এ কথায় একটু অবাক হয় পোল। এমনটা হবার কথা ছিল না। জানে, হালম্যানের অস্তিত্বের কথা বারবার নানা জায়গায় উঠেছে, তবু, বছরের পর বহর দূরে থাকা? সে সবত অনেকগুলো নবজগৎ ঘুরেছে- হয়ত এ কারণেই নোভা স্করপিওর ব্যাপারটা জানে। জানার কথা, জায়গাটা মাত্র চরিশ আলোকবর্ষ দূরে, মহাজাগতিক হিসাবে প্রতিবেশী। কি একেবারে নডের কাছে গেছে, তা হতে পারে না। গিয়ে ফিরে আসতে আসতে নশ বছর লেগে যাবে।
কপাল ভাল, প্রয়োজনের সময় তোমাকে এখানে পেলাম।
জবাব দেয়ার আগে হালম্যান সাধারণত ইতস্তত করে না। এবার করছে। তিন তিনটা লম্বা সেকেন্ড পেরিয়ে গিয়ে জবাব আসে, তুমি কি নিশ্চিত যে ব্যাপারটা স্রেফ ভাগ্য?
মানে?
‘এসব নিয়ে কথা বলতে চাইনি। কিন্তু আমি… অন্তত দুবার এমন অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছি যা মনোলিথের চেয়ে শক্তিমান; সম্ভবত তারাই মনোলিথের জন্মদাতা। হয়ত আমাদের কল্পনার চেয়ে কম স্বাধীনতা ভোগ করতাম…’ ।
ভাবনাটা আসলেই ভয় ধরিয়ে দেয়। জোর করে এসব চিন্তাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সমস্যায় মনোনিবেশ করে পোল।
‘আশা করা যাক আমাদের স্বাধীনতা অনেক বেশি। আশা করা যাক প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারব। কে জানে প্রশ্নটা বোকাটে কিনা… আমাদের দেখা হবার কথা জানে নাকি মনোলিথ সন্দেহ করতে পারে?
‘এমন আবেগ নেই সেটার। অসংখ্য ফল্ট প্রটেকশন ডিভাইস আছে, কোনো কোনোটা বুঝতে পারি আমি। এই সব।
‘এখন আমাদের উপর নজরদারি করতে পারবে?
মনে হয় না।’
আশা করি আমার আশাটাই ঠিক, সে সিম্পলমাইন্ডেড সুপার জিনিয়াস। ব্রিফকেস খুলল সে। একটা ট্যাবলেট বের করল। এ সামান্য গ্র্যাভিটিতে এর ওজন একেবারে সামান্য। কে সন্দেহ করবে মানবজাতির ভাগ্য এখন এ ট্যাবলেটের ভিতরে
‘তোমার কাছে একটা সিকিউরড সার্কিট পাঠানোর কোনো উপায় ছিল না আমাদের হাতে। ডিটেইলে যেতে পারিনি এজন্যই। এ ট্যাবলেটে এমন সব প্রোগ্রাম করা আছে যার ফলে মানুষকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো যে কোনো আদেশ পালন করতে বাধা দিবে। মানবজাতির ইতিহাসে ডিজাইন করা সর্বশ্রেষ্ঠ বিশটা ভাইরাস আছে এখানে। বেশিরভাগের কোনো এ্যান্টিভোট নেই, এমনকি বিশ্বাস করা হয় কোনো এন্টিডোট তৈরি করাও যাবে না। প্রত্যেকটার পাঁচটা করে কপি। আমরা চাই প্রয়োজন পড়লে তুমি এগুলো রিলিজ করে দিবে। ডেভ হাল- কখনো কারো কাঁধে এত বড় দায়িত্ব দেয়া হয়নি। কী করব, অন্য উপায় যে নেই।
আবারো, জবাবটা ইউরোপা থেকে আসতে সময় নেয়, তিন সেকেন্ডের চেয়েও বেশি।
‘আমরা এমন কিছু করলে মনোলিবের সমস্ত ফাংশন সিজড় হয়ে যাবে। জানি না তখন আমাদের ভাগ্যে কী ঘটবে।
