০৭. আমি জানি তব মন, আমি বুঝি তব ভাষা
কঠিন গিরিমাটির তলে ফল্লুধারার মতো উদাসীন পুরুষের গৈরিক বসনের অন্তরালে যে বেদনার ঝরনা-ধারা, তাকেই লক্ষ করে গেয়ে ওঠে নিবেদিতা নারী–
(গান)
আমি জানি তব মন, আমি বুঝি তব ভাষা।
(তব) কঠিন হিয়া-তলে কী গভীর ভালোবাসা॥
ওগো উদাসীন আমি জানি তব ব্যথা
আহত পাখির বুকে বাণ বিঁধে কোথা,
কোন অভিমানে ভুলিয়াছ তুমি
ভালোবাসিবার আশা॥
তুমি কেন হানো অবহেলা অকারণে আপনাকে।
বঁধু যে হৃদয়ে থাকে বিষ, সেই হৃদয়ে অমৃত থাকে।
(তব) যে বুকে জাগে প্রলয়-ঝড়ের জ্বালা,
(আমি) দেখেছি যে সেথা সজল মেঘের মালা,
ওগো ক্ষুধাতুর! আমাকে আহুতি দিলে
মিটিবে কি তব আগুনের পিপাসা॥
০৮. যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
এই তীর্থধামে মিলনের ব্রজে বেজে ওঠে মাথুরের বিদায়-বাঁশি। যে-বিরহ আনে অশ্রু, সেই বিরহই জ্বালায় আগুন। যে-মেঘ ফুল ফোটায়, সেই মেঘেই থাকে অশনি। বিরহের তপস্যা যে-পুরুষকে করেছে উদাসীন সন্ন্যাসী, মিলনের বিলাস-কুঞ্জে সে তার প্রিয়ার মৃত্যু কামনা করতে পারে না। তাই নির্মম হয়ে সে চলে যায় নিরুদ্দেশের পথে। পথের প্রান্তে লুটিয়ে কাঁদে তার বিরহিণী প্রিয়ার মতো তার গানের সুর–
(গান)
যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
কেন মনে রাখ তারে?
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে॥
আমি গান গাই আপনার দুখে,
তুমি কেন আসি দাঁড়াও সুমুখে,
আলেয়ার মতো ডাকিয়ো না আর
নিশীথ-অন্ধকারে॥
দয়া করো মোরে দয়া করো,
আর আমারে লইয়া খেলো না নিঠুর খেলা;
শত কাঁদিলেও ফিরিবে না আর
সেই শুভ লগনের বেলা।
আমি ফিরি পথে, তাহে কার ক্ষতি,
তব চোখে কেন সজল মিনতি?
আমি কি ভুলেও কোনোদিন এসে
দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে॥
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে