সুড়ঙ্গ থেকে কী যেন বেরিয়ে আসছে- ট্যাবলেটটাকে ভন্টে নিয়ে গিয়েছিল যে সেমি-হিউম্যানয়েড রোবট, সেটা। এই বায়ুমন্ডলহীন চাঁদের বুকে একটা রোবটকে আইসোলেশন স্যুট পরা অবস্থায় দেখলে হাস্যরসাত্মক মনে হতে পারে পুরো ব্যাপারটা। কিন্তু কেউ কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। ভিতরের অসংখ্য ক্যামেরা থাকার পরও যে কোনো সময় যে কোনো ক্যানিস্টার লিক হয়ে যাবার বা কোনো দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। চান্দ্ৰপরিবেশ অনেক স্থিত, কিন্তু অনেক আগে এখানে ভূকম্পন আর উল্কাপাতের ঘনঘটা দেখা যেত।
সুড়ঙ্গের মুখ থেকে অর্ধশত মিটার দূরে এসেই থেমে যায় রোবটটা। যে বিশাল পাগটা এটাকে ধরে রেখেছিল সেটাই এক সময় ঘুরতে শুরু করে।
‘ডার্ক গ্লাস পরেননি এমন সবাই রোবটের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। চান্দ্রযানের ভিতর থেকে রেডিওতে চিৎকার করে ওঠে এক ড্রাইভার।
সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নেয় পোল। একই সাথে দেখতে পায়, আমোর একটা ঝলক খেলে যাচ্ছে যানগুলোর উপর দিয়ে।
ফিরে তাকায় রোবটটার দিকে। জলছে সেটা। চাঁদে বাতাস নেই, তাই পাক খেয়ে খেয়ে ধোয়া উঠে যায় না উপরদিকে, তবু, ব্যাপারটা না দেখলে কেমন যেন অস্বস্তি হয়।
‘স্টেরিলাইজেশন কমপ্লিট। ঘোষণা করল একজন, লোকটা মিশন কন্ট্রোলার, ‘ধন্যবাদ সবাইকে। এখন প্লেটো সিটিতে ফিরে যাচ্ছি আমরা।’
কী অবাক ব্যাপার! মানবজাতি তারই তৈরি করা অকল্যাণের কারণে আজ বেঁচে গেল। এ থেকে কোনো নীতিকথা বের করে নিবে মানুষ?
সুন্দর, নীল এক গ্রহ ভেসে আছে আকাশে। পৃথিবী। উপরে পাক খেয়ে বেড়ায় মেঘের দল। মহাকাশের হিমশীতলতা থেকে রক্ষা করে। সেখানে, আর কয়েক মাস পর, প্রথম দৌহিত্রকে কোলে তুলে নেয়ার আশা করে পোল।
তারার রাজ্যের আড়ালে ঈশ্বরতুল্য যে ক্ষমতাবানরাই থাক না কেন, মনে করিয়ে দেয় পোল নিজেকে, সাধারণ মানুষের জন্য দুইটা ব্যাপারই সবচে বড় ভালবাসা আর মৃত্যু।
শরীরের বয়স এখনো একশ হয়নিঃ দুইটার জন্যই অনেক সময় পড়ে আছে।
সমাপ্তি
তাদের হোট সৃষ্টিজগত এখনো নবীন। এর ঈশ্বর এখনো শিশুতুল্য। কিন্তু তাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসছে শেষ দিনগুলোতে আমরা ফিরে এলেই সিদ্ধান্ত নিব কোনটাকে রক্ষা করতে হবে।
চ. উৎস ও কৃতজ্ঞতা
উৎস
অধ্যায় ১: ধূমকেতুর রাখাল ছেলে।
ক্যাপ্টেন চ্যান্ডলারের শিকারভূমির ব্যাপারটা আমি আবিষ্কার করেছি ১৯৯২ সালে। দেখুন, জেন এক্স লু ও ডেভিড সি জেউইট লিখিত ‘দ্য কুইপার বেল্ট (সায়েন্টিফিক আমেরিকান, মে, ১৯৯৬)।
অধ্যায় ৪ : দৃষ্টি যায় দূরে
