আমার ডেল রে বুক এডিটরদের অসংখ্য ধন্যবাদ। মূল জিনিসে অনেক উন্নয়ন করেছেন তারা।
সবশেষে, পুরনো বন্ধু সিরিল গার্ডিনারের প্রতি অনেক শুভাশীষ। গ্যাল ফেস হোটেলের চেয়ারম্যান আমাকে এ বইটা লেখার সময় অসাধারণ সইটে অনন্যসাধারণ আতিথেয়তা দিয়েছে। এত আরামদায়ক অবস্থায় কখনো কাজ করিনি। নিশ্চয়তা দিতে পারি, গ্যানিমিডের ঐ হোটেলটা এত মজার নয়।
আরো অনেকের কাছে কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ এ্যাপোলো ১২’র অভিযাত্রীদের কাছে। ইউরি গ্যাগারিন, গ্রেগরি পেক, এ্যালিস গিনেজ, নোয়েল কাওয়ার্ড, স্টার ওয়র্সের গ্যারি ফিশার… ভিভিয়েন লেই ও লরেন্স ওলিভিয়ার- দুজনেই ২০৬১: ওডিসি গ্রিতে (অধ্যায় ৩৭) এসেছিল।
বিখ্যাত শহরের বিখ্যাত হোটেল নিউ ইয়র্কের চেলসিয়া থেকে এ কাহিনীর শুরু, শেষ পৃথিবীর অন্য প্রান্তে। কানের পাশে মৌসুমী ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ ভারত মহাসাগরের গর্জন শুনতে শুনতে ২৩ নং স্ট্রিটে ব্যসমস্ত ট্রাফিকের আওয়াজ যেন মিলিয়ে যায়।
স্মৃতির উদ্দেশে: ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬
কৃতজ্ঞতা লিখতে লিখতে কয়েক ঘন্টা আগে সেরিল গার্ডিনারের মৃত্যু সংবাদ শুনে কষ্ট পেলাম।
জেনে একটু স্বস্তি হয় উপরের কথাটুকু জেনেছিলেন মারা যাবার আগে।
বিদায়বাণী
‘কখনো ব্যাখ্যা নয়, কখনো ক্ষমা নয়’ কথাটা রাজনীতিক, হলিউডের হর্তাকর্তা আর বিজনেস টাইকুনদের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রযোজ্য হলেও একজন লেখককে অবশ্যই পাঠকের জন্য আরো বেশি বিবেচনা রাখা উচিৎ।
এসবের শুরু আসলে ১৯৪৮ সালের ক্রিসমাসে- হ্যাঁ, ১৯৪৮- একটা চার হাজার শব্দের হোটগল্প থেকে। গল্পটা লিখি বি বি সি’র প্রতিযোগিতার জন্য। দ্য সেন্টিনেল এ চাঁদের বুকে একটা ছোট পিরামিড আবিষ্কারের কথা এসেছিল, পিরামিডটা সেখানে অপেক্ষা করে মানুষের জন্য। মানুষ আসবে, গ্রহান্তরী হয়ে আসবে চাঁদের বুকে, সেজন্য অপেক্ষায় থাকে সেটা। চাঁদে যাবার আগ পর্যন্ত আমরা এতই সামান্য এক জাতি যে সেসব ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। *
[* সৌরজগতে মহাকাশের আগন্তুকদের তৈরি আর্টিক্যায়ের খোঁজ করাটাকে বিজ্ঞানের একটা সমৃদ্ধ শাখায় পরিণত করা প্রয়োজন (এক্সো-আর্কিওলজি)। দুঃখজনকভাবে এ শাখার উত্তবের আগেই এমন প্রমাণের কথা বির শোনা যায় বারবার নাসা এসবকে বাতিল করে দেয়। এসব কথা কেউ বিশ্বাস করবে তা বিশ্বাস করাও কষ্টকর। বাজেট সমস্যা সমাধানের জন্য নানা কাজ করতে হয়। (আপনার হাতে, নাসা এ্যাডমিনিস্ট্রেটর…)]
বি বি সি আমার এ চেষ্টাটাকে বাতিল করে দেয়। তিন বছর অপ্রকাশিত ছিল লেখাটা। তারপর টেন স্টোরি ফ্যান্টাসির একমাত্র ইস্যুতে প্রকাশ পায়। অমূল্য এনসাইক্লোপিডিয়া অব সায়েন্স ফিকশন পড়ে এ নিয়ে কথা বলেছে।
