এ চিন্তা একটা সিদ্ধান্তে নিয়ে আসে। নিউক্লিয়ার এ্যানার্জি ড্যাম্প হওয়া ম্যাচক্সের সমতুল্য।
আর কতগুলো সুপারনোভা, অবাক হয়ে ভাবি মাঝে মাঝে, আসলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যাভিডেন্ট
অধ্যায় ৯ : স্কাইল্যান্ড
স্টারসিটির যোগাযোগের সবচে বড় সমস্যা হল দূরত্ব। পরের টাওয়ারে থাকা কোনো বন্ধুর সাথে আপনি যদি দেখা করতে চান (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যতই সর হোক না কেন কখনোই ক্যুনিকেশন সরাসরি স্পর্শের জায়গা নিতে পারবে না…) তাহলে যাত্রাটা পৃথিবী-চাঁদের যাত্রার মতো হবে। দ্রুততম এলিভেটরে যেতেও কয়েকদিন লেগে যাবে, ঘন্টা কয়েক নয়। এসব দ্রুতি লো গ্র্যাভিটির মানুষদের জন্য সমস্যাসঙ্কুল।
‘ইনার্শিয়ালেস ড্রাইভের’ ধারণাটা এমন এক প্রোপালশন সিস্টেমকে নির্দেশ করে যা মানুষের দেহের প্রতিটা অণুর উপর কাজ করবে। এ ধারার জনক সম্ভবত স্পেস অপেরার মাস্টার ই ই স্মিথের কাছ থেকে এসেছে ১৯৩০ সালে।
আপনি যদি পৃথিবীর কাছাকাছি মুক্তভাবে পড়তে থাকেন (বাতাসের প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে) তাহলে আপনার গতি বাড়বে সেকেন্ডে দশ মিটারের একটু নিচে, প্রতি সেকেন্ডে। কিন্তু তখন ওজনহীনতার অনুভুতি হবে যদিও দেড় মিনিটের মধ্যে গতি বেড়ে যাচ্ছে এক কিলোমিটার।
এ কথাও সত্যি, বৃহস্পতির বুকে মুক্তভাবে পড়তে থাকলে (পৃথিবীর টানের চেয়ে মাত্র আড়াইগুণ বেশি) বা সাদা বামন অথবা নিউট্রন স্টারের কাছে পড়তে থাকলেও (শত কোটি গুণ বেশি) আপনি কিছুই অনুভব করবেন না। কিন্তু সে সময় একটা সমস্যা হবে, শরীরের প্রতিটা বিন্দুতে একই ধরনের কাজ করবে না আকর্ষণ ক্ষমতা, ফলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে দেহ। আরো বিস্তারিত দেখুন আমার ছোটগল্প নিউট্রন টাইড’ (স্য উইন্ড ফ্রম দ্য সানএ)।
একটা ইনার্শিয়ালেস ড্রাইভ,’ যেটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য গাড়িটি ফিল্ড হিসাবে কাজ করবে, তার ব্যাপারে সায়েন্স ফিকশনের পাতার বাইরে এ পর্যন্ত কখনো সিরিয়াসলি আলোচনা হয়নি। কিন্ত ১৯৯৪ তিন আমেরিকান ফিজিসিস্ট ঠিক এ কাজটাই করেন, মহান রাশিয়ান পদার্থবিদ আন্দ্রে শাখার ধারণার উপর ভর করে।
বি হাইশ্চ, এ রুয়েডা এবং এইচ ই পুটহফ লিখিত ইনার্শিয়া এজ এ জিরোপয়েন্ট ফিল্ড লরেও ফোর্স একদিন মাইলফলক পেপার হিসাবে বিবেচিত হবে। কল্পকথায় আমি সেটাই ব্যবহার করেছি। এটা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা তুলছে যেটা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরাও কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবেন, ‘এভাবেইতো সৃষ্টিজগৎ তৈরি।
এইচ, আর ও পি যে প্রশ্নটা তুলেছেন তা হল, কোন ব্যাপারটা একটা বস্তুকে র (বা ইনার্শিয়া) দেয় যার কারণে এটাকে চলা শুরু করতে চেষ্টা করতে হয় এবং আসল অবস্থায় ফিরে আসতে আবার ঠিক ততটুকু কষ্ট করতে হয়?
