তাতেই আমি খুশি। আমাদের ভোগানোর জন্য মনোলিথই যথেষ্ট।
কিন্তু এখন যে আরো বড় সমস্যা দেখা দিল! কিছু একটা উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে।
আমিতো ভাবিনি এখনো ভয়ের অনুভূতি থাকবে আমার মনে…।
জিউস পর্বত পতনের সময় পুরো উপগ্রহটা ছারখার করে দিতে পারত। এই ব্যাপারটা পরিকল্পনায় ছিল না। কোনো হিসাব-নিকাশেই ব্যাপারটা বোঝার উপায় নেই। এটা পতনের সময় সাগরের গঠন পাল্টে দিয়েছে। উলট-পালট হয়ে গেছে জীবজগৎ। বিশেষত যে প্রাণীগুলো নিয়ে আমাদের বেশি আশা ছিল সেগুলোই পড়েছে হুমকির মুখে। এমনকি স্বয়ং মনোলিথ পড়ে গেল। নষ্ট হতে পারত। শুধু প্রোগ্রামে সামান্য হেরফের হয়েছে। তারা ব্যাপারটা খেয়াল করেনি, কীভাবে করবে? অসীম একটা ইউনিভার্স নিয়ে তাদের কারবার। সেখানে, সুযোগ যে কোনো সময় আসতে পারে, যেকোনো সময় যেতে পারে ভেস্তে। এতে তাদের কিছু যায় আসে না।
কথাটা মনোলিথ আর মানুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অবশ্য শেষ বাক্যটা নয়।
“আমাদের তিনজনকে তাই এই ভুবনের এসব ঘটনার প্রশাসক হতে হবে, এই জগৎগুলোর অভিভাবকত্ব তুলে নিতে হবে নিজেদের হাতে। তুমি এরই মধ্যে উভচরদের সাথে দেখা করেছ। এবার সিলিকন বর্ম পরা লাভা স্রোতের বাসিন্দা আর সাগর চষে বেড়ানো নাবিকদের দেখভাল করার পালা। আমাদের কাজ তাদের পূর্ণতা দেয়ার চেষ্টা, এখানে থেকে হোক বা আর কোথাও।
আর মানবজাতির কী হবে?
প্রথম প্রথম আমি মানুষের মধ্যে নাক গলানোর চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু তারপর যে ওয়ার্নিংটা মানুষের জন্য দিয়েছি সেটা আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়, উল্টো পথে।
আমরাতো এটা পুরোপুরি মেনে চলিনি।
যথেষ্ট মেনেছি। ও, আর করার মতো কাজের কোনো অভাব নেই। ইউরোপার ছোট্ট গ্রীষ্ম চলে গিয়ে আবার লম্বা শীত আসার আগে অনেক কাজ করতে হবে।
হাতে কতটুকু সময় আছে?
মোটামুটি, কাজ সেরে ওঠা যাবে হয়তো সে সময়ের মধ্যে। মাত্র হাজার খানেক বছর। এবং আমাদের অবশ্যই বৃহস্পতীয়দের কথা মনে রাখতে হবে।
৯. ৩০০১
নবম পর্ব – ৩০০১
৬০. তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে
ম্যানহাটানের বুকের মাঝে, মাথা তুলে অহংকারে দাঁড়িয়ে আছে একলা ভবনটা। চারপাশের বনভূমি থেকে সরিয়ে রেখেছে নিজের শির । হাজার বছর ধরে। তার চেহারা তেমন বদলায়নি।
এটা ইতিহাসের অংশ। তাই রক্ষা করা হয়েছে সযত্নে; আর সব ঐতিহাসিক মিনারের সাথে সাথে। এর গায়ে, চারপাশে অনেক অনেক আগে হীরার প্রলেপ বুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবং এখন সে সময়ের ক্ষয়ের হাত থেকে যোজন যোজন দূরে।
সাধারণ অধিবেশনের মিটিংগুলোয় প্রথমদিকে যারা অংশ নিত তারা আদৌ ভাবেনি ভবনটা হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা হয়তো জাতিসংঘের ভবন চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটারই আকৃতির কালো, মিশকালো জিনিসটার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আর সবার মতো তারাও যদি সেটাকে ছুঁয়ে দেখতে যেত তাহলে এর কৃষ্ণ তলকে আঙুল পিছলে যেতে দেখে যারপরনাই আশ্চর্য।
কিন্তু এরচে বড় বিস্ময় লুকিয়ে আছে অন্য কোথাও। আরো আরো অবাক হয়ে যেত স্বর্গগুলোর রূপবদল দেখে…
.
