া যাও,
এই ভুল ভেঙে দাও, সহে না এ নীরবতা॥
তরুণ অশান্ত কে বিরহী
চাঁদনি কেদারা ত্রিতাল
তরুণ অশান্ত কে বিরহী।
নিবিড় তমসায় ঘন ঘোর বরষায়
দ্বারে হানিছ কর রহি রহি॥
ছিন্ন-পাখা কাঁদে মেঘ-বলাকা,
কাঁদে ঘোর অরণ্য আহত-শাখা,
চোখে আশা-বিদ্যুৎ এলে কোন মেঘদূত,
বিধুর বঁধুর মোর বারতা বহি॥
নয়নের জলে হেরিতে না পারি
বাহিরে গগনে ঝরে কত বারি।
বন্ধ কুটিরে অন্ধ তিমিরে
চেয়ে আছি কাহার পথ চাহি।
বন্ধু গো, ওগো ঝড়, ভাঙো ভাঙো দ্বার,
তব সাথে আজি নব অভিসার,
ঝরা-পল্লব-প্রায় তুলিয়া লহো আমায়
অশান্ত ও-বক্ষে হে বিদ্রোহী॥
তরুণ-তমাল-বরন এসো শ্যামল আমার
কাফি মিশ্র ঠুংরি
তরুণ-তমাল-বরন এসো শ্যামল আমার।
ঘনশ্যাম-তুলি বুলায়ে মেঘ-দলে
এসো দুলায়ে আঁধার॥
কাঁদে নিশীথিনী তিমির-কুন্তলা
আমারই মতো সে উতলা,
এসো তরুণ দুরন্ত ভাঙি হৃদয়-দুয়ার॥
তপ্ত গগনে ঘনায়ে ঘন দেয়া,
ফুটায়ে কদম-কেয়া,
আমার নয়ন-যমুনায় এসো জাগায়ে জোয়ার॥
তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে
ভৈরবী দাদরা
তুমি ভোরের শিশির রাতের নয়ন-পাতে।
তুমি কান্না পাওয়াও কাননকে গো
ফুল-ঝরা প্রভাতে॥
তুমি ভৈরবী সুব উদাস বিধুর,
অতীত দিনের স্মৃতি সুদূর,
তুমি ফোটার আগের ঝরা মুকুল
বৈশাখী হাওয়াতে॥
তুমি কাশের ফুলের করুণ হাসি
মরা নদীর চরে,
তুমি শ্বেত-বসনা অশ্রুমতী
উৎসব-বাসরে।
তুমি মরুর বুকে পথ-হারা
গোপন ব্যথার ফল্গুধারা,
তুমি নীরব বীণা বাণীহীনা
সংগীত-সভাতে।
তোমার হাতের সোনার রাখি
ভৈরবী কাহারবা
তোমার হাতের সোনার রাখি
আমার হাতে পরালে।
আমার বিফল বনের কুসুম
তোমার পায়ে ঝরালে॥
খুঁজেছি তোমায় তারার চোখে
কত সে গ্রহে কত সে লোকে,
আজ এ তৃষিত মরুর আকাশ
বাদল-মেঘে ভরালে॥
দূর অভিমানের স্মৃতি
কাঁদায় কেন আজি গো,
মিলন-বাঁশি সহসা ওঠে
ভৈরবীতে বাজি গো!
হেনেছ হেলা, দিয়েছ ব্যথা,
মনে কেন আজ পড়ে সে কথা,
মরণ-বেলায় কেন এ গলায়
মালার মতন জড়ালে॥
তোর রূপে সই গাহন করি জুড়িয়ে গেল গা
ভাটিয়ালি কাহারবা
তোর রূপে সই গাহন করি জুড়িয়ে গেল গা।
তোর গাঁয়েরই নদীর ঘাটে বাঁধলাম এ মোর না॥
তোর চরণের আলতা লেগে
পরান আমার উঠল রেঙে,
তোর বাউরি-কেশের বিনুনিতে জড়িয়ে গেল পা॥
তোর বাঁকা ভুরু বাঁকা আঁখি বাঁকা চলন, সই,
দেখে পটে-আঁকা-ছবির মতন দাঁড়িয়ে পথে রই।
উড়ে এলি দেশান্তরী
তুই কি ডানাকাটা পরি?
