চম্পা পারুল যূথী টগর চামেলা
কালাংড়া খেমটা
চম্পা পারুল যূথী টগর চামেলা।
আর সই সইতে নারি ফুল-ঝামেলা॥
সাজায়ে বন-ডালি
বসে রই বনমালী
যারে দিই এ ফুল সেই হানে হেলাফেলা॥
কে তুমি মায়ামৃগ
রতির সতিনি গো?
ফুল নিতে আসিলে এ বনে অবেলা॥
ফুলের সাথে প্রিয়
ফুল-মালীরে নিয়ো,
তুমিও একা সই, আমিও একেলা॥
চল রে চপল তরুণ-দল বাঁধন-হারা
চল রে চপল তরুণ-দল বাঁধন-হারা।
চল অমর সমরে, চল ভাঙি কারা
জাগায়ে কাননে নব পথের ইশারা॥
প্রাণ-স্রোতের ত্রিধারা বহায়ে তোরা
ওরে চল!
জোয়ার আনি মরা নদীতে
পাহাড় টলায়ে মাতোয়ারা॥
ডাকে তোরে স্নেহভরে
‘ওরে ফিরে আয় ফিরে ঘরে!’
তারে ভোল ওরে ভোল
তোরা যে ঘর-ছাড়া॥
তাজা প্রাণের মঞ্জরি ফুটায়ে পথে
তোরা চল,
রহে কে ভুলি ছেঁড়া পুথিতে
তাদের পরানে দে রে সাড়া॥
রণ-মাদল আকাশে ঘন বাজে গুরুগুরু।
আঁধার ঘরে কে আছে পড়ে
তাদের দুয়ারে দে রে নাড়া॥
চাঁদের দেশের পথ-ভোলা ফুল চন্দ্রমল্লিকা
ভৈরবী দাদরা
চাঁদের দেশের পথ-ভোলা ফুল চন্দ্রমল্লিকা॥
রং-পরিদের সঙ্গিনী তুই,
অঙ্গে চাঁদের রূপ-শিখা॥
ঊষর ধরায় আসলি ভুলে
তুষার দেশের রঙ্গিণী,
হিমেল দেশের চন্দ্রিকা তুই
শীত-শেষের বাসন্তিকা॥
চাঁদের আলো চুরি করে
আনলি তুই মুঠি ভরে,
দিলাম চন্দ্র-মল্লিকা নাম,
তাই তোরে আদর করে।
ভঙ্গিমা তোর গরব-ভরা,
রঙ্গিমা তোর হৃদয়-হরা,
ফুলের দলে ফুলরানি তুই
তোরেই দিলাম জয়টিকা॥
জননী মোর জন্মভূমি, তোমার পায়ে নোয়াই মাথা
মিশ্র সুর একতালা
জননী মোর জন্মভূমি, তোমার পায়ে নোয়াই মাথা।
স্বর্গাদপি গরীয়সী স্বদেশ আমার ভারত-মাতা॥
তোমার স্নেহ যায় বয়ে মা শত ধারায় নদীর স্রোতে,
ঘরে ঘরে সোনার ফসল ছড়িয়ে পড়ে আঁচল হতে,
স্নিগ্ধছায়া মাটির বুকে তোমার শীতলপাটি পাতা॥
স্বর্গের ঐশ্বর্য লুটায় তোমার ধূলি-মাখা পথে,
তোমার ঘরে নাই যাহা মা, নাইকো তাহা ভূ-ভারতে।
ঊর্ধ্বে আকাশ নিম্নে সাগর গাহে তোমার বিজয়-গাথা॥
আদি জগদ্ধাত্রী তুমি জগতেরে প্রথম প্রাতে
শিক্ষা দিলে দীক্ষা দিলে করলে মানুষ আপন হাতে।
তোমার কোলের লোভে মাগো রূপ ধরে আসেন বিধাতা॥
ছেলের মুখের অন্ন কেড়ে খাওয়ালি মা যাদের ডেকে,
তারাই দিল তোর ললাটে চির-দাসীর তিলক এঁকে,
দেখে শুনে হয় মা মনে নেইকো বিচার, নেই বিধাতা॥
জাগো জাগো শঙ্খচক্রগদাপদ্ম-ধারী
ভৈরবী দাদরা
জাগো জাগো শঙ্খচক্রগদাপদ্ম-ধারী।
জাগো শ্রীকৃষ্ণ কৃষ্ণা-তিথির তিমির অপসারি॥
ডাকে বসুদেব দেবকী ডাকে,
ঘরে ঘরে, নারায়ণ, তোমাকে!
ডাকে বলরাম শ্রীদাম সুদাম
ডাকিছে যমুনা-বারি॥
হরি হে, তোমায় সজল নেত্রে
ডাকে পাণ্ডব কুরুক্ষেত্রে!
