‘অনুমতি দেয়া হল। আর আইডেন্টের বাকিটুকু?
‘অপশনাল। আপনি এটাকে খালি রাখতে পারেন। বর্তমান কাজ বা আগ্রহ যুক্ত করে দিতে পারেন- গ্লোবাল বা টার্গেটেড পার্সোনাল মেসেজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
কিছু কিছু ব্যাপার, জানে পোল, হাজার বছরেও বদলায় না। ঐসব টার্গেটেড’ মেসেজের গোপনীয়তাটা এখনো বদলে যাবে না।
জানতে হবে, এত নিরাপত্তা আর একীভূত অবস্থায় মানুষের নৈতিকতা কিছুটা সেরেছে কিনা।
তার আগে ডক্টর ওয়ালেসের সাথে তাকে আরো মিশতে হবে।
৪. দৃষ্টি যায় দূরে
ফ্র্যাঙ্ক- প্রফেসর এ্যান্ডারসন মনে করেন তোমার শরীরে একটু বল ফিরে এসেছে। ইচ্ছা হলে পায়ে দিয়ে হেঁটে যেতে পার কিছুটা।
‘খুব ভাল লাগল কথাটা শুনে। তুমি কি ‘স্টির ক্রেজি’র মানেটা জান?”
না, কিন্তু আন্দাজ করে নিতে পারি।
লো গ্র্যাভিটিতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে পেপাল যে ঠিক ঠিক পা তুলে ফেলতে পারছে। জি’র অর্ধেক, আন্দাজ করে সে। খুব একটা সমস্যা হবে না এখানে। পথে দেখা হয়ে গেল অনেকের সাথে। কেউ পরিচিত নয়। কিন্তু তাদের হাসির ভঙ্গি, মুখের ভাব পরিচিত পরিচিত। ভেবে নেয় পোল, আমি নিশ্চয়ই পৃথিবীর সেলিব্রিটিদের মধ্যে কেউকেটা টাইপের একজন হয়ে গেছি ইতিমধ্যে। বাকি জীবন নিয়ে কী করব সে সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে ব্যাপারটা সাহায্য করবে আমাকে। অন্তত
আরো একটা শতাব্দি, যদি এ্যান্ডারসন…
পুরো করিডোরটায় কোনো কিছু নেই, একটু পর পর শুধু দরজায় নাম্বার দেয়া, প্রতিটায় সেই চিরাচরিত রিকগ প্যানেল। ইন্দ্রার পিছনে পিছনে প্রায় দুশো মিটার এগিয়ে গেল পোল। থমকে গেল হঠাৎ করে ব্যাপারটা তার কাছে একেবারেই অপরিচিত।
‘এই স্পেস স্টেশন নিশ্চয়ই ইয়া বড় বিস্ময় লুকাতে পারল না সে। জবাবে মোহনীয় এক হাসি দিল ইন্দ্রা।
‘তোমাদের সময়ে কি একটা কথা প্রচলিত ছিল না, ‘কিছুই এখনো দেখনি বৎস! ইউ এই সিন এনিথিং ইয়েট।’
“নাথিং,” ‘ শুধরে দিল সে, অন্যমনস্কভাবে। বিশাল এ সৃষ্টির সবটুকু খতিয়ে দেখার একটা ইচ্ছা মনে ঘাপটি মেরে আছে। অন্য সব চিন্তা সরে যাচ্ছে দূরে। তার মনে বড়জোর ডজনখানেক সিট ওয়ালা একটা স্পেস স্টেশনের কথা আসে ।
‘অবজার্ভেশন লাউঞ্জ থ্রি, আদেশ দিল ইন্দ্রা, সাথে সাথে চলে গেল তারা টার্মিনাল থেকে।
বিরাট এক রিস্টব্যান্ডে সময় দেখছে পোল; এখনো এর মাথামুণ্ডু খুব একটা বুঝে উঠতে পারেনি। একটা ব্যাপারে একটু আশ্চর্য হয় সে, পুরো পৃথিবীর সময় এখন এক। টাইম জোনের জটিল ব্যাপারস্যাপারগুলো ঝেটিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। গ্লোবাল কম্যুনিকেশনের পথে এ এক অন্তরায়। সেই একবিংশ শতাব্দিতে এ নিয়ে জোর শোরগোল উঠেছিল। বলা হত সোলার বা সৌর সময়ের বদলে সাইডরিয়েল টাইমের প্রবর্তন করতে হবে। তখন, সূর্য চলবে ঘড়ির কাঁটা ধরে।
যাই হোক, হালে পানি পায়নি সূর্যের একই সময় প্রস্তাবটা। ক্যালেন্ডারের হিসাব বদলে দেয়ার প্রস্তাবও মানা হয়নি। সবাই মেনে নিয়েছিল, টেকনোলজি আরো এগিয়ে যাক, তখন সেসব নিয়ে মাথা ঘামানো যাবে। কোনো একদিন, অবশ্যই, ঈশ্বরের ছোটখাট ভুলগুলো শুধরে নেয়া হবে পৃথিবীর কক্ষপথের সামান্য যে কটিটা তিনি রেখেছিলেন আবহমান কাল থেকে, সেটাকে সারিয়ে নেয়া হবে… তখন, মানুষ বারো মাসে বছর হিসাব করবে, প্রতি মাসে দিন থাকবে কাঁটায় কাঁটায় ত্রিশটা….
