আমি ময়নামতীর শাড়ি দেব চলো আমার বাড়ি
ভাটিয়ালি কাহারবা
আমি ময়নামতীর শাড়ি দেব
চলো আমার বাড়ি।
ওগো ভিনগেরামের নারী॥
সোনার ফুলের বাজু দেব চুড়ি বেলোয়ারি।
ওগো ভিনগেরামের নারী॥
বৈঁচি ফলের পৈঁচি দেব, কলমিলতার বালা,
গলায় দেব টাটকা-তোলা ভাঁট ফুলেরই মালা।
রক্ত-শালুক দিব পায়ে পরবে আলতা তারই।
ওগো ভিনগেরামের নারী॥
হলুদ-চাঁপার বরন কন্যা! এসো আমার নায়
সর্ষে ফুলের সোনার রেণু মাখাব ওই গায়।
ঠোঁটে দিব রাঙা পলাশ মহুয়া ফুলের মউ,
বকুল-ডালে ডাকবে পাখি, ‘বউ গো কথা কও!’
আমি সব দিব গো, যা পারি আর যা দিতে না পারি।
ওগো ভিনগেরামের নারী॥
উত্তরীয় লুটায় আমার
হৈমন্তী তেওড়া
উত্তরীয় লুটায় আমার –
ধানের খেতে হিমেল হাওয়ায়।
আমার চাওয়া জড়িয়ে আছে
নীল আকাশের সুনীল চাওয়ায়॥
ভাঁটির শীর্ণা নদীর কূলে
আমার রবি-ফসল দুলে,
নবান্নেরই সুঘ্রাণে মোর
চাষির মুখে টপ্পা গাওয়ায়॥
এ কী অপরূপ রূপে মা তোমায়
বেহাগ মিশ্র কাওয়ালি
এ কী অপরূপ রূপে মা তোমায়
হেরিনু পল্লি-জননী।
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে
ঝলমল করে লাবণি॥
রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল,
আম-কাঁঠালের মধুর গন্ধে জ্যৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।
ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল লয়ে অশনি॥
কেতকী কদম যূথিকা কুসুমে বর্ষায় গাঁথ মালিকা,
পথে অবিরল ছিটাইয়া জল খেল চঞ্চলা বালিকা।
তড়াগে পুকুরে থইথই করে শ্যামল শোভার নবনী॥
শাপলা শালুকে সাজাইয়া সাজি শরতে শিশিরে নাহিয়া,
শিউলি-ছোপানো শাড়ি পরে ফের আগমনি-গীতি গাহিয়া।
অঘ্রানে মা গো আমন ধানের সুঘ্রাণে ভরে অবনি॥
শীতের শূন্য মাঠে তুমি ফের উদাসী বাউল সাথে মা,
ভাটিয়ালি গাও মাঝিদের সাথে, কীর্তন শোন রাতে মা।
ফাল্গুনে রাঙা ফুলের আবিরে রাঙাও নিখিল ধরণি॥
এল ওই বনান্তে পাগল বসন্ত
পরজ–বসন্ত তেতালা
এল ওই বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে,
চঞ্চল তরুণ দুরন্ত॥
বাঁশিতে বাজায় সে বিধুর
পরজ-বসন্তের সুর,
পাণ্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত॥
কিশলয়-পর্ণে অশান্ত
ওড়ে তার অঞ্চল-প্রান্ত,
পলাশ-কলিতে তার ফুলধনু লঘুভার
ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত॥
এলোমেলো দখিনা মলয় রে
প্রলাপ বকিছে বনময় রে,
অকারণ মনোমাঝে বিরহের বেণু বাজে
জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত॥
এল এল রে বৈশাখী ঝড়
ইমন মিশ্র কাহারবা
এল এল রে বৈশাখী ঝড়।
ওই বৈশাখী ঝড় এল এল মহীয়ান সুন্দর।
