আটলান্টা, ডিসেম্বর একত্রিশ, দুহাজার…
‘দিস ইজ সি এন এন ইন্টারন্যাশনাল, নতুন সহস্রাব্দের আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি, নতুন সহস্রাব্দ তার সব প্রতিশ্রুতি, ভাল আর মন্দ দিক নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে আসছে…
কিন্তু ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর আগে, চলুন এক হাজার বছর পিছিয়ে যাওয়া যাক, প্রশ্ন করা যাক আমাদের: “এক হাজার সালের কোনো লোক কি দূর থেকে আমাদের পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা জানতে পারত বা বুঝতে পারত, জাদুমন্ত্রের মাধ্যমে তাকে যদি নিয়ে আসা হত এত দূরে?”
যতটুকু প্রযুক্তিকে আমরা প্রযুক্তি হিসাবে ধরি তার প্রায় পুরোটাই গড়ে উঠেছে এ সহস্রাব্দের শেষ প্রান্তে এসে। বেশিরভাগই গত দুশ বছরে। স্টিম ইঞ্জিন, ইলেক্ট্রিসিটি, টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা, এ্যাভিয়েশন, ইলেক্ট্রনিক্স এবং মাত্র একটা জীবদ্দশায়, নিউক্লিয়ার এ্যানার্জি এবং স্পেস ট্রাভেল অতীতের সবচে বড় বড় মনগুলোও এসব দেখেশুনে ভড়কে যেত না কি? কী ভাবতেন তারা? মহান আর্কিমিডিস অথবা লিওনার্দোর জড় উপড়ে যদি কোনোভাবে আমাদের এ সময়ে এনে হাজির করা যেত, কী ভাবতেন তারা?
‘এটা আমাদের ভাবায় যে যদি হাজারখানেক বছর পিছনে চলে যাই তো আমাদের আন্দাজ আর বিস্ময় খুব একটা হেরফের হবে না। কথা সত্যি, মৌলিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো করা হয়ে গেছে; টেকনোলজিতে বড় ধরনের উন্নয়ন হবে, কিন্তু সেখানে কি এমন কোনো ডিভাইস থাকবে যেটা আমাদের কাছে ততটা কাজের আর বিস্ময়ের হবে যতটা আইজ্যাক নিউটনের কাছে একটা পকেট ক্যালকুলেটর আর ভিডিও ক্যামেরা হতে পারে?
হয়ত আমাদের সময়টী সমস্ত অতীতের চেয়ে বর্ণিল। টেলিকমিউনিকেশন্স, ছবি আর শব্দ রেকর্ড করার ক্ষমতা, আকাশ বাতাস আর মহাশূন্যজয় এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যা আদ্যিকালের মানুষ তার সবচে উন্নত স্বপ্নেও দেখতে পায়নি। এবং একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ কোপার্নিকাস, নিউটন, ডারউইন আর আইনস্টাইন আমাদের চিন্তা করার পৃথিবীকে এতটাই বদলে দিয়েছেন, মহাবিশ্ব সম্পর্কে ভাবনাকে এতটাই পাল্টে দিয়েছেন যে আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমরা একেবারে আনকোরা এক নূতন প্রজাতি হয়ে দেখা দিব।
‘এবং আমাদের বংশধররা, এখন থেকে হাজারখানেক বছর পরে, আমাদের দিকে কি এমন করুণা নিয়েই তাকাবে যেভাবে আমরা তাকাই আমাদের অবহেলিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, রোগে ভোগা, সামান্য সময় বেঁচে থাকা পূর্বপুরুষের দিকে? আমরা জানি এমন সব প্রশ্নের জবাব তাদের দিতে পারব যেগুলোর কথা তারা ভাবতেও পারেননি। কিন্তু তৃতীয় সহস্রাব্দ আমাদের জন্য কী কী চমক নিয়ে অপেক্ষা করছে?
