এমন সুযোগ পেয়ে মাথায় ওঠে ইনফরমেশন হাইওয়ে জিনিয়াসরা। বাগে পায় সবাইকে। ধরা পড়লেও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার উপায় নেই। তারা জিনিয়াস, দ্র, মার্জিত। সর্বোপরি, কাউকে আহত করেনি, করেছে।
তারপর, ছোটখাট সাজার মেয়াদ শেষ হলে কেঁচো থেকে তারা কেউটের রূপ নেয়। যে বা যারা ধরা পড়ার জন্য দায়ী তাদের কম্পিউটার সিস্টেমের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে। কেউ কেউ যে ভাল হয়ে যায় না তা নয়….
সাধারণত তারা উঠতি বয়সের ছেলেপেলে, একেবারে একা একা কাজ করে, গোপনে। ওয়ার্ল্ডওয়াইড কেবল আর রেডিওর কল্যাণে সৃষ্টি করে- এটুকুতেই অনেকের আনন্দ। ছড়িয়ে পড়ে ডিস্কেট আর সিডিরমে। তারপর পৃথিবীজোড়া চিৎকার শুনে শুনে হেসে কুটিপাটি হয়।
মাঝে মাঝে এসব জিনিয়াসকে ক্যাক করে ধরে জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো। তারপর তাদের নিজস্ব গোপন কাজে বেগার খাটায়। সাধারণত শত্রুদের ডাটাব্যাঙ্কে আঘাত হানাই মূল উদ্দেশ্য।
এখন গ্যাস আর জীবাণুর চেয়ে কার্যকর অস্ত্র হাতে, বস্তুতান্ত্রিক যুদ্ধের সময় শেষ।
২০০৫ সালে নিউইয়র্ক-হাভানা ব্যাঙ্ক ভেঙে পড়া, ২০০৭ সালে ভারতীয় পারমাণবিক মিসাইলের আঘাত হানা (কপাল ভাল, ওয়্যারহেড এ্যাক্টিভেট হয়নি), ২০০৮ সালে প্যান ইউরোপিয়ান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ধ্বসে যাওয়া, উত্তর আমেরিকার টেলিফোন সিস্টেমের প্যারালাইসিস- সবই ধ্বংসদিবস চাওয়া গোপন সংস্থাগুলোর কাজ। কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স আর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান আস্তে আস্তে এসব স্তিমিত করে দেয়।
অন্তত তাই বিশ্বাস করে লোকে। শতাব্দির পর শতাব্দি পেরিয়ে গেছে, সমাজের ভিত্তিমূলে এখনো কোনো আঘাত আসেনি। বিজয়ের পথে অন্যতম প্রধান অস্ত্র ছিল ব্রেইনক্যাপ। অনেকে মনে করে এসব এ্যাচিভমেন্ট এসেছে অনেক বেশি মূল্যের বিনিময়ে।
সেই প্লেটো আর সক্রেটিসের সময় থেকে মানুষ আর রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে কথাবার্তা চলে আসছে। ধীরে ধীরে সবাই রাষ্ট্রের অধীনে চলে আসে তৃতীয় সহস্রাব্দে। সাধারণত ধরে নেয়া হয় সমাজতন্ত্রই সবচে ভাল রাষ্ট্রব্যবস্থা; এর একটা মহড়া দেয়া হয় শতকোটি প্রাণের বিনিময়ে সামাজিক পোকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর রোবট সহ আরো কিছু স্তরে দেখা হয়। সবশেষে দেখা গেল মানবজাতির জন্য সবচে কম অকল্যাণকর পদ্ধতির নাম গণতন্ত্র।
ব্রেইনক্যাপ সাধারণ মানুষের নাগালে আসার পর থেকে কিছু উচ্চবুদ্ধিসম্পন্ন একই সাথে উচ্চঈর্ষাসম্পন্ন মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ে, এটা আগেই ওয়ার্নিং সিস্টেম হিসাবে কাজ করতে পারে। ভয়ানক হয়ে পড়ার আগেই অনেক ধরনের সাইকোসিস ধরা পড়ে যায়। মানুষের মানসিক বিকৃতির পধ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। তার পরও, কেউ খারাপ কাজ করলে বা মানসিকভাবে অসুস্থ হলে ইলেক্ট্রনিকভাবে ট্যাগ করে রাখা হয় বেশি হলে সরিয়ে নেয়া হয় সমাজ থেকে। ব্রেইনক্যাপ দিয়ে তখন এসব কাজই বেশি করা হত। কিন্তু আস্তে আস্তে পার্সোনাল টেলিফোনের মতো জরুরি জিনিসে পরিণত হল এটা- অবিচ্ছেদ্য। পুরো সমাজের সাথে যে-ই খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয় সেই সন্দেহের মুখে পড়ে। ফলে চিকিৎসাও হয় ত্বড়িৎগতিতে।
পরে যখন শত্রুদের মতানুসারে, ‘মাইপ্রোবিং’ পুরোপুরি সচল হল, তখন থেকে মানুষ শোর তোলে, ব্রেইনক্যাপ নাকি ব্রেইনকপ?
