- বইয়ের নামঃ ৩০০১ : দ্য ফাইনাল ওডিসি
- লেখকের নামঃ আর্থার সি ক্লার্ক
- প্রকাশনাঃ বুক ক্লাব
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
৩০০১ : দ্য ফাইনাল ওডিসি
ক. নক্ষত্র নগরী
৩০০১ : দ্য ফাইনাল ওডিসি – আর্থার সি ক্লাক / অনুবাদ : মাকসুদুজ্জামান খান / প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৭
অনুবাদকের উৎসর্গ
ডক্টর মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ
ছাত্ররা তাকে কত ভয় পায় তা ডিন স্যার জানেন,
কত শ্রদ্ধা করে আর ভালবাসে তা হয়ত তিনি জানেন না।
লেখকের কথা
২০১০ : ওডিসি টু যেমন ২০০১: আ স্পেস ওডিসি’র সরাসরি সিকুয়্যাল নয় তেমনি ২০৬১ : ওডিসি থ্রি ও দ্বিতীয়টার সরাসরি ঝাণ্ডাবাহী নয়। বরং এই সবগুলোকে একই থিমের উপর বিস্তৃতি ধরা যায়, আর সেই অর্থে, সময়কে মাপকাঠি ধরে সিকুয়্যাল বলা যায়। কিংবা, সরলতার জন্য একই নাম ও চরিত্র ঘটনা থাকা সত্ত্বেও যেন একই ঘটনা নয়, বরং সমান্তরাল চলতে থাকা বিভিন্ন ইউনিভার্সে একই ধারার ঘটনা।
মানুষের চাঁদে পা রাখার বছর পাঁচেক আগে, ১৯৬৪ সালে যখন স্ট্যানলি কুবরিক প্রস্তাব রাখলেন, সত্যিকার ভাল সায়েন্স ফিকশন মুভি বানাবেন, তখন ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। কিন্তু তারপর, এ ধারণায় আগের দুটি বই বিজ্ঞানে সরাসরি অনেক প্রভাব ফেলল, ফলে বলা চলে সেগুলো সার্থক সায়েন্স ফিকশন।
২০১০ লিখতে উৎসাহী হই ১৯৭৯ সালের সফল ভয়েজার অভিযানের পর। কিন্তু বৃহস্পতিয় অঞ্চলে ভয়েজারের অভিযানের পর আরো উচ্চাকাক্ষী অভিযান গ্যালিলিও পাঠানো হয়।
আশায় বুক বেঁধেছিলাম গ্যালিলিওকে নিয়ে, সে যাবে, বৃহস্পতির বাতাবরণে একটা প্রোব ছুঁড়ে দেবে, দু বছর খুঁটিয়ে দেখবে বৃহস্পতীয় উপগ্ৰহজগৎ। এর উৎক্ষিপ্ত হবার কথা ছিয়াশির মে মাসে। ডিসেম্বর আটাশিতে লক্ষ্যে যাবার কথা এবং উনিশশো নব্বইতে নূতন বাণীর স্রোতে ভেসে যাবার কথা আমার।
হায়, চ্যালেঞ্জটা পিছিয়ে গেল, জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে গ্যালিলিও তার ক্লিন রুমে অপেক্ষার প্রহর গুণছে। আরেকটা লঞ্চ ভেহিকলের আশায় তার বসে থাকা। হয়তো নির্ধারিত সময়ের সাত বছর পর সেটা ঠিকই জায়গামতো পৌঁছবে, তদ্দিন আমার ধৈর্য থাকলেই হল।
গ্যালিলিওকে নিয়ে তৃতীয় স্বপ্ন দানা বেঁধেছিল, সেটায় চিড় ধরার আগেই আমি অপেক্ষা বন্ধ করে কলম হাতে নিলাম।
কলম্বো, শ্রীলঙ্কা,
এপ্রিল, ১৯৮৭
শুরুর কথা : ক্ষণজন্মা
ডাকুন তাদের প্রথম-জন্মা নামে। ঠিক মানুষ নয় তারা। রক্ত-মাংসের নশ্বর দেহধারী। মহাকাশের গহিনে চোখ যায়, অনুভব করে তারা কী এক অনির্বচনীয় একাকিত্ব; কী এক অস্থিরতা গ্রাস করে নেয় সমস্ত দেহ-মন-প্রাণ! হতবিহ্বলতায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তারপর–ক্ষমতা এল। অনন্ত নক্ষত্রবীথিতে সঙ্গীর খোঁজে আতিপাতি করে ফেলল নক্ষত্রলোক।
