কী ধীর তাদের গতি। আমি নিশ্চিত, তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টাটা অনেক বিরক্তিকর হবে, আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও….
জিয়াকে মুড়ে দেয়া প্রাণিটার মতোই, আকারে অনেক ছোট,.. ঠিকই, ছোট গাছের কথা মনে পড়ে যায়। আধ ডজন ছোট কান্ড দিয়ে এগিয়ে আসছে। শত শত শাখা। আরো বিভক্ত, আরো বিভক্ত… আরো। আমাদের জেনারেল পারপাস রোবটের মতো বলা চলে…
মানুষের আকৃতি নকল করা যে অকার্যকর তা ভেবে বের করতে আমাদের কত সময় লাগল। কাজের গতি পেতে হলে অনেক অনেক হোট প্রত্যঙ্গ লাগবে। আমরা যখনি কোনো কিছু আবিষ্কার করে গর্বিত হই, তখনি দেখতে পাই প্রকৃতি মাতা আগেই তা করে রেখেছে….
হোটগুলো কী কিউট, তাই না? ঝাঁকড়া ঝোঁপের মতো। কীভাবে প্রজনন করে? বাডিংয়ের মাধ্যমে আগে বুঝিনি, কী সুন্দর তারা। কোরাল রিফের মাছের মতোই বর্ণিল, রঙিন। সম্ভবত একই কারণে… সঙ্গীর খোঁজে, অথবা ক্ষুধার তাড়নায়…
বলেছিলাম নাকি, তারা ঝোঁপের মতো দেখতে? কথাটাকে বদলে নিন, গোলাপের ঝাড়। গায়ে কাঁটার মতো অংশ আছে, কারণও আছে এর পিছনে, আমরা জানি না…
হতাশ হলাম। আমাকে খোঁড়াই পরোয়া করছে তারা। সবাই চলছে নগরীর দিকে, যেন স্পেসক্রাফট দেখে দেখে চোখ বিষিয়ে গেছে, আর দেখে কী হবে… একটু বামে… হয়ত এবার কাজে লাগবে… আশা করি শব্দতরঙ্গ চিনতে পারে বেশিরভাগ সামুদ্রিক প্রাণিই পারে- কে জানে, এ পাতলা বায়ুমন্ডল আমার কণ্ঠকে বেশিদূর নিয়ে যাবে কিনা…
ফ্যালকন- এ্যাটারনাল স্পিকার…
.
হ্যালো, শুনতে পাচ্ছ আমাকে? নাম আমার ফ্র্যাঙ্ক পোল… উহ.. আমি শাক্তি নিয়ে এসেছি সমগ্র মানবজাতির পক্ষ থেকে…
আমি কি বোকা বনে গেলাম? এর চেয়ে ভাল আর কোনো পথ পাচ্ছি না। যোগাযোগের। রেকর্ডের জন্য ব্যাপারটা ভালই…
কারো কোনো উত্তেজনা নেই। বড়-ছোট সবাই এগিয়ে যাচ্ছে ইগলুর দিকে। সেখানে গিয়ে কী কর্মটা করে কে জানে! সম্ভবত ফলো করতে হবে আমাকে সম্ভবত কোনো ভয় নেই, আমি তাদের তুলনায় অনেক বেশি গতিশীল
হঠাৎ স্মৃতি এল মনের গহিন থেকে। সব দায়িত্ব ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে নেয়ার আগের কথা মনে পড়ে। সব প্রাণি এক দিকে যাচ্ছে- অফিস-বাসা অফিস-বাসা করা ছকবাঁধা জীবনের মানুষের মতো লাগছে তাদের।
সবাই হারিয়ে যাবার আগে আরেকবার চেষ্টা করা যাক…
.
হ্যালো দেয়ার-ফ্র্যাঙ্ক পোল বলছি, পৃথিবী নামের এক সবুজ গ্রহ থেকে এসেছি আমি। শুনতে পাচ্ছ আমার কথা?
আমি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছি, ফ্র্যাঙ্ক। দিস ইজ ডেভ।
২৯. মেশিনে ভূত
প্রথম মুহূর্তে ফ্র্যাঙ্ক পোল বিস্ময়ে থ বনে যায়। তারপরই শিহরণ বয়ে যায় শরীরে। আসলে যোগাযোগের ব্যাপারে মনে কখনো নিশ্চয়তা ছিল না। ইউরোপাদের সাথে, মনোলিথের সাথে বা ডেভ বোম্যানের সাথে যোগাযোগের কোনো আশাই ছিল না। কিছুক্ষণ আগেও আক্ষেপের সাথে চিৎকার করেছিল মহাপ্রাচীরের দিকে তাকিয়ে, বাড়িতে কেউ আছেন?
হ্যাঁ, এত অবাক হবার f, কোনো না কোনো বুদ্ধিমত্তা নিশ্চয়ই তার গ্যানিমিড থেকে আসার ব্যাপারটা টের পায়। এখানে নামার অনুমতি দেয়। টেড খানের কথা আরো সিরিয়াসভাবে নেয়া উচিৎ ছিল।
‘ডেত, ধীরলয়ে বলে সে, সত্যি তুমি?
আর কে হবে? মনের এক অংশ প্রতিবাদ করে। তবু, প্রশ্নটা একেবারে বোকার মতো করা হয়নি। কণ্ঠে একটু যান্ত্রিকতার সুর, যেন কোনো মানুষের কথা নয়,
অর্পিত ব্যাপার। আসছে ফ্যালকনের ছোট কন্ট্রোল বোর্ভ স্পিকার থেকে।
হ্যাঁ, ফ্র্যাঙ্ক, আমি ডেভ।
একটু নিরবতা। তারপর একই কষ্ঠ কথা বলে ওঠে।
হ্যালো, ফ্র্যাঙ্ক। আমি হাল।
* * *
মিস প্রিঙ্গল
রেকর্ড
আসলে- ইন্দ্রা, দিম- আমার ভাল লাগছে, সব রেকর্ড করেছিলাম, নাহলে কখনোই আমার কথা বিশ্বাস করতে না…
মনে হয় এখনো ধাতে সয়নি ব্যাপারটা। হাজার হলেও, আমি কী করে এমন কাউকে বন্ধু ভেবে নিই যে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল প্রায় সফলভাবে, হোক হাজার বছর আগে…এখন বুঝতে পারি, হালকে দোষ দেয়া যায় না। দোষ দেয়া যায় না কাউকে। ভাল ধরনের এক উপদেশ আমি সব সময় মনে রাখি, ‘অসম্পূর্ণতাকে কখনো দোষ দিওনা।
আমি কী করে অজানা অচেনা প্রোগ্রামারদের দোষ দিই?
ঠিক ধাতস্থ হতে পারিনি। কিছুক্ষণের জন্য ডেকে চলে যেতে বলেছিলাম, তার সাথে দেখা করার জন্য এত অন্যায়, ষড়যন্ত্র আর কষ্ট করার পরও। মনে হয় না আঘাত দিয়েছি, ভিন্ন কিছুতে পরিণত হবার পর তার ভিতরে ফিলিংস বলে কিছু আছে, তা হতে পারে না…
সে কী- ভাল প্রশ্ন। সে আসলেই ডেভ বোম্যান- কি অনেকটা বইয়ের সারাংশের মতো। তুমি জান একটা এ্যাবস্ট্রাক্ট কী করে সব তথ্য বহন করতে পারে কিন্তু লেখকের মনোভাবের বিন্দুমাত্র চিহ্ন বহন করে না। কিন্তু কখনো কখনো মনে হয়েছে। পুরনো ডেভের ছিটাফোঁটা মনে হয় আছে তার ভিতরে। আমার সাথে দেখা হওয়ায় তার ভাল লেগেছে কিনা তা বলতে পারব না, একেই বলে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। একটু সন্তুষ্ট… এটুকু বোঝা যায়। আর আমার কথা বলতে গেলে? আমি এখনো কনফিউজড। একবার ভেবে দেখ, অনেকদিন পর দেখা হল পুরনো বন্ধুর সাথে, তারপর উপলব্ধি করলে, সে আর সেই মানুষটা নেই। বদলে গেছে। আমাদের সময় পার্থক্যওতো হিসাবে ধরতে হবে- হাজার বছর। তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার সামান্য সামান্য অংশ নিয়ে কথা বলেছে। আমার মাথা গুলিয়ে গেছে আরো।