ব্রেইনবক্সের ইন্ডিকেটর লাইট জ্বলছে নিভছে- রিসিভ করছে মেসেজটা।
যে কম্প্রেশনে হালম্যান পাঠাল, তাতে পুরো মেসেজ দেখতে পাকা আধঘন্টা লাগবে পোলের। কিন্তু তার শান্তিময় জীবনে পরিবর্তন আসতে মাত্র দশ মিনিট বাকি।
৩৪. বিচার
‘অবিচ্ছিন্ন, সর্বব্যাপী যোগাযোগের ভুবনে কোনো বিষয় খুব বেশিক্ষণ গোপন করে রাখা যায় না। তাই এ ব্যাপারে মুখোমুখি আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয় পোল।
ইউরোপা কমিটির সদস্যরা ভেঙে পড়ে পোলের এ্যাপার্টমেন্টে। সাতজন। লাকি নাম্বারটা এসেছে চন্দ্রকলার সাতদিন থেকে। কমিটির তিনজন সদস্যের সাথে পোলের এই প্রথম দেখা, যদিও ব্রেইনক্যাপের আগের যুগে সে এত ভালভাবে কাউকে জানতে পারত না…
‘চেয়ারপার্সন ওকনর, কমিটির সদস্যগণ- ইউরোপা থেকে পাওয়া এ মেসেজ আপনারা ডাউনলোড করার আগে আমি কিছু কথা বলতে চাই- সামান্য কিছু, প্রমিজ করছি। কথাগুলো মুখে মুখে বলতেই ভাল লাগবে- এটাই আমার কাছে বেশি ন্যাচারাল। মনে হয় কখনো মনের সাথে মনের যোগাযোগের ব্যাপারটা ভালভাবে নিতে পারব না।
‘আপনারা সবাই জানেন, ডেভ বোম্যান আর হালকে ইউরোপার মনোলিথে ইমুলেশন হিসাবে স্টোর করে রাখা হয়েছে। সময়ে সময়ে মনোলিথ হালম্যানকে
এ্যাক্টিভেট করে। এ্যাকটিভ করে আমাদের উপর চোখ রাখার জন্য।
হালম্যান কিন্তু পুরোপুরি যান্ত্রিক অস্তিত্ব নয়। ডেভ অংশটা এখনো মানবীয় কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে। সামান্য আবেগও আছে তার। একসাথে ট্রেনিং নিয়েছি, বছরের পর বছর ধরে একে অন্যের সমস্ত অনুভূতি জেনেছি- তাই আর যে কোনো মানুষের সাথে যোগাযোগ না করে আমার সাথে কম্যুনিকেট করতে ভালবাসে সে। সম্ভবত এভাবে কাজ করতে গিয়ে উপভোগ করে, কথাটা বেশি শক্ত হয়ে গেলেও…’
‘সে আগ্রহী, উৎসাহী, বন্ধুভাবাপন্ন। যেন বুনো একটা নমুনা তুলে এনেছে মনোলিথ তার কাজের জন্য। টি এম এর স্রষ্টাদের কাছে আমার হয়ত এখনো বুনো।
কিন্তু সেই বুদ্ধিমত্তা এখন কোথায়? হালম্যান জানে জবাবটা। সেই জবাব আমাদের হাড়মাংস জমিয়ে দিবে।
‘আমরা সব সময় যা অনুমান করে এসেছিলাম- মনোলিথ আসলে গ্যালাক্টিক নেটওয়ার্কের টুল। আর কাছের নডটা- যেটা মনোলিথকে নিয়ন্ত্রণ করে সেটা সাড়ে চারশ আলোকবর্ষ দূরে।
‘স্বস্তির জন্য যথেষ্ট কাছে। তার মানে একবিংশ শতাব্দিতে আমাদের ব্যাপারে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে সেটা পৌঁছে গেছে আধ-সহস্রাব্দ আগেই। যদি সেই মনোলিথের- আচ্ছা, তাকে সুপারভাইজার বলা যাক- সাথে সাথে জবাব পাঠিয়ে থাকে, সেটা এসে পৌঁছবে এমনি এক সময়ে। বর্তমান সময়ে।