দুঃশাসন সভায় দ্রৌপদী
ডাকিছে লজ্জাহারী॥
মহাভারতের হে মহাদেবতা
জাগো জাগো, আনো আলোক-বারতা!
ডাকিছে গীতার শ্লোক অনাগতা
বিশ্বের নর-নারী॥
জাগো দুস্তর পথের নব যাত্রী
মার্চের সুর
জাগো দুস্তর পথের নব যাত্রী
জাগো জাগো!
ওই পোহাল তিমির রাত্রি।
জাগো জাগো॥
দ্রিম দ্রিম দ্রিম রণ-ডঙ্কা
শোনো বলে,
নাহি শঙ্কা!
আমাদের সঙ্গে নাচে রণ-রঙ্গে
দনুজদলনী বরাভয়দাত্রী॥
অসম্ভবের পথে আমাদের অভিযান,
যুগে যুগে করি মোরা মানুষেরে মহীয়ান।
আমরা সৃজিয়া যাই
নূতন যুগ ভাই,
আমরা নবতম ভারত-বিধাত্রী॥
সাগরে শঙ্খ ঘন ঘন বাজে,
রণ-অঙ্গনে চলো কুচকাওয়াজে
বজ্রের আলোকে মৃত্যুর মুখে
দাঁড়াব নির্ভীক উগ্র সুখে।
ভারত-রক্ষী মোরা নব সান্ত্রি॥
ঝরাফুল-বিছানো পথে
পিলু লাউনি
ঝরাফুল-বিছানো পথে
এসো বিজনবাসিনী।
জ্যোৎস্নায় ছড়ায়ে হাসি
এসো সুচারুহাসিনী॥
এসো জড়ায়ে তব তনুতে
গোধূলি রামধনুতে
পাপিয়া-পিক-কূজনে
গাহিয়া মধুভাষিণী॥
ছন্দ-দোদুল গতি
এসো নোটন কপোতী,
বহায়ে মনের মরুতে
আনন্দ-মন্দাকিনী॥
ঝরে বারি গগনে ঝুরুঝুরু
দেশ তেতালা
ঝরে বারি গগনে ঝুরুঝুরু।
জাগি একা ভয়ে ভয়ে
নিদ নাহি আসে,
ভীরু হিয়া কাঁপে দুরুদুরু॥
দামিনী ঝলকে, ঝনকে ঘোর পবন
ঝরে ঝরঝর নীল ঘন।
রহি রহি দূরে কে যেন কৃষ্ণা মেয়ে
মেঘ পানে ঘন হানে ভুরু॥
অতল তিমিরে বাদলের বায়ে
জীর্ণ কুটিরে জাগি দীপ নিভায়ে।
ঘন দেয়া ডাকে গুরুগুরু॥
ঝড়-ঝঞ্ঝায় ওড়ে নিশান ঘন-বজ্রে বিষাণ বাজে
মার্চ সংগীত
ঝড়-ঝঞ্ঝায় ওড়ে নিশান ঘন-বজ্রে বিষাণ বাজে।
জাগো জাগো তন্দ্রা-অলস রে, সাজো সাজো রণ-সাজে॥
দিকে দিকে ওঠে গান, অভিযান অভিযান!
আগুয়ান আগুয়ান হও ওরে আগুয়ান
ফুটায়ে মরুতে ফুল-ফসল।
জড়ের মতন বেঁচে কী ফল?
কে রবি পড়ে লাজে॥
বহে স্রোত জীবন-নদীর
চল চঞ্চল অধীর,
তাহে ভাসিবি কে আয়,
দূর সাগর ডেকে যায়।
হবি মৃত্যু-পাথার পার
সেথা অনন্ত প্রাণ বিরাজে॥
পাঁওদল রণে চল, চল রণে চল
মরুতে ফুটাতে পারে ওই পদতল
প্রাণ–শতদল।
বিঘ্ন-বিপদে করি সহায়
না-জানা-পথের যাত্রী আয়,
স্থান দিতে হবে আজি সবায়
বিশ্ব-সভা-মাঝে॥
ডেকো না আর দূরের প্রিয়া
ভীমপলশ্রী মিশ্র দাদরা
ডেকো না আর দূরের প্রিয়া
থাকিতে দাও নিরালা।
কী হবে হায় বিদায় – বেলায়
এনে সুধার পিয়ালা॥
সুখের দেশের পাখি তুমি
কেন এলে এ বনে,
আজ এ বনে জাগে শুধু
কণ্টকের স্মৃতির জ্বালা॥
মরুর বুকে কী ঘোর তৃষা
বুঝিবে কি মেঘ-পরি,
মিটিবে না আমার তৃষা
ওই আঁখি-জলে বালা।
আঁধার ঘরের আলো তুমি
আমি রাতের আলেয়া,
ভোলো আমায় চিরতরে,
ফিরিয়া নাও এ ফুলমালা॥