পাংশু মলিন ভীত কাঁপে অম্বর, চরাচর, থরথর॥
ঘন বন-কুন্তলা বসুমতী
সভয়ে করে প্রণতি,
সভয়ে নত চরণে ভীতা বসুমতী।
সাগর-তরঙ্গ-মাঝে
তারই মঞ্জীর যেন বাজে,
বাজে রে পায়ে গিরি-নির্ঝর –
ঝরঝর ঝরঝর॥
ধূলি-গৈরিক নিশান দোলে
ঈশান-গগন-চুম্বী,
ডম্বরু ঝল্লরি ঝাঁঝর ঝনঝন বাজে,
এল ছন্দ বন্ধন-হারা
এল মরু-সঞ্চর,
বিজয়ী বীরবর॥
এল ফুল-দোল ওরে এল ফুল-দোল
ভৈরবী – পিলু কাওয়ালি
এল ফুল-দোল ওরে এল ফুল-দোল
আনো রং-ঝারি।
পলাশ-মঞ্জরি পরি অলকে
এসো গোপ-নারী॥
ঝরিছে আকাশে রঙের ঝরনা,
শ্যামা ধরণি হল আবির-বরনা,
ত্যজি গৃহ-কাজ এসো চল-চরণা
ডাকে গিরিধারী॥
পরাগ-আবির হানে বনবালা
সুরের পিচকারি হানিছে কুহু,
রঙিন স্বপন ঝরে রাতের ঘুমে
অনুরাগ-রং ঝরে
মনে মুহুমুহু।
রাঙে গিরি-মল্লিকা রঙিন বর্ণে,
রাতের আঁচল ভরে জোছনার স্বর্ণে,
কুলের কালি সখী দেবে ধুয়ে
রাঙা পিচকারি॥
এল শ্যামল কিশোর
কাজরি লাউনি
এল শ্যামল কিশোর,
তমাল-ডালে বাঁধো ঝুলনা।
সুনীল শাড়ি পরো ব্রজনারী
পরো নব নীপ-মালা অতুলনা।
তমাল-ডালে বাঁধো ঝুলনা॥
ডাগর চোখে কাজল দিয়ো,
আকাশি-রং পোরো উত্তরীয়,
নব-ঘন-শ্যামের বসিয়া বামে –
দুলে দুলে বোলো, ‘বঁধু, ভুলো না!’
তমাল-ডালে বাঁধো ঝুলনা॥
নৃত্য-মুখর আজি মেঘলা দুপুর,
বৃষ্টির নূপুর বাজে টুপুর টুপুর।
বাদল-মেঘের তালে বাজিছে বেণু,
পাণ্ডুর হল শ্যাম মাখি কেয়া-রেণু,
বাহুতে দোলনায় বাঁধিবে শ্যামরায়
বোলো, ‘হে শ্যাম, এ বাঁধন খুলো না!’
তমাল-ডালে বাঁধো ঝুলনা॥
এসো কল্যাণী চির-আয়ুষ্মতী
ভজন
এসো কল্যাণী, চির-আয়ুষ্মতী!
তব নির্মল করে জ্বালো ভবন-প্রদীপ
জ্বালো জ্বালো জ্বালো সতী॥
মঙ্গল-শঙ্খ বাজাও বাজাও অয়ি সুমঙ্গলা!
সকল অকল্যাণ সকল অমঙ্গল করো দূর শুভ-সমুজ্জ্বলা!
এসো মাটির কুটিরে দূর আকাশের অরুন্ধতী॥
এসো লক্ষ্মী গৃহের, আঁকো অঙ্গনে সুমঙ্গল আলপনা,
তব পুণ্য-পরশ দিয়ে ধূলি-মুঠিরে করো গো সোনা।
তুমি দেবতার শুভ বর মূর্তিমতী॥
স্নান-শুদ্ধা তুমি পূজা-দেউলে যবে কর আরতি,
আনত আকাশ যেন তব চরণে করে প্রণতি।
তব কুণ্ঠিত গুণ্ঠন-তলে
চির-শান্তির ধ্রুবতারা জ্বলে,
সংসার-অরণ্যে ধ্যান-মগ্না তুমি তপতী স্নিগ্ধজ্যোতি॥
ও কালো বউ যেয়ো না আর যেয়ো না আর
পাহাড়ি কাহারবা
ও কালো বউ! যেয়ো না আর যেয়ো না আর
জল আনিতে বাজিয়ে মল।
তোমায় দেখে শিউরে ওঠে
কাজলা দিঘির কালো জল॥
দেখে তোমার কালো আঁখি
কালো কোকিল ওঠে ডাকি,
তোমার চোখের কাজল মাখি
হয় সজল ওই মেঘ-দল॥
তোমার কালো রূপের মায়া
দুপুর রোদে শীতল ছায়া,
কচি অশথ পাতায় টলে
ওই কালো রূপ টলমল॥
ভাদর মাসের ভরা ঝিলে
তোমার রূপের আদল মিলে,
তোমার তনুর নিবিড় নীলে
আকাশ করে ঝলমল॥