‘এবং এখন হয়ত তেমন কিছুই ঘটছে। গত কয়েকদিন ধরে মনোলিথ অসংখ্য তথ্যের স্রোত রিসিভ করে। এখন নতুন প্রোগ্রাম সেটআপ করা হচ্ছে, সম্ভবত এসব তথ্যের ভিত্তিতেই।
‘দুর্ভাগ্যবশত হালম্যান শুধু আন্দাজ করতে পারে। মনোলিথের অসংখ্য সার্কিট আর মেমোরি ব্লকের সামান্য কয়েকটায় যাতায়তের সুযোগ আছে তার। চাইলে এর সাথে আলোচনা করতে পারে। আমি এখনো মেনে নিতে পারি না যে এত বেশি ক্ষমতা থাকার পরও মনোলিথের আলাদা কোনো সচেতনতা নেই- এমনকি সচেতনতা সম্পর্কেও তার ধারণা নেই।
এ সমস্যার ঘূর্ণাবর্তে পড়ে আছে হালম্যান হাজার বছর ধরে। অন ও অফ। আমাদের মতো একই সিদ্ধান্তে এসেছে। তার আভ্যরীণ জ্ঞানের জন্য এ সমাপ্তি অনেক বেশি ওজন বহন করে।
‘আমাদের সৃষ্টি করায় নাকি বলব আমাদের পূর্বপুরুষদের মন ও জিন নিয়ে খেলার ফলে যে সমস্যাই হয়ে থাক না কেন এখন সে পরের ধাপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। হালম্যানের মনে হচ্ছে আমাদের কপালে ভাল কিছু নেই। মানুষের মানবজাতির টিকে থাকার সমস্যাটা তার কাছে আগ্রহোদ্দীপক একটা ব্যাপার, এর চেয়ে বেশি কিছু না। আর সে সেজন্য আমাদের সহায়তা করতে চায়।
স্তব্ধ হয়ে থাকা শ্রোতাদের দিকে তাকিয়ে একটু চুপ করে গোল।
‘অদ্ভুত ব্যাপার, আমার একটা স্মৃতি মনে পড়ে গেল… এতে পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্লিজ, খেয়াল করুন…’
‘আমি আর ডেভ একদিন হাঁটছিলাম সাগরপাড়ে, উড্ডয়নের দিন কয়েক আগের কথা। দেখি বালির উপরে একটা বড়সড় বিটল পোকা উল্টে পড়ে আছে। প্রায়ই এমন দেখা যায়, পা উপরে, নাড়াচ্ছে সর্বক্ষণ, সোজা হওয়ার চেষ্টা করছে।
‘গা করলাম না- জটিল কিছু টেকনিক্যাল আলোচনায় মেতে আছি আমরা। সামনেই উড়তে হবে। চিতি। ডেভ কিন্তু খেয়াল করল- সরে গিয়ে পা দিয়ে সোজা করে দিল।
‘আমি প্রশ্ন তুললাম, ‘কাজটা কি ঠিক হল? এখনি এটা উড়ে গিয়ে কারো না কারো মূল্যবান জিনিসের বারোটা বাজিয়ে দিবে। হাসল ডেভ, ‘হয়ত, হয়ত না। আমি এটাকে বেনিফিট অব ডাউট দিয়েছি।’
মাফ চাচ্ছি, আমার মাত্র কয়েকটা কথা বলা উচিৎ ছিল। কিন্ত ঘটনাটা মনে পড়ে যাওয়ায় ভাল লাগছে। এখন দেখুন, হালম্যানের মেসেজের মর্মার্থ এখানেই।
সে মানবজাতিকে বেনিফিট অব ডাউট দিতে চায়…’
‘এখন, প্লিজ, আপনাদের ব্রেইনক্যাপ চেক করুন। রেকর্ডিংটা হই ডেনসিটি ইউ ভি ব্যাঙের উপরে। চ্যানেল একশ দশ। স্বস্তি নিয়ে দেখুন, শুরু করছি…’
৩৫. সাজ সাজ রব
কেউ দ্বিতীয়বার দেখতে চায় না। একবারই যথেষ্ট।
প্লেব্যাক শেষ হবার পর প্রথমে কেউ কোনো কথা বলল না। তারপর চেয়ারপার্সন ডক্টর ওকনর ব্রেইনক্যাপ খুলে ফেলে মাথা দলাই মলাই করতে করতে বলল: