আমি খুব খুশি হয়েছিলাম আটলান্টিসের কুরা অবিটাল প্রেস কনফারেন্সে দ্য ফাউন্টেন অব প্যারাডাইস তৈরি করায়। মিশন স্পেশালিস্ট জেফ্রি হফম্যান অটোগ্রাফ করা কপি দিয়েছিলেন আমাকে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর।
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় পদক্ষেপ। আরো একটু বেশি সফল। পেলোড শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ইনস্যুলেশনের ভুলের কারণে মালামাল শেষ পর্যও তোলা যায়নি। (আশা করি এটা সৌভাগ্যজনক দূর্ঘটনা, কারণ বস্ত্রপাতের সময় ঘুড়ি ওড়ানোর চেষ্টার মতো কোনোকিছু ঘটেনি।)।
অন্যদিকে কার্বনের তৃতীয় রূপ বাকমিন্সটারফুলারেন (সি সিক্সটি) স্পেস এলিভেটরের সম্ভাবনাকে আরো জোরদার করে। ১৯৯০ সালে রাইস ইউনিভার্সিটি ও হিউস্টনের একদল কেমিস্ট কার্বন সিক্সটির নলাকার ফর্ম আবিষ্কার করেন হিরার চেয়েও অনেক শক্ত বও। দলনেতা ডক্টর স্মলি দাবি করেন বিব্রহ্মান্ডে এর চেয়ে শক্ত আর কোনো বস্তুর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। আরো বলেন, স্পেস এলিভেটর তৈরি হবে এটা দিয়েই। (আমি জেনে খুব খুশি যে ডক্টর স্মলি ১৯৯৬ সালের নোবেলপ্রাইজ ছিনিয়ে এনেছেন এ কাজের জন্য, কেমিস্ট্রিতে।)
বাকমিনিস্টার ফুলার ১৯৮৩ সালে মারা যান। বাকিবল আর বাকিটিউব দেখেননি কখনো, যা তাকে মৃত্যুর পর আরো অনেক খ্যাতি এনে দেন। পৃথিবী ঘোরার পথে তিনি সস্ত্রীক শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন, আমি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দ্য ফাউন্টেইনস অব প্যারাডাইসের জায়গাগুলো দেখিয়েছি। পরে আমি একটা বারো ইঞ্চি এলপি রেকর্ড করেছিলাম সেটার, তিনি ভিনোট লেখেন। সেখানে আরো কয়েকটা কথা ছিল যা আমাকে নক্ষত্ৰনগরীর পথে উৎসাহ যোগায় :
১৯৫১ সালে আমি পৃথিবীর চারপাশে, বিষুবিয় অঞ্চলের উপর একটা মুক্ত ভাসমান রিঙের কথা লিখেছিলাম। এ হলোব্রিজের ভিতরে পৃথিবী ঘুরতে থাকবে।
আমার কোনো সন্দেহ ছিল না মানবজাতি যদি এমন কোনো বিনিয়োগের কথা মাথায় রাখে, তাহলে স্টারসিটি বানানো সম্ভব। তাহলে মানুষের পরবর্তী কলোনিগুলো, যেমন মঙ্গল ও চাঁদ, যেখানে গ্র্যাভিটি কম, সেখান থেকে পৃথিবীতে আসার পথে কম গ্র্যাভিটির স্থান নক্ষত্ৰনগরীতে প্রতি নেয়া যাবে। আবার বহির্জাগতিক সমস্ত রকেট্রির কাজে লাগবে জায়গাটা পৃথিবীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করবে, একই সাথে যাতায়াতের খরচ কমে যাবে। (আশা করি সেসব দিনে মাঝে মাঝে কেপ কেনেডিতে মানুষকে দেখানোর জন্য বিশেষ বিশেষ সময়ে উড্ডয়নের আয়োজন করা হবে। মানুষ তখন মহাকাশ যুগের প্রথম দিকগুলোর কথা ভেবে উদ্বেলিত হবে।)
