বেতাল পঞ্চবিংশতি – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা একটি গল্পগ্রন্থ। বেতাল পঞ্চবিংশতি বা বেতাল পঁচিশি হচ্ছে পঁচিশটি ছোট গল্প নিয়ে গঠিত একটি গ্রন্থমালা। বইটির ২৫ টি গল্পে রাজা বিক্রমাদিত্য এবং বেতাল নামক এক অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাণীর মধ্যে গল্প এবং যুক্তির খেলা চলে। তাহলে আর দেরি না করে পড়তে শুরু করুণ ২৫ টি বিখ্যাত বেতাল উপাখ্যান।
বেতাল পঞ্চবিংশতি বইয়ের বিবরণঃ
- বইয়ের নামঃ বেতাল পঞ্চবিংশতি
- লেখকের নামঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
- প্রকাশনাঃ অন্নপূর্ণা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ প্রবন্ধ
০০. বিজ্ঞাপন ও উপক্ৰমণিকা
বেতাল পঞ্চবিংশতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত প্রথম গ্রন্থ৷ ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর লল্লুলাল রচিত হিন্দি “বেতাল পচীসী” গ্রন্থের আলোকে এই গ্রন্থ রচনা করেন৷ আপাতদৃষ্টিতে অনুবাদ মনে হলেও তিনি হুবহু অনুবাদ না করে মূল গ্রন্থের আলোকে এটি রচনা করেন৷ বেতাল পঞ্চবিংশতি তাঁর প্রথম গ্রন্থ হলেও এই গ্রন্থে শক্তিশালী গদ্যের লক্ষণ সুষ্পষ্ট ছিল৷ বিদ্যাসাগর মহাশয় গ্রন্থের বিজ্ঞাপনে রচনার হেতু উল্লেখ করে লেখেন— ‘কালেজ অব ফোর্ট উইলিয়ম নামক বিদ্যালয়ে, তত্ৰত্য ছাত্ৰগণের পাঠার্থে, বাঙ্গালা ভাষায় হিতোপদেশ নামে যে পুস্তক নির্দিষ্ট ছিল, তাহার রচনা অতি কদৰ্য্য। বিশেষতঃ, কোনও কোনও অংশ এরূপ দুরূহ ও অসংলগ্ন যে কোনও ক্রমে অর্থবোধ ও তাৎপর্যগ্ৰহ হইয়া উঠে না। তৎপরিবর্তে পুস্তকান্তর প্রচলিত করা উচিত ও আবশ্যক বিবেচনা করিয়া, উক্ত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মহামতি শ্ৰীযুত মেজর জি. টি. মার্শল মহোদয় কোনও নূতন পুস্তক প্রস্তুত করিতে আদেশ দেন। তদনুসারে আমি, বৈতালপচীসীনামক প্রসিদ্ধ হিন্দী পুস্তক অবলম্বন করিয়া, এই গ্রন্থ লিখিয়াছিলাম।’
————-
দ্বিতীয় বারের বিজ্ঞাপন
কালেজ অব্ ফোর্ট উইলিয়ম নামক বিদ্যালয়ে, তত্ৰত্য ছাত্ৰগণের পাঠার্থে, বাঙ্গালা ভাষায় হিতোপদেশ নামে যে পুস্তক নির্দ্দিষ্ট ছিল, তাহার রচনা অতি কদৰ্য্য। বিশেষতঃ, কোনও কোনও অংশ এরূপ দুরূহ ও অসংলগ্ন যে কোনও ক্রমে অর্থবোধ ও তাৎপর্য্যগ্ৰহ হইয়া উঠে না। তৎপরিবর্ত্তে পুস্তকান্তর প্রচলিত করা উচিত ও আবশ্যক বিবেচনা করিয়া, উক্ত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মহামতি শ্ৰীযুত মেজর জি. টি. মার্শল মহোদয় কোনও নূতন পুস্তক প্রস্তুত করিতে আদেশ দেন। তদনুসারে আমি, বৈতালপচীসীনামক প্রসিদ্ধ হিন্দী পুস্তক অবলম্বন করিয়া, এই গ্রন্থ লিখিয়াছিলাম।
যৎকালে প্ৰথম প্রচারিত হয়, আমার এমন আশা ছিল না, বেতালপঞ্চবিংশতি সৰ্ব্বত্র পরিগৃহীত হইবেক। কিন্তু, সৌভাগ্যক্রমে, বাঙ্গালা ভাষার অনুশীলনকারী ব্যক্তিমাত্রেই আদরপূর্বক গ্ৰহণ করিয়াছেন, এবং এতদ্দেশীয় প্রায় সমুদায় বিদ্যালয়েই প্রচলিত হইয়াছে। ফলতঃ, দুই বৎসরের অনধিক কাল মধ্যেই প্রথম মুদ্রিত সমস্ত পুস্তক নিঃশেষ রূপে পৰ্য্যবসিত হয়।
