ভাল মানুষ ডেভ। নিজেকে শোনায় সে। আমার ভাবতেই হবে- এক মিনিট। আমি নিশ্চয়ই এখন আর ডিসকভারিতে নেই। নিশ্চয়ই পৃথিবীতে ফিরে যাবার মতো লম্বা সময় জুড়ে অজ্ঞান ছিলাম না।
তার কল্পনার লাগাম ছাড়া ঘোড়া থেমে গেল ম্যাট্রন আর দুজন নার্স আসার সাথে সাথে। তাদের পরনে সেই পুরনো ইউনিফর্ম। সাদা। তারা যেন অবাক হয়ে গেছে। তাহলে কি ফ্র্যাঙ্ক পোল আগেভাগেই জেগে গেল। ভাবনাটা তাকে একটু আমোদিত করে।
‘হ্যালো!’ অনেক চেষ্টা কসরৎ করে বলে ফেলে সে, ভোকাল কর্ডের কী সমস্যা হল কে জানে! “আমার খবর কী?
ম্যাট্রন সুন্দর একটা হাসি দিল। তারপর মেয়েটা নিজের ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে ইশারায় জানাল, খবরদার, কথা বলার চেষ্টা করোনা।
এরপরই নার্স দুজন তাদের পেশাদারি দক্ষতার সাথে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সব চেক করে দেখা শুরু করে। পালস, তাপমাত্রা আর রিফ্লেক্স খতিয়ে দেখে। একজন তার হাতটাকে তুলে ধরে আবার ছেড়ে দিল, পোল টের পেল যে কিম্ভূত কিছু একটা ঘটছে। খুব আস্তে আস্তে পড়ে গেল হাতটা, পৃথিবীর বুকে হলে সেটার ধপাস করে পড়ে যাবার কথা ছিল। নড়ার চেষ্টা করে বাকিটা বুঝে নিল সে।
আমি অবশ্যই কোনো না কোনো গ্রহে বা কৃত্রিম মহাকাশ স্টেশনে আছি যেখানকার গ্র্যাভিটি পৃথিবীর চেয়ে কম।
প্রশ্ন করবে এমন সময় ম্যাট্রন তার গলায় কিছু একটা চেপে দিল। স্বপ্নহীন। ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল সে। অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে একটা অন্য চিন্তা মাথায় ঢুকতে পারল কোনোমতে।
কী অবাক ব্যাপার- এতক্ষণ আমার সাথে থাকার সময় তারা একটা কথাও বলল না কেন?
৩. আদ্যিকালের মানুষ
আবার জেগে ওঠার পর দেখল ম্যাট্রন আর নার্স দুজন দাঁড়িয়ে আছে বিছানার পাশে। কোনোক্রমে নিজেকে সামলে নিল পোল।
‘কোথায় আমি? তোমরা নিশ্চয়ই বলতে পারবে!’
নময় করল। যেন জানে না কী বলতে হবে। এরপর খুব ধীরে ধীরে মুখ খুলল ম্যাট্রন, আলতো করে তুলে আনল শব্দগুলো ধীরলয়ে, সব ঠিক আছে, মিস্টার পোল। প্রফেসর এ্যান্ডারসন এক মিনিটের মধ্যে হাজির হবে এখানে… ব্যাখ্যাটা সেই করবে।
কী ব্যাখ্যা করবে? ভেবে পায় না পোল। যাক, মেয়েটা অন্তত ইংরেজি বলতে পারে, যদিও তার উচ্চারণের আগামাথা ধরতে পারছি না কিছুই…
এ্যান্ডারসন নিশ্চয়ই এগিয়ে আসছে, না হলে দরজা খুলে যাবে কেন! কিন্তু দরজার অন্য প্রান্তে তাকিয়েই শিউরে উঠল পোল। নিজেকে খাঁচায় আটকানো জম্ভ বলে মনে হল। বাইরে থেকে অনেকেই চেয়ে আছে তার দিকে।
