এখন, যে প্রশ্ন করছ তোমরা সর্বক্ষণ… ডেভ কী? আর কী করে সে এবং হাল এমন হল?
আমার সহজ উত্তর, তারা দুজনেই মনোলিথের দানবীয় স্মৃতিতে ডেভ বোম্যান আর হালের সিমুলেশন। বেশিরভাগ সময়ই তারা অকার্যকর থাকে। তার ভাষায়, ঘুমিয়ে থাকে। রূপান্তরিত হবার পর থেকে হাজার বছরের মধ্যে মাত্র বছর পঞ্চাশেক জেগে ছিল।
যখন আমি জিজ্ঞেস করি, এ জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয় কিনা। জবাব দেয়, ‘কেন বীতশ্রদ্ধ হব? আমি আমার কাজ একেবারে ঠিকমত করছি। জবাবটা হালকে মানায়, ডেভ বোম্যানকে নয়, তাই না?
সুইস আর্মি নাইফের সাথে তুলনার কথা মনে আছে তোমাদের? এ মহাজাগতিক ছুরির অসংখ্য অংশের একাংশ এই হালম্যান।
কিন্তু সে একেবারে অকেজো যন্ত্র নয়- জেগে থাকলে, কিছু কিছু নিজস্বতা দেখা দেয়, দেখা যায় স্বাধীনতা- সম্ভবত মনোলিথের নিয়ন্ত্রণের রাশ একটু হাল্কা হয়। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে সে বৃহস্পতি-বিশ্লেষণের যন্ত্রাংশ হিসাবে কাজ করছে। নজর রাখছে গ্যানিমিডের উপর, সর্বোপরি পৃথিবীর উপর। ডেভের পুরনো গার্লফ্রেন্ড, তার মা আর নানাজনের রিপোর্টের ভিত্তি এটাই। আনুবিসেও সেই ঘটনা ঘটিয়েছে।
আরো একটা রহস্যের সুরাহা হয়ে যায় কিন্তু। আমি ডেভকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম, বাকি সবাইকে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে সরিয়ে রাখা হলেও আমাকে ইউরোপায় নামতে দেয়া হল কেন? আমি কিন্তু এটাই আশা করছিলাম।
জবাবটা বোকাটে, একেবারে সরল। মনোলিথ ব্যবহার করেছে ডেভকে হালম্যানকে সময়ে সময়ে। ব্যবহার করেছে আমাদের উপর চোখ রাখার জন্য। আমার উদ্ধারের ব্যাপারটা জানত ডেভ- এমনকি পৃথিবী আর গ্যানিমিড়ে দেয়া আমার মিডিয়া ইন্টারভিউর কিছু কিছু দেখেছে। সত্যি বলছি, আমি এখনো একটু আহত, সে যোগাযোগের কোনো চেষ্টাই করেনি! যাক, আমি আসার পর লালগালিচা তো বিছিয়ে দিয়েছে…
দিম- ফ্যালকন আমাকে নিয়ে বা ছেড়ে উড়ে যাবার আগে আমার হাতে আরো আটচল্লিশ ঘন্টা আছে। আমার মনে হয় না সে সময়ের প্রয়োজন আছে, আমি হালম্যানের সাথে যোগাযোগ করে ফেলেছি; আমরা যে কোনো জায়গায় দেখা করতে পারি। যোগাযোগ করতে পারি আনুবিসে বসেও… সে যদি চায়।
যত দ্রুত সম্ভব গ্যানিমিডে ফিরে যেতে চাই। ফ্যালকন ভাল যান, কিন্তু ভিতরে এর মধ্যেই একটু একটু গন্ধ আসছে, আমার শরীরও চুলকাচ্ছে একটা শাওয়ার নেয়ার জন্য।
আশা করি দেখা হবে তোমাদের সাথে, অচিরেই- বিশেষত টেড খানের সাথে। পৃথিবীতে ফিরে যাবার আগে অনেক কথা বলতে হবে আমাদের।
স্টোর
ট্রান্সমিট
ঙ. সমাপ্তি
ঙ. সমাপ্তি
পরের হাজার চেষ্টা
শুরুর ভুলগুলোকে আর শুধরে দেয় না;
অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে সাগরের বুকে,