জিও স্টেশনারি অর্বিট (জি ই ও) তে পৃথিবীর চারধারে একটা আঙটি তৈরি করা যেতে পারে বিষুবিয় অঞ্চলে গড়ে তোলা কয়েকটা আকাশভেদী টাওয়ারের মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে ধারণাটা একেবারে অযৌক্তিক মনে হলেও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা আছে। এটাই সেন্ট পিটার্সবার্গ ইঞ্জিনিয়ার ইউরি আর্টমুটানভ প্রস্তাবিত ‘স্পেস এলিভেটরের প্রবর্ধিত ধারণা। এ বিজ্ঞানীর সাথে আমার দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৯৮২ সালে, তখন তার সিটির নাম ছিল স্নি।
ইউরি নির্দেশ করেন, তাত্ত্বিকভাবে পৃথিবী ও বিষুবের উপর ভাসতে থাকা একটা স্যাটেলাইটের মধ্যে তারের সংযোগ দেয়া সম্ভব- যদি কৃত্রিম ভূ-স্থির উপগ্রহটা জি ই ও তে থাকে, বর্তমানের বেশিরভাগ কমনিকেশন স্যাটেলাইট যে উচ্চতায় আছে। শুরুতে একটা স্পেস এলিভেটর (ইউরির কথা অনুযায়ী কসমিক ফানিকুলার) বানানো সম্ভব যেটা জি ই ও পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জির সাহায্যে বস্তু নিয়ে যেতে পারবে। যাত্রার বাকি অংশটুকুর জন্যই শুধু রকেট প্রোপালশন প্রয়োজন।
পৃথিবীর বুক থেকে রকেট ছাড়তে যে ঝুঁকি, পরিবেশ দূষণ আর শব্দ-কম্পনের ভীতি আছে তার হাত থেকে বাঁচার জন্যও এটা করা যায়। করা যায় অনেক খরচ বাঁচানোর জন্য। বিদ্যুৎ সস্তা। একজন মানুষকে অর্বিটে পৌঁছে দিতে খরচ পড়বে সাকুল্যে মাত্র একশ ডলার। রাউন্ড ট্রিপের জন্য খরচ? মাত্র দশ ডলার। আবার নিচের দিকে যাত্রা হলে বেশিরভাগ খরচই উঠে আসবে, কারণ এ্যানার্জি গেইন করা যাবে। (আর টিকিটের সমস্ত রাহা-খরচ চলে আসবে খাবার দাবার, ইনফ্লাইট মুভি থেকেই। ভাবা যায়, মাত্র হাজারখানেক ডলার দিয়ে জি ই ও তে গিয়ে আবার ফিরে আসা সম্ভব!)
তত্ত্বে কোনো ত্রুটি নেই, কিন্তু এমন পদার্থ পাব কী করে যেটা পৃথিবীর বুক থেকে ছত্রিশ হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারবে বাড়তি অ নিয়েও? ইউরি তার পেপার লেখার সময় এই শক্তি দিতে পারত মাত্র একটা বস্তু। ক্রিস্টালাইন কার্বন, আমরা যাকে হিরা নামে চিনি। দূর্ভাগ্যবশত খোলাবাজারে এত মেগাটন হিরা পাওয়া কল্পনামাত্র। ২০৬১: ওডিসি ঐ তে আমি দেখাই যে এ হিরা আসবে বৃহস্পতির কেন্দ্রবিন্দু থেকে। আর দ্য ফাউন্টেইনস অব প্যারাডাইস এ আরো সহজ উৎস নির্দেশ করি- অর্বিটিং ফ্যাক্টরি, যেগুলোকে জিরো গ্র্যাভিটিতে হিরা ফলানো সম্ভব।
১৯৯২’র অগাস্টে স্পেস এলিভেটরের পথে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়। শাটল আটলান্টিসে একুশ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত পেলোড তোলার চেষ্টা করলেও মাত্র কয়েকশ মিটার গিয়েই পেয়িং আউট মেকানিজম জ্যাম হয়ে পড়ে।