তাদের কাঙ্ক্ষিত উত্তর নিন্দ্র করে বিচিত্র এবং পদার্থবিদদের আওতার বাইরে খুব কম জানা একটা ব্যাপারের উপর। তথাকথিত শূন্য এলাকা আসলে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা শক্তির প্রবাহ জিরো পয়েন্ট ফিল্ড (আগে উল্লিখিত)। এইচ আর ও পি প্রস্তাব করেন, ইনার্শিয়া ও গ্র্যাভিটি দুইটাই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক অবস্থা, এ ক্ষেত্রগুলোর সাথে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয়।
অসংখ্য চেষ্টা করা হয়েছে, একেবারে ফ্যারাডের আমলে ফিরে যেতে হয়েছে মহাকর্ষ আর চৌম্বকত্বকে মিলাতে গিয়ে। অনেক পরীক্ষার পরই সাফল্যের দাবি এসেছিল, কোনোটাই আবার যাচাই করে প্রমাণিত হয়নি। যদি এইচ আর ও পির তত্ত্ব প্রমাণিত হয় তাহলে এন্টি গ্র্যাভিটি স্পেস ড্রাইভ বানানো সম্ভব হবে; এমনকি ইনার্শিয়ার মতো বিশাল ব্যাপারকে নিয়ন্ত্রণও সম্ভব। দারুণ কিছু ব্যাপার ঘটতে পারে ফলশ্রুতিতে- ধরা যাক আপনি কাউকে একটু স্পর্শ করলেন, সাথে সাথে সে ঘন্টায় কয়েক হাজার কিলোমিটার গতিতে সরে যাবে, দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে আসবে মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ডের ব্যবধানে। সুসংবাদ হচ্ছে, তখন যানবাহনের দূর্ঘটনা অসম্ভব হয়ে পড়বে অটোমোবাইল এবং যাত্রিরা যে কোনো গতিতে পরস্পরের সাথে ধাক্কা খেলেও বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না।
ওজনহীনতার ব্যাপারটা আজকে শুধু স্পেস মিশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও পরবর্তী শতাব্দিতে লাখ লাখ ট্যুরিস্ট ব্যাপারটা উপভোগ করবে। আমাদের গ্র্যান্ডপ্যারেন্টদের কাছে কিন্তু অকল্পনীয় স্বপ্ন ছিল এসব। কিন্তু জড়তার আংশিক বা পুরোপুরি বিলোপ ভিন্ন ব্যাপার, হয়ত একেবারেই অসম্ভব। (১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফিনল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানী দাবি করেন, একটা দুরন্ত সুপারকভাক্টিং ডিস্কের উপর সামান্য [১% এরও কম গ্র্যাভিটি কমার ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছেন। মিউনিখের ম্যাক্স প্যাক ইন্সটিটিউট এমনি ফলাফলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। যদি একথা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে অনেক প্রতিক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে।)
চিন্তাটা ভাল। টেলিপোর্টেশনের সমান ব্যাপার হবে সেটা। আপনি পৃথিবীর বুকে যে কোনো জায়গায় চলে যেতে পারবেন এক সেকেন্ডের ব্যবধানে। সত্যি বলতে কী, স্টারসিটি এছাড়া কী করে কাজ করবে তা জানি না… ।
এখানে, বিশেষত এ উপন্যাসে আমি একটা কথাকে সত্যি ধরে নিয়েছি আইনস্টাইনের কথা মতো, কোনো কিছুই আলোর চেয়ে বেশি গতিতে যেতে পারবে না। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী গাণিতিক পেপারে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। অন্যদিকে সায়েন্স ফিকশন লেখকরা এখনো আশা করছেন, গ্যালাক্টিক হিচহিকারদের এ বিরক্তিকর সমস্যার মুখে পড়তে হবে না।