‘এবং একটা ডেলিভারি সিস্টেম হালম্যান!
‘ঠিক তাই।
‘জাস্ট এ মিনিট, ডক্টর টি, আমরা কিছুই জানি না একেবারে কিস্যু জানি না মনোলিথের স্থাপত্যের ব্যাপারে। এর বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা কাজে লাগবে কী করে?
‘পারব না–কিন্তু মনে রাখুন, মনোলিথ যতই জটিল আর আধুনিক হোক না কেন, একে সৃষ্টি জগতের যৌক্তিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। মেনে চলতে হবে শত শত বছর আগে এ্যারিস্টটল আর বোলের গেঁথে দেয়া রীতি। আর এজন্যই এটা হয়ত- না, এটার উচিৎ!- ভল্টে লুকানো জিনিসগুলোর দাম দেয়া। আমরা সেগুলোকে এভাবে এ্যাসেম্বল করব যেন অন্তত দুইটার একটা কাজে লাগে। এছাড়া আর কোনো আশা নেই- কেউ কি এর চেয়ে ভাল বিকল্পের সন্ধান দিতে পারবে?
‘এক্সকিউজ মি, ধৈর্য হারিয়ে পোল বলল, কোন একজন কি আমাকে দয়া করে বলবেন এই মহামূল্যবান ভল্টটা কী এবং কোথায় আছে?
৩৬. আতঙ্কের কুঠুরি
ইতিহাস দুঃস্বপ্নে ভরা। দুঃস্বপ্নের কোনো কোনোটা প্রাকৃতিক, কোনো কোনোটা মানবসৃষ্ট।
একবিংশ শতাব্দির শেষ প্রান্তে প্রাকৃতিকগুলোর বেশিরভাগই হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে বসন্ত, কালোমৃত্যু, এইডস, আফ্রিকার বন-বাদাড়ে থাকা অন্যান্য বীভৎস ভাইরাস। কোনো কোনোটাকে অবলুপ্ত না করে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সামনে এগিয়ে চলার সাথে সাথে মানুষের গায়ে তাদের অনেকের কার্যকারীতা বন্ধ হয়ে গেছে। তবু, প্রকৃতিমাতার সৃষ্টিশীলতাকে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই। কে জানে, ভবিষ্যতের প্রকৃতি হয়ত আরো ভয়ঙ্কর সব রহস্য লুকিয়ে রেখেছে।
তাই সব ধরনের আতঙ্কজনক জিনিসের স্পেসিমেন রেখে দেয়া হয় রেখে দেয়া হয় সায়েন্টিফিক রিসার্চের জন্য। সাবধানে পাহারা দেয়া হয় সেগুলোকে, অবশ্যই। বেরিয়ে এসে মানবজাতির উপর আবার ছড়ি ঘুরাবে এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু কেউ কি নিশ্চিত করে বলতে পারে যে এই লুকিয়ে রাখা জিনিসগুলো বিপদ বয়ে আনবে না?
বিংশ শতাব্দির শেষভাগে স্মলপক্সের শেষ জীবাণুগুলোকে আমেরিকা আর রাশিয়ার কাছে রাখার সিদ্ধান্ত হলে তাই শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সর্বত্র। ভয় ছিল
ভূমিকম্প, যান্ত্রিক গোলযোগ বা সন্ত্রাসী দলের আক্রমণে বেরিয়ে পড়তে পারে জিনিসগুলো।
সবাইকে একটা সমাধান সম্ভষ্ট করে (একেবারে নিখাদ পাগলাটে চরমপন্থি কয়েকজন ছাড়া), এগুলোকে চাঁদে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আলাদা করা পিকো পর্বতের ভিতরে একটা ল্যাবরেটরিতে রাখা হবে। এখানে মানবজাতির আরো অনেক পাগলামির নিদর্শন রাখা হয় পরে।
এমন সব গ্যাস আর কুয়াশা ছিল যার এক বিন্দুই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কোনো কোনো ধর্মীয় সন্ত্রাসীদল বিজ্ঞানে অগ্রসর হয়ে এসব আবিষ্কার বা পুনরাবিষ্কার করে। তাদের বেশিরভাগই বিশ্বাস করত পৃথিবীর শেষ সময় চলে এসেছে এবং তাদের অনুসারীরাই শুধু মুক্তি পাবে)। হয়ত ঈশ্বর সময়ের কথা ভুলে গিয়েছিলেন, তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাকে মনে করিয়ে দিতে হবে।
প্রথম দিকে তাদের লক্ষ্য ছিল সাবওয়ে ট্রেন, আন্তর্জাতিক মেলা, স্টেডিয়াম, পপ কনসার্ট… লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা পড়ে, আহত হয় আরো অনেকে। একবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে নিয়ন্ত্রণে আনা পর্যন্ত এসব চলতেই থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খারাপের ভিতর থেকে ভাল বেরিয়ে আসে- আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পরস্পরকে সহায়তা করতে থাকে সেভাবে, যেভাবে আর কখনো করেনি। এমনকি এও নির্ধারিত হয়ে যায় যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এমন আচমকা বিচিত্রভাবে আসবে না।
এসব এ্যাটাকে ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল উইপনগুলোও পিকোর সংগ্রহে জমা হয়। সেখানেই জমা হয় তখন আবিস্কৃত এ্যান্টিডোটগুলো। আশা করা হয়েছিল এসব জিনিসের সাথে মানুষের আর কোনো সংশ্রব থাকবে না। কিন্তু বিশেষ কিছু প্রয়োজনে যদি কাজে লাগে, সে আশায় এখনো পাওয়া যায় মাটির তলায়। চাঁদে।
পিকো ভল্টের তৃতীয় ক্যাটাগরির আইটেমগুলোকে প্লেগ হিসাবে গণ্য করা গেলেও কখনো কাউকে সরাসরি আহত করেনি। বিংশ শতাব্দির শেষভাগের আগে তাদের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু মাত্র কয়েক দশকে হাজার কোটি টাকার সমতুল্য ক্ষতি করে ফেলেছে। ক্ষতি করতে পারত যে কোনো রোগের সাথে পাল্লা দিয়ে। এরা কোনো প্রাণি নয়, বস্তু নয়, শুধুই ক্ষমতা। মানবজাতির সবচে দামি সেবক, কম্পিউটারের রোগ তারা।
নামগুলো নেয়া হয়েছে মেডিক্যাল ডিকশনারি থেকে ভাইরাস, প্রিয়ন, টেপওয়ার্ম আর তাদের কাজও সেই জীবন্ত জিনিসগুলোর মতোই। কোনো কোনোটা একেবারে নির্মল সামান্য জোক নিয়ে আসে, কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে নিয়ে আসে আচমকা আনন্দ বা বিরক্তি।
বাকিরা সত্যিকার ধ্বংসাত্মক। স্রেফ অকল্যাণ বয়ে আনাই সেগুলোর উদ্দেশ্য।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো ব্যবহৃত হয় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কম্পিউটার চালিত ও নিয়ন্ত্রিণ ব্যাঙ্ক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কজা করার জন্য। সেসব প্রতিষ্ঠান জানতে পারে, তাদের সমস্ত ডাটা উধাও হয়ে যাবে, বিপুল অঙ্কের ডলার একটা এ্যানোনিমাস এ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেই রক্ষা। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ঝুঁকি নিতে চায় না। অধোবদনে দিয়ে দেয় তারা, চুপিসারে। মানুষের কাছে বা ব্যক্তিগতভাবে খাটো হবার ভয় থাকে মনে।