তবু সিন্ধুর লবণ কমে না।
এ ই হাউসম্যান
মোর পয়েমস
৩২. সময় এক বহতা নদী
সব মিলিয়ে আগ্রহজাগানিয়া কিন্তু বিশেষ কোনো ঘটনাবিহীন তিন দশকের কথা। সময় আর ভাগ্য মানবজাতির জন্য অনেক কিছু নিয়ে এসেছে। ছিনিয়ে নিয়েছে অনেক কিছু। গ্যানিমিডের জন্য পৃথিবী ছেড়ে যাবার পর অনেক স্রোত বয়ে গেছে সৌরজগতের জগতগুলোর নদ-নদীতে।
প্রচলিত একটা কথায় অনেক সত্য লুকিয়ে আছে অনুপস্থিতি মনকে আরো নরম করে দেয়। ইন্দ্রা ওয়ালেসের সাথে আবার দেখা হবার পর দুজনেই বুঝতে পারে, এত সব যুক্তিতর্ক, কথা কাটাকাটির পরও কেমন করে যেন অনেক কাছে চলে এসেছে তারা। তাদের সম্মিলিত চেষ্টা এখন ডন ওয়ালেস আর মার্টিন পোলের ধমনীতে বয়ে যায়।
হাজার বছর পর একটা পরিবার গড়ে তোলা অনেক ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার। প্রফেসর এ্যান্ডারসন ব্যক্তিগতভাবে সায় দেয়নি…
‘তুমি অনেক দিক দিয়ে ভাগ্যবান, বলেছিল সে পোলকে, রেডিয়েশন ড্যামেজ সামান্য অবাক হয়েছি দেখে, ইনট্যাক্ট ডি এন এ থেকে অনেক রিপেয়ারের কাজ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আরো কিছু টেস্ট না করে জেনেটিক ইন্টেগ্রিটির নিশ্চয়তা দিতে পারি না। উপভোগ কর সঙ্গ, কিন্তু আমরা ওকে করার আগে পরিবার শুরু করোনা।
টেস্টগুলোয় আরো অনেক সময় লাগে। প্রফেসর এ্যান্ডারসনের ভয় ছিল, আরো রিপেয়ার করতে হবে। ভয় ছিল সর্বক্ষণ। এ্যান্ডারসনের মতে পোল আর কিছুদিন পরে এলে হয়ত রেডিয়েশন ড্যামেজ মারাত্মক হত। দেখা গেল মার্টিন আর ডন একেবারে নিখুঁত। নির্দিষ্ট সংখ্যক মাথা, হাত, পা আছে। বেশ বুদ্ধিমান আর স্মার্ট হয়েছে, বাবা-মায়ের আদর পেয়ে মাথায় ওঠেনি। পনের বছর পর দুজনেই স্বাধীনতা চায়, তার আগ পর্যন্ত মা বাবাই তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড। সোশ্যাল এ্যাচিভমেন্ট রেটিং ভাল হওয়ায় তাদের আরো একটা সন্তান নেয়ার জন্য রীতিমত উৎসাহ দেয়া হয়। কিন্তু বিচিত্র সৌভাগ্যের উপর র করে আরো একবার ঝুঁকি নেয়ার কোনো মানে হয় না।
পোলের জীবনে একটা দূর্ঘটনা পুরো সৌর সমাজকে নাড়া দিয়েছিল। ক্যাপ্টেন চ্যান্ডলার আর তার ক্রু গোলিয়াথে থেকে যথারীতি ধূমকেতুর কোর সংগ্রহ করার সময় বিস্ফোরিত হয় তাদের যানটা। শতছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে কালো মহাকাশে। খুব নিচু তাপমাত্রায় থাকা অস্থিতিশীল অণুর বদৌলতে এমন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। ধুমকেতু সগ্রাহকদের মাথার উপর খড়গ হিসাবে সব সময় এ ঝুঁকি থাকে। চ্যান্ডলারের ক্যারিয়ারেই বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে। কেউ জানে না এমন দূর্ঘটনা কখন ঘটতে পারে।