ঘণ্টাখানেক আগে শেষ টুরিস্ট চলে গেছে। এখন এ চত্বরে কোনো জন-প্রাণী নেই। উপরে মেঘহীন আকাশ। আজকাল উপরের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কগুলোর কোনো কোনোটাকে দেখা যায়। বাকী আঁধার তারকাগুলো দেখা যায় না, যে দূরের সূর্য জ্বলজ্বল করার কথা তার আলোয় সেগুলো ম্লান হয়ে যায়।
পুরনো ভবনের কালো কাঁচে সেই নক্ষত্র তার প্রতাপ-কিরণ পাঠায়। পাঠায়। দক্ষিণ আকাশে পৃথিবী ঘিরে থাকা রূপালী রঙধনুর গায়ে। অন্য আলোগুলোও এর চারপাশ ধরে উত্থিত হয়। তারপর যায় থিতিয়ে। যেমন করে সৌর জগতের দু সূর্যের মাঝে অর্থনীতির জোয়ার উপচে পড়ে আবার থিতিয়ে গেছে।
আর, কেউ যদি তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়, তো দেখবে পানামা টাওয়ারকে। আরো ছটার মতো এই সরু ফিতাটাও ছাব্বিশ হাজার কিলোমিটার উপরে উঠে গেছে। তারা পৃথিবীর ঠিক উপরের আকাশে ঘুরতে থাকা হীরক-বলয় থেকে প্রয়োজন অনুসারে বসুন্ধরা আর তার ছড়ানো-ছিটানো সন্তানদের জন্য রত্ন ছিনিয়ে আনে।
।জন্মনোর মতোই হঠাৎ করে নিভে যেতে শুরু করেছে লুসিফার। যে রাতকে মানুষ ত্রিশ প্রজন্ম ধরে চেনে না সে আবার এসেছে ফিরে, স্বজন পাবার উচ্ছ্বাস বুকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে চারপাশে।
এবং চল্লিশ লক্ষ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জেগে উঠছে ঘুমন্ত মনোলিথ।
* * *
আর্থার সি ক্লার্ক
স্যাটেলাইট বিজ্ঞানের জনক ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ স্পেস ট্রাভেল সায়েন্স ফিকশন রাইটার আর্থার চার্লস ক্লার্ক। জীবিতদের মধ্যে তিনিই পৃথিবীর সেরা কল্পবিজ্ঞানী। দ্বিতীয় গ্র্যান্ড মাস্টার অফ সায়েন্স ফিকশন। সবচে বেশি রাশ টেনে রাখেন এস এফ এর কল্পনায়। মহাকাশের কোথায় অভিযান করলে কী হবে তা তিনি অত্যন্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যার সাহায্যে বলে দিয়েছেন মানুষ মহাকাশে যাবার আগেই।
নিজদেশ ইংল্যান্ড ছেড়েছুঁড়ে দ্বীপরাজ্য শ্রীলঙ্কায় বাস করেন সেই প্রথম যৌবন থেকে। তার কাছে এস এফ সব সময় সিরিয়াস ব্যাপার, হেলাফেলার ছেলেখেলা নয়। ওডিসি সিরিজের পঞ্চম বইটির জন্য এস এফ এর ইতিহাসে সবচে মোটা অঙ্কের সম্মানী পেয়েছেন। এঁদেভু উইথ রামা এবং ফাউন্টেনস অব প্যারাডাইস দুটিই হুগো এবং নেবুলা প্রাইজ পেয়েছে। এ দু পুরস্কার এস এফ এর ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ এবং এই মানিক-জোড় পূর্ণ হয়েছে মাত্র আট-নবার। তাঁর আর সব পুরস্কারের স্রোতও কম যায় না। মহাকাশ ও সমুদ্র নিয়ে রচনার সংখ্যা শতেক ছাড়াবে।