গতি আর পেরিয়ে যাওয়া সময়ের হিসাবের সাথে সাথে পোল বুঝতে পারে যানটা তাদের নিয়ে কমসে কম তিন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসেছে থেমেছে একটা দরজার সামনে। হাট হয়ে খুলে গেল দুয়ার, অটোভয়েস বলে উঠল, হ্যাভ এ গুড ভিউ। আজ পঁয়ত্রিশ ভাগ মেঘ আছে।’
অবশেষে, ভাবে পোল, আমরা আউটার ওয়ালের কাছাকাছি চলে আসছি। কিন্তু বিধি বাম, সেখানেও লুকিয়ে আছে রহস্য। এই এতটা পথ পেরিয়ে আসার পরও গ্র্যাভিটির হেরফের হয়নি, দিকের বদলতো দূরের কথা। এখনো ভাবতেই পারছে না একটা ঘূর্ণায়মান মহাকাশ স্টেশনের জি ভেক্টরের কোনো পরিবর্তনই হয়নি এতটা দূরত্ব পেরিয়ে আসার পরও… নাকি কোনো গ্রহের উপর আছে। কিন্তু সৌরভুবনের বাসযোগ্য যে কোনো গ্রহের অভিকর্য তো অনেক কম হওয়ার কথা।
খুলে গেল টার্মিনালের আউটার ডোের। পোল একটা ছোট এয়ারলকে ঢুকছে। নিশ্চয়ই এটা স্পেস, কোনো গ্রহ নয়। কিন্তু স্পেসস্যুট কোথায়? ব্যগ্রভাবে চারদিকে তাকায় সে, শূন্যতার এত কাছে আসাটা তার স্বভাবের সাথে ঠিক মেলে না একবার যা অভিজ্ঞতা হয়েছে… দুরস্ত।
‘এইতো, চলে এসেছি প্রায়,’ আশ্বস্ত করার ভঙ্গি ইন্দ্রার কণ্ঠে।
খুলে গেল শেষ দুয়ার। মহাশূন্যের স্তব্ধ করা চির তিমিরে চোখ পড়ল সাথে সাথে। একটা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা। জানালাটা উপর-নিচ ডান বামে ভিতরের দিকে বাকানো, মাঝের দিক সামনে বাড়ানো। যেন কোনো গোল কাঁচের পাত্রে আটকে পড়েছে ছোট্ট কোনো গোঙফিশ- এমনি অনুভূতি হল পোলের। মনে একটা নিশ্চয়তা কাজ করছে, এ বিশাল কর্মযজ্ঞের দভমুন্ডের বিধাতারা নিশ্চয়ই ঠিক ঠিক জানত কী করছে তারা… পোলের আমলের স্ট্রাকচারাল ম্যাটেরিয়ালের চেয়ে অনেক আধুনিক জিনিসের সাথে নিশ্চয়ই এরা পরিচিত।
দুরে, বহুদূরে তারার দল ঝিকমিক করছে, কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু আলোয় চোখ সয়ে যাওয়া পোল কিছুই দেখতে পায় না মিমিষে কালো ছাড়া।