প্রফেসর এ্যান্ডারসন বেটেখাটো এক লোক। প্রথম নজরে মনে হতে পারে তার পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে- চাইনিজ, পলিনেশিয়ান, নরডিক কোনোটাই পুরোপুরি নয়। ডান হাতের তালুটা তুলে নিল লোকট, হ্যান্ডশেক করল।
‘আপনাকে একটু সুস্থ দেখাচ্ছে দেখে ভাল লাগছে, মিস্টার পোল… দ্রুত আপনাকে উপরে নিয়ে যাব।’
আবারো দ্বিধায় ফেলে দেয়া উচ্চারণ, কোন দেশের কে জানে! কিন্তু সেই কণ্ঠের আড়ালে লুকিয়ে আছে দৃঢ়তা। সব যুগে চিকিৎসকরা যে নিশ্চয়তার সুরে কথা বলে সে সুরের খোঁজ পাওয়া যায়।
কথাটা শুনে ভাল লাগল, কিন্তু আপনি যদি দয়া করে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দেন তো…’
‘অবশ্যই। অবশ্যই। কিন্তু আমাকে একটু সময় দিতে হবে। এক মিনিট।’
এ্যান্ডারসন নিচু স্বরে খুব দ্রুত কথা বলল ম্যাট্রনের সাথে। মাত্র কয়েকটা শব্দ
চিনতে পারল সে। অনেকগুলোর কোনো মানেই পেল না। এরপর ম্যাট্রন নড করল নার্সদের দিকে ফিরে। সাথে সাথে তারা একটা ওয়াল কাপবোর্ড তৈরি করে নিল। একটা পাতলা ধাতব ব্যান্ড দিয়ে পোলের মাথা মুড়ে দিবে তারা, বোঝা যায়।
‘এটা আবার কীজন্য?’ প্রশ্ন তুলল সে সেসব কঠিন রোগিদের মতো করে যারা সর্বক্ষণ ডাক্তারদের কানের পোকা বের করে ফেলে কী হচ্ছে তাদের সাথে তা জানার জন্য। ই ই জি রিডআউট’।
প্রফেসর, ম্যাট্রন আর নার্সরা বিস্মিত ভঙ্গিতে দৃষ্টি বিনিময় করল।
‘ও- ইলেক্টো… এনচেপ… এলো… গ্রাম, খুব ধীরে বলে সে, যেন স্মৃতির গহিন থেকে তুলে আনতে পারছে না কথাগুলো। ইউ আর কোয়াইট রাইট। আমরা আপনার ব্রেন ফাংশন তলিয়ে দেখতে চাই।’
আমার মস্তিষ্ক তখনি কাজ করবে যখন আপনারা নাছোড়বান্দার মতো আমাকে ধরে না রেখে একটু ভেবে নিতে দিবেন! মনের খেদ লুকিয়ে রাখতে পারছে না পোল। যাক, কোনো একটা সমাধানের কাছে আসছি আমরা।
মিস্টার পোল,’ বলল এ্যান্ডারসন, এখনো কণ্ঠে সতর্কতার ছোঁয়া, যেন কোনো ভিনদেশি ভাষা কচলে তেতো করে ফেলছে, আপনি জানেন, অবশ্যই, যে আপনি আপনি একটা খুব নচ্ছাড় টাইপের এ্যাক্সিডেন্টে পড়েছিলেন… ডিসকভারির বাইরে কাজ করার সময়…’
পোল নড় করল। মনে আছে তার।
‘আমার একটু সন্দেহ হয়, নিরস কষ্ঠ পোলের, ‘সেই “ডিজএ্যাবল” টা আসলে খাটো করে দেখানো হয়েছিল।
দেখেই বোঝা যায়, বেশ হালকা বোধ করছে এ্যান্ডারসন। খুব ক্ষীণ একটা হাসির রেখা ছড়িয়ে যায় তার মুখ জুড়ে।
‘আলবৎ! বলুন দেখি কী হয়েছিল… মানে আপনি কী মনে করেন?
যাক, কী বলব, আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ার পর ডেভ বোম্যান উদ্ধার করে আনল। ডেভ কেমন আছে? কেউ কোনো জবাব দিবে না?’
‘সময়ে থলির সব বিড়াল বেরিয়ে আসবে… সবচে খারাপ হলে কী হতে পারে?