আর হাল- সেও এখানে ছিল, সন্দেহের প্রশ্ন ঠে না। বেশিরভাগ সময় আমি ধরতে পারিনি কে কথা বলছে। কোনো কোনো মেডিক্যাল রেকর্ডে মাল্টিপল পার্সোনালিটির কথা থাকে না? ব্যাপারটা তেমন।
প্রশ্ন করেছিলাম কী করে এমন হল- আর সে- তারা- ড্যামইট। হালম্যান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। আগেই বলে রাখি, ভুল হতে পারে, কিন্তু এ হাইপোথিসিসে এসে পৌঁছেছি।
অবশ্যই- এ মনোলিথগুলোই চাবি। না ভুল বললাম, শুধু চাবি না। তাদের কাজ আরো ব্যাপক। কে যেন বলেছিল, এরা কসমিক সুইস আর্মি নাইফ? সকল কাজের কাজি? তোমরা এখনো এগুলো ব্যবহার কর, আমি দেখেছি, যদিও সুইজারল্যান্ড আর তার সেনাবাহিনী অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। এ হল জেনারেল পারপাস ডিভাইস। যা দরকার তার সবই করতে পারে। অথবা যা করার জন্য প্রোগ্রাম করা হয়েছে তার সবই…।
আফ্রিকায় ফিরে যাও, মোটামুটি চল্লিশ লাখ বছর আগে, এটাই আমাদের কোমরে বিবর্তনের সাথি কষিয়েছিল, তা কাজটা ভাল হয়ে থাক আর খারাপ… তারপর আমরা দোলনা থেকে বেরিয়ে আসব, এসে চাঁদে তার সঙ্গীকে খুঁড়ে বের করব, সে আসায় ঘাপটি মেরে বসে ছিল। আন্দাজ করেছি আগেই, পরে ডেভ স্বীকার করল আর কী!
বলেছি না, মানবিক অনুভূতিগুলো তেমন আর নেই, তোতা হয়ে গেছে একটা ব্যাপার কিন্তু এখনো নষ্ট হয়নি, বরং বেড়েছে- সে শিখতে চায়। অনেক শিখতে চায়। শিক্ষার কী বিচিত্র সুযোগ এখন তার হাতে।
বৃহস্পতির মনোলিথ তাকে শুষে নেয়ার পর ভাল কোনো শব্দ পেলাম না, শুষে নেয়াই থাক অনেক কিছু পেয়ে গেল। এটা তাকে ব্যবহার করেছিল দখল করা জিনিসের মতো–পৃথিবীকে বিশ্লেষণ করার উপায় হিসাবে। সেও এটা ব্যবহার করছে। হালের সহায়তা নিচ্ছে। হাল ছাড়া সুপার কম্পিউটারের ধারা আর কে ভালভাবে বুঝবে? দুজনে মিলে মনোলিথের সমস্ত স্মৃতি চষে ফেলছে, উদ্দেশ্য খুঁজে বের করবে। বের করবে লক্ষ্য।
এখন, একটা ব্যাপার বিশ্বাস করা কষ্টকর। মনোলিথ অসম্ভব শক্তিমান যন্ত্র বৃহস্পতির কী হাল করেছে একবার ভেবে দেখ!- কিন্তু এই সব। চলছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। কোনো চেতনা নেই। নেই কোনো জৈব অস্তিত্ব আমরা যাকে মন বলি আর কী- তা নেই। আমি যে গ্রেট ওয়ালকে কষে লাথি দেয়ার চিন্তা রেখে বলতে চাই, কেউ আছে এখানে।
আসল জবাব হল, কেউ ছিল না। হাল আর ডেভ ছাড়া কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে…
আরো খারাপ খবর হল, এর কিছু কিছু সিস্টেম বিগড়ে যাওয়া শুরু করেছিল; ডেভ সিদ্ধান্তে পৌঁছে, জিনিসটা অকাটমূর্থে পরিণত হচ্ছে। কারণ, চার মিলিয়ন বছর মুখের কথা নয়, এখন একবার সার্ভিস চেক করা উচিৎ।
তার সিদ্ধান্ড, মনোলিথ একবার হলেও ভুল কাজ করেছে। শব্দটী জুতসই নয়, হয়ত তার বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তে সামান্য হেরফের হয়ে গেছে…
যে হিসাবেই দেখ না কেন, খবরটা ভীতিকর। হাজার বছর আগের কথায় আবার ফিরে যাই। লিওনভ উড়ে গেল বৃহস্পতির এলাকায়। এত সময়ের মধ্যে কেউ ধারণাও করেনি…
আমাকে ব্রেইনক্যাপের সাথে যুক্ত করে দেয়ায় অনেক ধন্যবাদ। অবশ্যই, জিনিসটা অমূল্য, এ ছাড়া জীবনের কথা এখন ভাবা যায় না। কিন্তু এখন, এটা এমন এক কাজ করছে যা করার কথা ছিল না, যা করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। কিন্তু কাজটা করছে ভালভাবেই।
হালম্যানের দশ মিনিট সময় লেগে গেল এর কাজের ধারা বের করে একটা ইন্টারফেস যোগ করতে। এখন আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে মন থেকে মনে। এখন কাজের গতি বেড়ে গেল, বেড়ে গেল বোঝার গতি। সেই সাথে বেড়ে গেল তাদের কথার গতি। বারবার থামিয়ে থামিয়ে আমি মনে করিয়ে দিলাম, আরো ধীরে কথা বলতে হবে…
এখানেই আসল ব্যাপার। আমার মনের মধ্যে ডেভ ঢুকিয়ে দিল মনোলিথের সেই স্মৃতি যখন সে ডেভকে গ্রাস করছে। মনোলিথের সমস্ত চিন্তা-চেতনা কর্মপদ্ধতি চলে এল। আবার জিজ্ঞেস করোনা কী করে করল তারা কাজটা! পাঠিয়ে দিয়েছি তোমার ব্রেইনক্যাপে, পাঠিয়ে দিয়েছি গ্যানিমিডে। এবার তোমরা সেসব নিয়ে ভেবে মরা ডাউনলোড করতে গিয়ে আবার বিষম খেয়োনা।
ওভার টু ডেভ বোম্যান এট জুপিটার, আর্লি টুয়েন্টি ফাস্ট সেঞ্চুরি…
৩০. তাসের ঘর
লাখ কিলোমিটার লম্বা চৌম্বক শক্তির রেখা, বেতার তরঙ্গের আচমকা বিস্ফোরণ, পৃথিবীর চেয়ে চওড়া ইলেক্টিফাইড প্লাজমার ঝর্ণা- এসবই তার কাছে এত স্পষ্ট যতটা স্পষ্ট দেখা যায় নানা রঙে বর্ণিল মেঘে ঢাকা গ্রহের আকাশ। জটিল গড়নগুলো বুঝতে পারে সে, বুঝতে পারে এদের মধ্যকার সম্পর্ক। কেউ কখনো ভাবেনি এতটা সুন্দর আর বিচিত্র হতে পারে বৃহস্পতি।
গ্রেট রেড স্পটের গর্জন করতে থাকা হৃদয়ের ভিতরে চলে যায়। চারপাশে পাক খাচ্ছে মহা লাল বিন্দু সৌরজগতের বৃহত্তম ঝড়, যার ভিতরে তিনটা পৃথিবী রেখে দেয়া যায়। ভিতরে মহাদেশের মতো বিশাল বিশাল সব আলোর ঝলক খেলে যাচ্ছে। জানে, কেন এটা শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে তান্ডব চালাচ্ছে, কেন পৃথিবীর হ্যারিকেনগুলোর মতো থিতিয়ে পড়ে না। হাইড্রোজেন বাতাসের পাতলা চিৎকার হারিয়ে যায় সে আরো নিচে নামার সাথে সাথে। সেখানে হাইড্রোকার্বনের মোমের মতো, ফাপা বিশাল বিশাল সব পর্বত। উপর থেকে ভারি জৈবযৌগ নেমে আসে। থিতু হয় এসব পর্বতমালার গায়ে। তরল পানি থাকার মতো উত্তাপ আছে, কিন্তু সমুদ্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো গ্যাসিয় জগন্টায় পানির জন্য নেই কোনো স্থান।