স্থায়ী পদ্ধতিটা কী রকম?’
‘লেজার স্কাল্প ট্রিটমেন্ট। গোড়া থেকে ফলিকল মেরে ফেলে।‘
‘হুম… পরে পাল্টানো যায়?’
‘ধরে নিতে পারেন যায় না। কাজটা ভজঘট লাগিয়ে দিবে। ব্যথা ট্যথা পাবেন। সময় লেগে যাবে হপ্তা কয়েক।‘
‘তাহলে আগে দেখতে হবে চুল ছাড়া আমাকে দেখায় কেমন। স্যামসনের কপালে কী ঘটেছিল সেটা ভুলে যাবার চেষ্টা করব।‘
‘কে?’
‘অনেক পুরনো এক বইয়ের চরিত্র। ঘুমিয়ে থাকার সময় তার গার্লফ্রেন্ড কচ করে চুল কেটে দিয়েছিল। জেগে ওঠার পর বেচারা সমস্ত শক্তি খুইয়ে বসে।‘
‘ও, এবার মনে পড়েছে- একেই বলে মেডিক্যাল সিম্বলিজম।‘
‘তবু, দাড়ি হারাতে কোনো আপত্তি নেই আমার। দিনকে দিন শেভ করতে করতে হাপিয়ে উঠেছি।‘
ব্যবস্থা নিচ্ছি আমি। আর কোন ধরনের উইগ পছন্দ করেন?
হেসে উঠল পোল। চারপাশের সবাই যে পাকাপাকিভাবে টাকমাথা সেটা আবিষ্কার করতে পোলের একটু সময় লাগল। সময় লাগল মেনে নিতেও। তার নার্স দুজনেই এর মধ্যে কৃত্রিম চুল সরিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলছে, আরো কয়েকজন টেকো স্পেশালিস্ট তার মাইক্রোবায়োলজিক্যাল টেস্টের জন্য এলে মেয়েগুলো মোটেও অস্বস্তিতে পড়ে না। এত বেশি চুলছাড়া মানুষ আশপাশে আর কখনো দেখেনি সে। জীবাণুর বিরুদ্ধে অশেষ যুদ্ধে এটাই যে মেডিক্যাল সায়েন্সের সর্বশেষ পদক্ষেপ তা বোঝা যায়।
প্রফেসর এ্যান্ডারসন সময় নষ্ট করার মানুষ নয়। সেদিন বিকালেই বিকট গন্ধওয়ালা কী এক ক্রিম পোলের মাথায় মাখিয়ে দিল নার্সেরা। ঘন্টাখানেক পরে সে যখন আয়নায় নিজেকে দেখে, প্রথমে চিনতেই পারে না। আসলে, বলে সে আপন মনে, আমার মনে হয় একটা পরচুলার ধারণা মন্দ নয় মোটেও…
ব্রেইনক্যাপ ফিটিঙে আরো একটু বেশি সময় লাগল। প্রথমে একটা মন্ড বানানো হবে। তাকে বসে থাকতে হবে অনড়, যেন প্লাস্টারটা সেট হয়ে যায়। মনে মনে ক্ষীণ আশা, তারা বলবে পোলের মাথাটা ঠিক শেপে নেই যে ব্রেইনক্যাপ বসানো যাবে।
একটু পর নার্সেরাই নার্ভাস হয়ে যায়- কঠিন সময় পেরিয়ে যেতে যেতে পোল বলে, আউচ- ব্যথা করছে তো!
এবার স্কালক্যাপের পালা। নস্টালজিক চিন্তা ভর করে মনের ভিতরে- আহা, আমার ইহুদি বন্ধুরা এখন যদি দেখতে পেত। কয়েক মিনিট পর এত বেশি স্বাভাবিক লাগে যে সে এটার অস্তিত্বের কথাই ভুলে যায়।
ইন্সটলেশনের জন্য প্রস্তুত সে। সময় এসে গেছে। আধ মিলিয়ন বছরের চেয়েও বেশি বয়েসি মানবজাতির কথা মনে পড়ে যায়।
.