অনেকে মেনে নেয়, এ ধরনের নজরদারির ফলে অনাগত বহু বিপর্যয় রোধ করা যাবে। গড়া যাবে সুন্দর সমাজ। তারপর মানসিক স্বাস্থের উন্নয়নের সাথে সাথে অবলুপ্তির পথ পায় ধর্মীয় পাগলামি।
সাইবারনেট ক্রিমিনালদের সাথে চলা লম্বা যুদ্ধ শেষপর্যায়ে এলে বিজয়ীরা দেখতে পেল হাতে পর্বতপ্রমাণ জঞ্জাল জমেছে। হাজার হাজার কম্পিউটার ভাইরাস, বেশিরভাগই ধরতে পেরে শেষ করে দেয়া কঠিন। আর আছে এমন কিছু অস্তিত্ব যার কোনো সমাধান নেই, সমাধানের পথও নেই…।
বেশিরভাগই মহান মহান গণিতবিদ-সম্পর্কিত, যারা তাদের আবিষ্কারের ফলে আসা ধ্বংস দেখে বিস্মিত হতেন। হ্যাকার আর ভাইরাসের জনকরা একের পর এক গাণিতিক আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় গডেল গ্রেমলিন, ম্যান্ডেলট মেজ, কম্বিনেটোরিয়াল ক্যাটাট্রফি, ট্রান্সফিনিট ট্র্যাপ, কনওয়ে কোনানড্রাম, তুরিং টর্পেডো, লরেঞ্জ ল্যাবিরিন্থ, বুলিয়ান বৰ, শ্যানন স্নের, ক্যান্টর ক্যাটাক্লিজম…
কোনো সাধারণ নিয়মে ফেলতে পারলে বোঝা যেত এসব গাণিতিক ভয়াবহতা এক নিয়মে কাজ করে। এগুলোর কাজ মেমোরি ইরেজার আর কোড ব্রেকার হিসাবে যতটা, আর কোনো ক্ষেত্রে ততটা নয়। এমন কোনো কাজ দিবে, এমন কোনো প্রোগ্রাম শুরু করতে বাধ্য করবে যা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের শেষ দিনেও শেষ করা সম্ভব নয়। ক্ষতির দিক দিয়ে ম্যান্ডেট মেজ এক কাঠি বাড়া। বাস্তবেই এটা অসীম কতগুলো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে।
পাই বা তেমন অসীম কোনো সংখ্যার মান বের করা তেমনি এক উদাহরণ। যাই হোক, একেবারে বোকার হদ্দ কোনো কম্পিউটারও এমন সহজ ফাঁদে পা দিবে না। কম্পিউটার এত বেশি এগিয়ে গিয়েছিল হাজার বছর আগে যে শূন্যের নিচে মান বের করতে গেলে কম্পিউটার সংখ্যাটাকে পিষে ফেলে একটা ফল দেখিয়ে দিবে…
এখন, চালাক প্রোগ্রামারদের টার্গেট সেট করতে হবে এভাবে, যেন সংখ্যাটা নির্দিষ্ট কোনো সময়ে শেষ হয়।