।‘কোন গুজবটা?
‘যে আমরা এখানে পাঠানো বিশেষ তদন্তকারী দল- ছোট শহরটার অপরাধ দুর্নীতি খতিয়ে দেখব।মেয়র আর শেরিফের লেজ তুলে পালানোর দশা হয়েছে।
‘আহা! তাদের হিংসা করতে ইচ্ছা হচ্ছে, আফসোসের সুরে বলে কর্নেল জোন্স, সামান্য কোনো কারণে চিন্তিত হতে পারতাম যদি তাদের মতো।
৩৯. অমানিশা
আনুবিস সিটির আর সব অধিবাসীর মতো (এখন জনসংখ্যা ৫৬,৫২১) ডক্টর থিওডোর খানও স্থানীয় মাঝরাতে জেনারেল এ্যালার্মের আওয়াজে জেগে যায়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াটা স্বাভাবিক, আবার কোনো বরফ-ভূমিকম্প নয়ত, ফর ডিউস সেক।
জানালার কাছে ছুটে গিয়ে ‘ওপেন এত জোরে বলল যে ঘরটা বুঝতেই পারল । কী আর করা, উত্তেজিতভাব চেপে রেখে শান্ত সুরে আবার বলে সে কথাটা। লুসিফারের আলোর মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে বর্ণিল নকশা তৈরি করার কথা। পৃথিবী থেকে আসা মানুষের কাছে এ মহা দুর্লভ দৃশ্য, তীব্র নকশার এক মিলিমিটারও স্থানান্তর হয় না মিনিটের পর মিনিট চলে গেলেও…
সেই চিরাচরিত আলোর বন্যা নেই। আনুবিস ডোমের বিশাল, স্বচ্ছ বুদবুদের ভিতর থেকে উপরে তাকায় থিওডোর খান। তাকায় চরম অবিশ্বাস নিয়ে। হাজার বছর ধরে গ্যানিমিডের এমন আকাশ দেখা যায়নি। আকাশ শুধু তারায় তারায় ভরা, লুসিফার নামের কোনো নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
তারপরই, আরো আত জাগানো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে খান। যেখানে লুসিফার থাকার কথা সেখানে কিছুই নেই। এমনকি ওপারের তারাগুলোও দেখা যায় না। সম্ভবত লুসিফার ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়েছে। আর এ কৃষ্ণগহ্বরের করাল থাবায় এরপর যে পড়বে তার নাম গ্যানিমিড।
গ্যানিমিড হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পোলও একই দৃশ্য দেখছিল, আরো জটিল ভাবনা চলছে তার মনে। জেনারেল এ্যালার্মের আগেই তার কমসেক জাগিয়েছে, হালম্যানের কাছ থেকে মেসেজ নিয়ে এসে।
ঘটনার এখানেই শুরু। আমরা মনোলিথকে ইনফেক্টেড করেছি। কিন্তু একটা… সম্ভবত একাধিক ভাইরাস আমাদের সার্কিটগুলোতেও ঢুকে পড়েছে। জানি না তোমার দেয়া মেমোরি ট্যাবলেটে ঢুকতে পারব কিনা। সফল হলে জিয়াংভিলে দেখা হবে।
এরপরই সে বিচিত্র কথাগুলো আসে যার মানে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অনুভূতি নিয়ে বিতর্ক থাকবে না মানবজাতির ইতিহাসে।
যদি ডাউনলোড করতে না পারি, মনে রেখ আমাদের।’
তার দরজার পিছনে মেয়রের কণ্ঠ শোনা যায়। আনুবিসের ঘুমভাঙা মানুষগুলোকে অভয় দেয়ার চেষ্টায় প্রাণপাত করছে লোকটা।