‘চোখ বন্ধ করার কোনো দরকার নেই, টেকনিশিয়ান বলল, লোকটাকে “ব্রেইন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল, সংক্ষেপে তাদের ব্রেইনম্যান” বলা হয়, সেটআপ শুরু হয়ে গেলে আপনার সমস্ত ইনপুট নিয়ে নেয়া হবে। চোখ ভোলা থাক আর বন্ধ, তাতে কোনো উনিশ বিশ হবে না। কি দেখতে পাবেন না আপনি।
কে জানে, সবাই আমার মতো এতটা নার্ভাস হয়ে পড়ে কিনা, প্রশ্ন তোলে পোল নিজের কাছে। আমার নিজের মনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখার এই কি শেষ মূহুর্ত? তবু, একালের টেকনোলজির উপর বিশ্বাস রাখতে শিখেছি আমি। অন্তত এখন পর্যন্ত এরা আমাকে ঠকায়নি। অবশ্যই, সেই পুরনো দিনের কথাটা ভুলে গেলে চলবে না, ‘দেয়ার ইজ অলওয়েজ এ ফাস্ট টাইম…’
যেমনটা কথা দেয়া হয়েছিল, সে কি অনুভব করছে না। মাথার খুলি কামড়ে ধরে ন্যানোওয়্যার একটু একটু করে গরম হয়ে উঠছে, টের পাওয়া যায়। এখনো অন্য সব অনুভূতি টনটনে একেবারে স্বাভাবিক। যখন সে পরিচিত ঘরটার খোঁজে চারপাশে তাকায়, দেখা গেল সব ঠিকই আছে।
ব্রেইনম্যানও একটা কালক্যাপ পরে আছে, পোলেরটার মতোই তার লাগানো। সাথে একটা ইকুইপমেন্ট, বিংশ শতাব্দির ল্যাপটপ কম্পিউটারের সাথে গুলিয়ে ফেলা যাবে সেটাকে সহজেই। আশ্বস্ত করার ভঙ্গি তার হাসিতে।
‘রেডি? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সে।
‘রেডি, যেমনটা আমি সব সময় থাকব। জবাব ছুঁড়ল পোলও।
আস্তে আস্তে নিভু নিভু হয়ে এল আলো। হারিয়ে গেল চোখের আড়ালে। ঝপ করে নেমে এল নিঝুম নিরবতা। টাওয়ারের মৃদু গ্র্যাভিটিও যেন ভুল করে তার উপর থেকে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছে মুহূর্তে। যেন কোনো ণ শূন্যতার উপর ভাসছে; পুরোপুরি অন্ধকার নয় চারপাশটা। সে এমন অঞ্চলকে চেনে, আন্ট্রা ভায়োলেট আসার ঠিক আগের যে আলোকে মানুষ কিছু কিছু দেখতে পায়, সে অঞ্চলে আছে যেন। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কাছে ডুবতে থাকার সময় একবার সে এমন অভিজ্ঞতার কাছাকাছি পৌঁছেছিল। ক্রিস্টালাইন শূন্যতার ভিতর দিয়ে শত শত মিটার নিচে তাকিয়ে থেকে গুলিয়ে উঠেছিল ভিতরটা। একাকীত্বের অসম্ভব এক যন্ত্রণা মুচড়ে দিচ্ছিল ভিতরটাকে। আতঙ্কটা কেমন করে যেন বেড়ে যাচ্ছিল প্রতি মুহূর্তে। বলাই বাহুল্য, সে কখনো স্পেস এজেন্সির সাইকিয়াট্রিস্টদের কাছে এ কথা ভুলেও উচ্চারণ করেনি…
অনেক অনেক দূর থেকে একটা গমগমে স্বর এসে তার শূন্যতাকে কাঁপিয়ে দিল। কিন্তু কঠটা কানে কানে আসেনি। এসেছে মস্তিষ্কের প্রতিধ্বনির গোলকধাঁধা থেকে।
ক্যালিব্রেটিং স্টার্টিং। শুরু হচ্ছে মান নির্ণয়। একটু পর পর আপনাকে প্রশ্ন করা হবে- আপনি মনে মনে উত্তর দিতে পারেন, আবার পারেন ভোকালি। বুঝতে পারছেন?
হ্যাঁ। বলল পোল । জানে না ঠোঁট নড়ল কিনা তা জানার আর কোনো উপায় নেই।