‘আমরা আগেই বিবেচনায় নিয়েছি ব্যাপারটা, অবশ্যই। কি সে সময়ের মধ্যে তোমার হাতে আরো অনেক ফ্যাসিলিটি চলে আসবে। কোনো কোনোটা আমরা বুঝতেই পারব না। সেই সাথে একটা পেটাবাইট মেমোরি ট্যাবলেটও পাঠাচ্ছি। এই টেন টু দ্য ফিফটিন্থ বাইট অনেক জীবনের পূর্ণ স্মৃতি ধরে রাখতে পারবে। তোমাদের জন্য যথেষ্ট। জানি, পালানোর অন্যান্য পথও তৈরি করে রেখেছ তোমরা নিজেরা।
‘ঠিক। কোনটা ব্যবহার করতে হবে সে সিদ্ধান্ত নিব সময়মত।
একটু হাপ ছেড়ে বাঁচে পোল- এমন পরিস্থিতিতে যতটা পারা যায় ততটা। হালম্যান সহায়তা করতে চায়, তার উৎসের সাথে মনের যোগাযোগ আর ভালবাসা আছে এখনো, এটাই অনেক কিছু।
‘এখন, ট্যাবলেটটা তোমাদের কাছে দিয়ে আসতে হবে আমাকে- ভার্চুয়ালি নয়, ফিজিক্যালি। কনটেন্টগুলো এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে রেডিও বা অপটিক্যাল কোনো চ্যানেল দিয়ে পাঠানো সম্ভব নয়। জানি, বস্তুর উপর অনেক দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ আছে। তোমাদের: একবার অর্বিটে ভাসতে থাকা বোমা নষ্ট করে দিয়েছিলে না? এটাকে কি ইউরোপায় নিয়ে যেতে পারবে? বিকল্প ভাবা আছে- অটোক্যারিয়ারে পাঠাতে পারি, যেখানে বলবে সেখানেই।
‘এটাই ভাল হয়: জিয়াংভিল থেকে সংগ্রহ করে রাখব। কোঅর্ডিনেট দিচ্ছি…’
.
চিন্তায় ডুবে আছে পোল… ডুবে আছে চেয়ারে এমন সময় বোম্যান স্যুইট মনিটর জানাল পৃথিবী থেকে আসা ডেলিগেটদের হেড অপেক্ষা করছে তার জন্য। কে জানে কর্নেল জোন্স আসলেই কর্নেল কিনা, অথবা তার নাম জোন্স কিনা। এসব সামান্য রহস্য নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই পোলের। সংগঠক হিসাবে যে তার তুলনা নেই, অপারেশন ডেমোক্লেসকে যে সূচারুভাবে চালিয়েছে এই যথেষ্ট।
ফ্র্যাঙ্ক, পথে নেমে গেছে এটা। এক ঘন্টা দশ মিনিটের মধ্যে ল্যাভ করবে। কিন্তু এখনো জানি না কী করে হালম্যান হ্যান্ডল করবে- ঠিক আছে তো হ্যান্ডল করবে কথাটা?- ট্যাবলেটগুলো।
ইউরোপা কমিটির কেউ ব্যাখ্যা করলে পরিষ্কার হতে পারে। খুব বিখ্যাত একটা কথা আছে না কম্পিউটার সম্পর্কে আমাদের সময়ে প্রচলিত ছিল না। যে কোনো কম্পিউটার যে কোনো কম্পিউটারকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই আমি নিশ্চিত হালম্যান করণীয় সম্পর্কে জানে। সব ঠিক না থাকলে কখনোই রাজি হত না।’
‘আশা করি, আপনার কথা ঠিক, জবাব দিল কর্নেল, যদি ভুল হয় তাহলে কোনো বিকল্প আছে কিনা আমার জানা নেই।
ঝপ করে একটু নিরবতা নেমে আসে। দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য প্রসঙ্গ পাল্টায় পোল।
আমাদের আসা নিয়ে যে ভাল গুজব ছড়িয়েছে সে সম্পর্কে জানেন নাকি