এইরূপে বিক্রমাদিত্যকে সতর্ক করিয়া দিয়া, বেতাল, সেই মৃত শরীর হইতে বহির্নিঃসরণ। পুরঃসর, স্বস্থানে প্রস্থান করিল। রাজা, সেই শব লইয়া, সন্ন্যাসীর সন্নিধানে উপস্থিত হইলে, তিনি সাতিশয় সন্তোষপ্ৰদৰ্শন ও রাজার অশেষপ্রকার প্রশংসাকীর্তন করিতে লাগিলেন; অনন্তর, চন্দ্ৰভানুর মৃত দেহে জীবনদানপূর্বক, বলিপ্ৰদান করিলেন; এবং, পূজার অন্যান্য অঙ্গ যথাবৎ সমাপ্ত করিয়া, রাজাকে বলিলেন, মহারাজ! সাষ্টাঙ্গ প্ৰণাম, কর; তোমার প্রতাপবৃদ্ধি ও অভীষ্টসিদ্ধি হইবেক। রাজা, বেতালদত্ত উপদেশ অনুসারে, কৃতাঞ্জলি হইয়া, অতি বিনীতভাবে আবেদন করিলেন, মহাশয়! আমি সাষ্টাঙ্গ প্ৰণাম করিতে জানি না; আপনি গুরু; কি প্রকারে ওরূপ প্ৰণাম করিতে হয়, কৃপা করিয়া দেখাইয়া দিউন। যোগী, রাজাকে সাষ্টাঙ্গপ্ৰণাম শিখাইবার নিমিত্ত, যেমন ভূতলে দণ্ডবৎ পতিত হইলেন, অমনি রাজা, বেতালের উপদেশ অনুসারে, খড়্গাঘাত দ্বারা, তাহার শিরশ্ছেদন করিলেন।
দেবতারা, এই ব্যাপার দর্শনে সাতিশয় পরিতুষ্ট হইয়া, দুন্দভিধ্বনি ও পুষ্পবৃষ্টি করিতে লাগিলেন। দেবরাজ, দেবলোক হইতে অবতরণপূর্বক, রাজাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, মহারাজ! আমি তোমার সৌভাগ্যদর্শনে সাতিশয় প্রীত হইয়াছি, বরপ্রার্থনা কর। রাজা, অনিমিষ সহস্র নয়নে অলঙ্কৃত কলেবর দর্শনে, দেবরাজ স্থির করিয়া, আপনাকে চরিতার্থ বোধ করিলেন; এবং বলিলেন, আপনকার প্ৰসাদে, পৃথিবীতে আমার কোনও প্রার্থয়িতব্য নাই। এক্ষণে, এইমাত্র প্রার্থনা করি, যেন আমার এই বৃত্তান্ত সমস্ত সংসারে প্রসিদ্ধ হয়। ইন্দ্ৰ কহিলেন, মহারাজ! যাবৎ চন্দ্র, সূৰ্য, পৃথিবী, ও আকাশমণ্ডল বিদ্যমান থাকিবেক, তাবৎকাল পর্যন্ত, তোমার এই বৃত্তান্ত ধরাতালে প্ৰসিদ্ধ থাকিবেক।
এই রূপে রাজাকে বরপ্ৰদান করিয়া, দেবরাজ দেবালোকে প্ৰতিগমন করিলেন। অনন্তর রাজা, মন্ত্রপ্রয়োগপূর্বক, দুই মৃতদেহ তৈলকটাহে নিক্ষিপ্ত করিবামাত্র, দুই বিকটাকার বীরপুরুষ তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইল; এবং কৃতাঞ্জলি হইয়া নিবেদন করিল, মহারাজ! কি আজ্ঞা হয়। রাজা কহিলেন, আমি যখন যখন স্মরণ করিব, তোমরা আমার নিকটে উপস্থিত হইবে। তাহারা, যে আজ্ঞা মহারাজ! বলিয়া, প্রস্থান করিল। রাজা বিক্রমাদিত্যও, সর্বপ্রকারে চরিতার্থ হইয়া, নিরতিশয় হৃষ্ট চিত্তে, রাজধানী প্রতিগমনপূর্বক, অপ্রতিহত প্রভাবে রাজ্যশাসন ও প্রজাপলিন করিতে লাগিলেন।