অবশ্যই, বেশিরভাগ জায়গা থাকবে খালি, সামান্য কোথাও কোথাও থাকবে প্রযুক্তিগত ঘাঁটি। কারণ প্রতিটা টাওয়ার হবে এক কোটি স্কাইস্ক্র্যাপার ফ্লোরের সমতুল্য। যদি পুরো জায়গাটা ভরে যায়, তাহলে পৃথিবীর বিশাল, অকল্পনীয় জনসংখ্যা নিয়েও ভাবতে হবে না। মাতা বসুমতাঁকে রাখা যাবে আর সব জীবের ন্য।
অধ্যায় ৫: শিক্ষা
১৯ জুলাই ১৯৯৬’র স্থানীয় পত্রিকা দেখে অবাক হয়েছিলাম। ব্রিটিশ টেলিকমের আর্টিফিশিয়াল লাইফ টিমের প্রধান ডক্টর ক্রিস উইন্টার বলেন, আমি এ অধ্যায়ে যে ক্ষমতাসম্পন্ন মেমোরি ডিভাইসের কথা বলেছি সেটা চলে আসবে ত্রিশ বছরের মধ্যে! (১৯৫৬ সালের উপন্যাস দ্য সিটি এ্যান্ড দ্য স্টার্স এ আমি এ সংখ্যাটা বিলিয়ন বছর পরে দিয়েছিলাম… কল্পনার কী ব্যর্থতা!) ডক্টর উইন্টার বলেন এর ফলে আমরা, একজন মানুষকে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে, আবেগিকভাবে আবার তৈরি করতে পারব। ধারণা করেন এতে মেমোরি লাগবে মোটামুটি দশ টেরাবাইট (টেন টু দ্য পাওয়ার পার্টিন বাইট), পেটাবাইটের (টেন টু দ্য পাওয়ার ফিফটিন বাইট) কথা বলেছিলাম আমি, তার চেয়ে দু ধাপ নিচেই।
ভেবেছিলাম ডক্টর উইন্টারের নামে ডিভাইসটার নাম দেব, এতে আরো বিতর্ক বাড়তে পারে। দেখুন নবম অধ্যায়ের নোট।
আমার বিশ্বাস আমি তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত পাম-টু-পাম ট্রান্সফার ইনফরমেশন ধারণাটা দিয়েছি। দেখা গেল নিকোলাস নিগ্রোপটে আর তার এম আই টি মিডিয়া ল্যাব এ নিয়ে অনেক বছর ধরেই গবেষণা করছে…
অধ্যায় ৭: ডিব্রিফিঙ
জিরো পন্টিং ফিল্ড (কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন্স বা ভ্যাকুয়াম এ্যানার্জি নামেও পরিচিত) এর শক্তি যদি একবার আবিষ্কার করা যায় তাহলে আমাদের সভ্যতার খোল নলচে পাল্টে যাবে। শক্তির বর্তমানে ব্যবহৃত সব উৎস- তেল, কয়লা, নিউক্লিয়ার, হাইড্রো, সোলার একেবারে অকিঞ্চিৎকর হয়ে পড়বে। একই সাথে পরিবেশ নিয়ে আমাদের চিন্তারও অবসান ঘটবে। শুধু একটা চিন্তা আসবে মাথায় তাপ দূষণ। সব এ্যানার্জি সবশেষে তাপে পরিণত হয়। সবার হাতে যদি কয়েক মিলিয়ন কিলোওয়াট নিয়ে ছেলেখেলা করার সুযোগ চলে আসে তাহলে পৃথিবীটা দ্রুত শুক্রের পথ ধরবে- কয়েকশত ভিগ্রি বেড়ে যাবে তাপমাত্রা।
যাক, চিত্রের ভাল একটা দিকও আছে, পরবর্তী বরফযুগের চিন্তা থাকবে না, যা ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। (সভ্যতা আসলে বরফযুগগুলোর মাঝের বিরতি উইল ডুরান্ট, দ্য স্টোরি অব সিভিলাইজেশন।)
এমনকি এখন যে আমি লিখছি, তখনো অনেক প্রতিযোগী ইঞ্জিনিয়াররা পৃথিবীজুড়ে এ শক্তিকে দখল করার আশা করছেন, দাবি করছেন। ফিজিসিস্ট রিচার্ড ফিম্যান বলেছিলেন একটা কফির মগে যেটুকু এ্যানার্জি থাকবে তা পৃথিবীর সব সাগরের পানিকে উবিয়ে দিতে পারবে।