জানি না কী ঘটছে, কিন্তু লুসিফার এখনো স্বাভাবিকভাবে জ্বলছে। আমি আবার বলছি, লুসিফার এখনো জ্বলন্ত! ইন্টারঅবিট শাটল এলসায়নের কাছ থেকে খবর পেয়েছি। মাত্র আধঘন্টা আগে ক্যালিস্টোর উদ্দেশ্যে সেটা ছেড়ে গেছে। এখানে ভিডিওগুলো দেখানো হল।
বারান্দা ছেড়ে পড়িমড়ি করে ভিডক্রিনের সামনে চলে আসে পোল। লুসিফার পূর্ণ প্রতাপ নিয়ে ভেসে আছে আকাশে।
আসলে, কোনো এক কারণে সাময়িক গ্রহণ হচ্ছে’ বলে মেয়র, ভালভাবে দেখার জন্য জুম ইন করব… ক্যালিস্টো অবজার্ভেটরি, কাম ইন প্লিজ…’।
আমি কী করে বিশ্বাস করি যে এ গ্রহণটা সাময়িক স্ক্রিনে আসতে থাকা পরের দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ভাবে পোল।
হারিয়ে গেল লুসিফার। আকাশজোড়া নক্ষত্রের রাজ্য। মেয়রের কঠ স্নান করে আরেকটা কষ্ঠ বলে উঠল।
‘–দু-মিটার টেলিস্কোপ, কিন্তু প্রায় যে কোনো ইনমেন্টেই কাজ চলবে। নিখুঁত কালো জিনিসে ঘেরা একটা ডিস্ক দেখা যাচ্ছে। দশ হাজার কিলোমিটারের সামান্য বেশি এলাকা জুড়ে আছে ডিটা। এত পাতলা যে এর কোনো দৃশ্যমান পুরুত্ব নেই। এটা এমনভাবে সাজানো যেন গ্যানিমিডে কোনো আলো আসতে না পারে ।
‘আরো জুম ইন করছি, কোনো ডিটেইলস দেখা যায় কিনা দেখতে হবে, যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি না যে…’
ক্যালিস্টোর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় ডিস্কটা অর্ধবৃত্তাকার। ডিমের খোসা অর্ধেক করলে যেমন হয় তেমন। যতটা চওড়া তার দ্বিগুণ লম্বা। পুরো ক্রিনজুড়ে আসার আগ পর্যন্ত ছড়াতে থাকে কিন্তু জুম করা হয়েছে কিনা বোঝার কোন উপায় নেই, কারণ গড়নটায় কোনো হেরফের হয়নি, একটুও ডিটেইল দেখা যায় না।
‘যেমন ধারণা করেছিলাম, কোনো কি দেখা যাবে না। জিনিসটার প্রান্তে প্যান করা যাক…’
তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। ভুবনজোড়া চাকতির একপ্রান্তে উদিত হয়েছে নক্ষত্রবীথি। যেন তারা কোনো মসৃণ, বায়ুমন্ডলহীন গ্রহের উপর কালো রাত দেখছে। না, একেবারে মসৃণ নয়…। ইন্টারেস্টিং ব্যাপারতো…’ মন্তব্য করল এ্যাট্রোনোমার, যার এতক্ষণের কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল এমন ঘটনা হরদম ঘটে। প্রান্তগুলো যেন অসমান জিগজ্যাগ- কিন্তু নিয়মিত ঠিক যেন করাতের কিনারা…’
বৃত্তাকার করাত, পোল গুঙিয়ে ওঠে। আমাদের ঘিরে ফেলবে নাতো! বিচিত্র সব ভাবনা আসে এমন সময়ে…
সরণের জন্য চিত্র নষ্ট হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত এটুকুই দেখতে পারি আমরা প্রসেস করে পরে আরো ভাল চিত্র পাওয়া যাবে আশা করি।’
চিত্রটা এখন এত বড় যে চাকতিটাকে সমতল দেখাচ্ছে। ভিডক্রিনজুড়ে কালো ফিতা দেখা যায়। প্রান্ডটা এত বেশি নিখুঁতভাবে ত্রিকোণ অবয়বে জানো যে চাইলেও করাতের কথা ভোলা যায় না। মনের গহিনে কী চিতা যেন ঘাই দিচেহ…