প্রায় সংবৎসর অতিক্রান্ত হইল, পুস্তকের অসদ্ভাব হইয়াছে। কিন্তু, কোনও কোনও কারণবশতঃ, আমি পুনর্ম্মুদ্রাকরণে এ পর্য্যন্ত পরাঙ্মুখ ছিলাম। পরিশেষে, গ্রাহকমণ্ডলীর আগ্রহাতিশয় দর্শনে, দ্বিতীয় বার মুদ্রিত ও প্রচারিত করিলাম। যে যে স্থান কোনও অংশে অপরিশুদ্ধ ছিল, পরিশোধিত হইয়াছে, এবং অশ্লীল পদ, বাক্য, ও উপাখ্যানভাগ পরিত্যক্ত হইয়াছে। এক্ষণে বেতালপঞ্চবিংশতি পূর্ববৎ সর্বত্র পরিগৃহীত হইলে শ্রম সফল বোধ করিব।
শ্ৰীঈশ্বরচন্দ্ৰ শর্ম্মা
কলিকাতা।
১০ই ফাল্গুন। সংবৎ ১৯০৬।
————–
দশম সংস্করণের বিজ্ঞাপন
বেতালপঞ্চবিংশতি দশম বার প্রচারিত হইল। এই পুস্তক, এত দিন, বাঙ্গালা ভাষার প্রণালী অনুসারে, মুদ্রিত হইয়াছিল; সুতরাং, ইঙ্গরেজী পুস্তকে যে সকল বিরামচিহ্ন ব্যবহৃত হইয়া থাকে, পূর্ব পূর্ব সংস্করণে সে সমুদয় পরিগৃহীত হয় নাই। এই সংস্করণে সে সমস্ত সন্নিবেশিত হইল।
১৯০৩ সংবতে, বেতালপঞ্চবিংশতি প্ৰথম প্রচারিত হয়। ২৫ বৎসর অতীত হইলে, মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জামাতা, শ্ৰীযুত বাবু যোগেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এম. এ., তদীয় জীবনচরিত প্রচারিত করিয়াছেন। ঐ পুস্তকের ৪২ পৃষ্ঠায় লিখিত হইয়াছে—
বিদ্যাসাগরপ্রণীত বেতালপঞ্চবিংশতিতে অনেক নুতন ভাব ও অনেক সুমধুর বাক্য তর্কালঙ্কার দ্বারা অন্তর্নিবেশিত হইয়াছে। ইহা তর্কালঙ্কার দ্বারা এত দূর সংশোধিত ও পরিমার্জিত হইয়াছিল যে বোমাণ্ট ও ফ্লেচরের লিখিত গ্রন্থগুলির ন্যায়। ইহা উভয় বন্ধুর রচিত বলিলেও বলা যাইতে পারে।
যোগেন্দ্ৰ বাবু, কি প্রমাণ অবলম্বনপূর্বক, এরূপ অপ্রকৃত কথা লিখিয়া প্রচারিত করিলেন, বুঝিয়া উঠা কঠিন। আমি বেতালপঞ্চবিংশতি লিখিয়া, মুদ্রিত করিবার পূর্বে, শ্ৰীযুত গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ও মদনমোহন তর্কালঙ্কারকে শুনাইয়াছিলাম। তাঁহাদিগকে শুনাইবার অভিপ্ৰায় এই যে, কোনও স্থল অসঙ্গত বা অসংলগ্ন বোধ হইলে, তাঁহারা স্ব স্ব অভিপ্ৰায় ব্যক্ত করিবেন; তদনুসারে, আমি সেই সেই স্থল পরিবর্ত্তিত করিব। আমার বিলক্ষণ স্মরণ আছে, কোনও কোনও উপাখ্যানে একটি স্থলও তাঁহাদের অসঙ্গত বা অসংলগ্ন বোধ হয় নাই, সুতরাং, সেই সেই উপাখ্যানের কোনও স্থলেই কোনও প্রকার পরিবর্ত্তন করিবার আবশ্যকতা ঘটে নাই। আর, যে সকল উপাখ্যানে তাঁহারা তদ্রূপ অভিপ্ৰায় প্ৰকাশ করিয়াছিলেন, সেই সেই উপাখ্যানে, স্থানে স্থানে, দুই একটি শব্দ মাত্র পরিবর্ত্তিত হইয়াছিল। বিদ্যারত্ন ও তর্কালঙ্কার ইহার অতিরিক্ত আর কিছুই করেন নাই। সুতরাং, “বেতালপঞ্চবিংশতি তর্কালঙ্কার দ্বারা এত দূর সংশোধিত ও পরিমাজিত হইয়াছিল যে ইহা উভয় বন্ধুর রচিত বলিলেও বলা যাইতে পারে”; যোগেন্দ্র বাবুর এই নির্দেশ, কোনও মতে, সঙ্গত বা ন্যায়ানুগত হয় নাই। শ্ৰীযুত গিরিশচন্দ্ৰ বিদ্যারত্ন অদ্যাপি বিদ্যমান আছেন। তিনি এক্ষণে সংস্কৃত কলেজে সংস্কৃত সাহিত্যশাস্ত্রের অধ্যাপক। এ বিষয়ে, তিনি, আমার জিজ্ঞাসার উত্তরে, যে পত্র লিখিয়াছেন, ঐ উত্তরপত্র, আমার জিজ্ঞাসাপত্রের সহিত, নিম্নে নিবেশিত হইতেছে।