‘ওয়েল, এইতো, চলে আসছে সে মাঝ রাতকে কাঁপিয়ে দিয়ে একটা বিরাট ঘন্টা বেজে উঠল ঢং ঢং করে। রাতের একাকীত্বের বুক চিরে দিয়ে শেষ কম্পনটা হারিয়ে গেল…
এবং এমনই ছিল সেই সহস্রাব্দ গুডবাই, ওয়ান্ডারফুল এ্যান্ড টেরিবল টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি…’
এরপর ছবিটা পরিণত হল অজস্র টুকরায়, ভার তুলে নিল নতুন এক ধারাভাষ্যকার, তার সেই উচ্চারণ কত চেনা! এক টানে নিয়ে যায় অতীতে, হাজার বছর আগে…
‘অবশ্যই, এ দু হাজার এক সালের মানুষ এ মুহূর্তটাকে যেভাবে অনুভব করছে, যেভাবে নতুন সহস্রাব্দকে বরণ করে নিচ্ছে তেমন কিছু করেনি এক হাজার এক সালের মানুষ। আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নতির অনেকগুলোর স্বপ্নই হয়ত তারা দেখেছিল; আমরা জানি, স্যাটেলাইট সিটির স্বপ্ন অঙ্কুরিত হয়েছিল তাদের মনের গহিনেও, চেয়েছিল চাঁদ আর অন্য সব গ্রহের গায়ে বাড়ি তুলতে। তারা হয়ত আফসোসও করত এ সময়টাকে দেখে, কারণ আমরা এখনো অমর নই। মাত্র কাছের সূর্যটায় পোব পাঠিয়েছি, এই যা…’
মাঝপথে সুইচ অফ করে দিল ইন্দ্রা।
‘বাকিটা পরে দেখে নিও, ফ্র্যাঙ্ক। ক্লান্ত হয়ে পড়ছ তুমি। আশা করি এটাই তোমাকে এ্যাডজাস্ট করে নিতে সহায়তা করবে।
‘ধন্যবাদ, ইন্দ্রা। এখন হয়ত ঘুমাতে হবে। কিন্তু একটা পয়েন্ট ধরিয়ে দিয়েছে এটা।
কী?
‘আমি অনেকটা আহ্লাদিত যে হাজার বছর বয়েসি করে আমাকে দুহাজার এক সালে পাঠানো হয়নি। কোয়ান্টাম জাম্পের পক্ষে সেটা খুব বেশি অসহ্য হয়ে উঠত… অসম্ভব! কেউ সেটার সাথে মানিয়ে নিতে পারত না। অন্তত আমি ইলেক্ট্রিসিটির ব্যাপারটা জানি, আর আমার সাথে কোনো ছবি কথা বলতে শুরু করলে ভয়ের চোটে আধমরা হয়ে যাব না।
আশা করি, বলল পোল নিজেকেই, এই আত্মবিশ্বাসটা উপযুক্ত। কে যেন বলত, যথাযথ উন্নতি করা প্রযুক্তিকে জাদু থেকে আলাদা করা যাবে না, যদি যায়, তাহলে সেটা উন্নত নয়।
এ ভুবনে আমাকে কি জাদুর মুখোমুখি হতে হবে? আর আমি কি সেটার সাথে মানিয়ে নিতে পারব?
৬. ব্রেইনক্যাপ
‘একটা যন্ত্রণাময় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে আপনাকে,’ বলল প্রফেসর এ্যান্ডারসন মুখে ঝুলে আছে এমন এক হাসি যাতে কথাটার গুরুত্ব একটু হাল্কা হয়ে যাবে।
‘আই ক্যান টেক ইট, ডক্টর। সরাসরি আমার কাছে দিন, ব্যস।
‘আপনার ব্রেইনক্যাপের জন্য কষ্টকর একটা ব্যাপার যে থাকবে তা আগেই বলে দিয়েছি। আপনাকে টেকো হয়ে যেতে হবে। হয় সব সময়ের জন্য, নয়ত মাসে একবার করে মাথা মুড়িয়ে নেয়াই নিয়ম। এখন, কোনটা বেছে নিবেন তা আপনার সিদ্ধান্ত।‘