‘দ্য সেন্টিনেল গুম হয়ে পড়ে রইল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। তারপর ১৯৬৪ সালে স্ট্যানলি কুবরিক যোগাযোগ করে আমার সাথে। তিনি সত্যিকারের ‘ভাল সায়েন্স ফিকশন মুতি তৈরি করতে চান। দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড অব ২০০১ এ লেখা আছে, আমরা মাথায় ঝড় তোলা কতগুলো সেশন চালিয়েছিলাম। সিদ্ধান্তে আসি, চাঁদের বুকে নিরব ভ্রা আমাদের কাহিনীর গোড়াপত্তনের জন্য ভাল হবে। আস্তে আস্তে আমি আরো অনেক কিছু করে ফেললাম। যেমন প্রথমে থাকা পিরামিডের জায়গায় বসে গেল এখনকার বিখ্যাত কালো এক শিলাস্তম্ভ।
আমরা যখন কীভাবে সৌরজগত বিজিত হল নিয়ে মেতে আছি, তখন মহাকাশ যুগের বয়স মাত্র সাত বছর। কোনো মানুষ একশ কিলোমিটারের বেশি উপরে যায়নি। প্রেসিডেন্ট কেনেডি ঘোষণা করে বসে আছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিদরা চাঁদে যাবেন এ দশকেই’- কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছেই সে স্বপ্ন সুদূর পরাহত। হাড় কাঁপানো শীতে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৫ এ দক্ষিণ লন্ডনে* চলচ্চিত্রায়ন। শুরু হলে আমরা জানতামও না চাঁদের উপরিভাগ কাছ থেকে দেখতে কেমন? অনেকেই বলে চলেছে, চাঁদের বুকে প্রথম এ্যাস্ট্রোনটের প্রথম শব্দটা হবে, বাঁচাও!, কারণ সে ট্যালকম পাউডারের মতো গুড়া ধুলার বুকে পা ফেলে ভড়কে যাবে। সব মিলিয়ে আমাদের ধারণা মন্দ ছিল না। শুধু একটা ব্যাপার। আমাদের চান্দ্র অবয়ব বাস্তবের চেয়ে একটু বেশি বন্ধুর।
[*শেপারটনে, যেটা ওয়েলসের মাস্টারপিস দ্য ওয়্যার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস এর মঙ্গলবাসিয়া ধূলার সাথে মিলিয়ে দেয়।]
আজকের দিনে এটাই অন্যরকম লাগে, আমরা দানবীয় স্পেস স্টেশন, প্রদক্ষিণরত হিলটন হোটেল, বৃহস্পতি অভিযানের কথা কল্পনা করতে পেরেছিলাম ২০০১ সালের মধ্যে। একটা ব্যাপার ভাবা উচিং, ১৯৬০ সালের দিকে মানুষের জল্পনা কল্পনা ছিল ১৯৯০ এর মধ্যে চাঁদে ঘাটি ও মঙ্গলে অবতরণ সম্ভব হবে। আসলে, এ্যাপোলো ১১ ছেড়ে যাবার পর পর সি বি এস স্টুডিওতে থাকতেই আমি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টকে বলতে শুনেছিলাম, এবার আমাদের অবশ্যই মঙ্গলের দিকে হাত বাড়াতে হবে।
আমরা যে জেলে পচিনি এটাই সৌভাগ্য। সেই দূর্নাম, একই সাথে ভিয়েতনাম ও ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি সব স্বপ্নকে ধুলার সাথে মিশিয়ে দেয়।
১৯৬৮ সালে চলচ্চিত্র আর বই দুইটাই আলোর মুখ দেখলেও ধারাবাহিক আরেকটা তৈরির সম্ভাবনা মনে উঁকি দেয়নি। তারপর, ১৯৭৯ সালে সত্যি সত্যি বৃহস্পতির দিকে একটা মিশন শুরু হয়। আমরা প্রথমবারের মতো দানবীয় গ্রহ আর তার প্রজাদের ক্লোজআপ দেখতে পাই।