এবার চলার পালা। কত রূপ নিয়ে যে রূপোপজীবী মহাকাশ মাতা প্রাণের দেখা মিলিয়ে দিলেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সহস্র বিশ্বে বিবর্তনের অচিন্তনীয় সব পথের দেখা মিলল। মহাকাশের মহারাত্রির বুকে কী করে জীবনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠে, কী করে হারিয়ে যায় বিশালতার বুকে, দেখল তারা।
আর, যেহেতু অযুত পৃথিবীর বুকে, নিযুত ছায়াপথের আলো আধারিতে মনের চেয়ে দামি আর কিছুর সন্ধান পাওয়া গেল না- এই মনের জন্মের পথেই অবদান রাখল। সর্বত্র তারার ভূমিতে চাষি তারা, বুনে চলল মনের বীজ, কখনো কখনো ফসলের কুঁড়ি মুখ তুলল।
কোথাও কোথাও দেখা দিল আগাছা।
বিশালদেহী ডায়নোসরেরা অনেক আগেই ডুবে গেছে কালের অতলে। হাজার বছরের পথপরিক্রমা শেষে এল তারা। এল এখানে। বাইরের জমাট গ্রহগুলোর উপর দিয়ে। মঙ্গলের মরতে বসা মরুভূমির উপর চোখ ফেলল। দৃষ্টি দিল ঠিক এখানটায়। যে জায়গার নাম- পৃথিবী।
নিচে নেমে এল দর্শনার্থীরা। ছড়িয়ে পড়ল। দেখল, প্রাণের মহাসাগর বয়ে চলেছে মৃদুমন্দ ঊর্মিমালা বুকে করে। বছরের পর বছর ধরে সংগ্রহ চলল। চলল হিসাব নিকাশের পালা, গবেষণা। জানার সবটুকু জেনে নেয়া শেষ। এবার হাত দেয়ার পালা। সৃষ্টির উপর হাত রাখার সময় এসেছে। সমুদ্রের বুকে, ভূমির উর্বরতায় এবার অনেক প্রজাতিকে পথ দেখাতে হবে। কিন্তু এ চেষ্টার কোন কোনটা সফল হবে আর কোন কোনটা একেবারে আস্তাকুড়ে পড়ে থাকবে তা জানতে হলে করতে হবে অপেক্ষা; লক্ষ লক্ষ বছরের অপেক্ষা।
ধৈর্য আছে তাদের, কিন্তু এখনো অমরত্ব আসেনি। অনেক কাজ বাকি। শত বিলিয়ন সূর্যের বুকে আরো সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা বাকি। ডাকছে। ডাকছে মহাকাশের বুকে লুকিয়ে থাকা আলোর উৎসরা।
পাল তোলার সময় এসেছে। আর কখনো পিছনে ফিরে আসা যাবে না, জানে তারা। যত্ন করে বোনা ফসলের কাছে ফিরে আসা যাবে না। আসার প্রয়োজনও নেই, পিছনে ফেলে আসা ভূত্যেরা বাকি কাজটুকু করে ফেলবে।
পৃথিবীর বুকে জমাট বাধানো হিমবাহেরা নেমে এল নিষ্ঠুরের মতো। ঝেড়ে মুছে সাফ করে দিল হাজার হাজার প্রজাতিকে। তারপর, অনেক অনেক দিন রাজত্ব করার পর চলেও গেল। কিন্তু এসবের উপরে শান্তভাবে চোখ রাখছে পরিবর্তনহীন চাঁদের বুকে লুকিয়ে থাকা এক অস্তিত্ব। বরফের রাজত্বের চেয়েও অনেক ধীর গতিতে গ্যালাক্সি জুড়ে নেমে এল জীবনের জয়গান। সভ্যতার জলস্রোত। অদ্ভুত, সুন্দর, ভয়ানক সব সাম্রাজ্যের উত্থান দেখা গেল, দেখা যায় তাদের পতনও। পুরনোরা তাদের স্মৃতি আর সাফল্য বয়ে নিয়ে গেল নতুনদের কাছে।