তুই শুকতারাই সতিনি সই, সন্ধ্যাতারার জা॥
দশ হাতে ওই দশ দিকে মা
ভৈরবী মিশ্র দাদরা
(আগমনি)
দশ হাতে ওই দশ দিকে মা
ছড়িয়ে এল আনন্দ।
ঘরে ফেরার বাজল বাঁশি
বইছে বাতাস সুমন্দ।
আনন্দ রে আনন্দ॥
আমার মায়ের মুখের হাসি
শরৎ-আলোর কিরণরাশি
কমল-বনে উঠছে ভাসি
মায়ের গায়ের সুগন্ধ।
আনন্দ রে আনন্দ॥
উঠছে বেজে দিগ্বিদিকে ছুটির মাদল মৃদঙ্গ,
মনের আজি নাই ঠিকানা, যেন বনের কুরঙ্গ।
দেশান্তরী ছেলেমেয়ে
মায়ের কোলে এল ধেয়ে,
শিশির-নীরে এল নেয়ে
স্নিগ্ধ অকাল-বসন্ত।
আনন্দ রে আনন্দ॥
দাও শৌর্য দাও ধৈর্য হে উদার নাথ দাও দাও প্রাণ
ভজন
দাও শৌর্য দাও ধৈর্য হে উদার নাথ
দাও দাও প্রাণ।
দাও অমৃত মৃত-জনে
দাও ভীত-চিত জনে শক্তি অপরিমাণ
হে সর্বশক্তিমান॥
দাও স্বাস্থ্য দাও আয়ু
স্বচ্ছ আলো মুক্ত বায়ু,
দাও চিত্ত অ-নিরুদ্ধ দাও শুদ্ধ জ্ঞান
হে সর্বশক্তিমান॥
দাও দেহে দিব্যকান্তি
দাও গেহে নিত্য শান্তি,
দাও পুণ্য প্রেম ভক্তি মঙ্গল-কল্যাণ।
হে সর্বশক্তিমান॥
ভীতি-নিষেধের ঊর্ধ্বে স্থির
রহি যেন চির-উন্নত শির,
যাহা চাই যেন জয় করে পাই
গ্রহণ না করি দান
হে সর্বশক্তিমান॥
দূর দ্বীপবাসিনী চিনি তোমারে চিনি
‘কিউবান ডান্সের’ সুর
দূর দ্বীপবাসিনী,
চিনি তোমারে চিনি।
দারুচিনির দেশের তুমি বিদেশিনি গো,
সুমন্দভাষিণী॥
প্রশান্ত সাগরে
তুফানে ও ঝড়ে
শুনেছি তোমারই অশান্ত রাগিণী॥
বাজাও কি বুনো সুর
পাহাড়ি বাঁশিতে?
বনান্ত ছেয়ে যায়
বাসন্তী হাসিতে।
তব কবরীমূলে
নব এলাচির ফুল
দুলে কুসুম-বিলাসিনী॥
দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে
যোগিয়া আদ্ধা কাওয়ালি
দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে
আজ শরতের ভোর হাওয়ায়।
শিশির-ভেজা শিউলি ফুলের
গন্ধে কেন কান্না পায়?
সন্ধ্যাবেলার পাখির সম
মন উড়ে যায় নীড় পানে।
নয়ন-জলের মালা গাঁথে
বিরহিণী একলা, হায়।
কোন সুদূরে নওবতে কার
বাজে সানাই যোগিয়ায়,
টলমল টলিছে মন
কমল-পাতে শিশির-প্রায়।
ফেরেনি আজ ঘরে কে হায়
ঘরে যে আর ফিরবে না,
কেঁদে কেঁদে তারেই যেন
ডাকে বাঁশি, ‘ফিরে আয়!
দেখে যা-রে রুদ্রাণী মা
আনন্দ-ভৈরবী দাদরা
দেখে যা-রে রুদ্রাণী মা
হয়েছে আজ ভদ্রকালী।
শ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে
শ্মশান-মাঝে শিব-দুলালি॥
আজ শান্ত সিন্ধুতে রে
অশান্ত ঝড় থেমেছে রে,
মা-র কালো রূপ উপচে পড়ে
ছাপিয়ে ভুবন গগন-ডালি॥
আজ অভয়ার ওষ্ঠে জাগে
শুভ্র করুণ শান্ত হাসি,
আনন্দে তাই বিষাণ ফেলে
মহেন্দ্র ওই বাজায় বাঁশি।
ঘুমিয়ে আছে বিশ্ব-ভুবন
মায়ের কোলে শিশুর মতন,
পায়ের লোভে মনের বনে –
ফুল ফুটেছে পাঁচমিশালি॥