এ এক তত্ত্ব মাত্র। কাঁচা হীরা হাতে পেলে এমন হাজার হাজার তত্ত্ব উপচে পড়বে। তার দু একটা লেগেও যেতে পারে আরো এমন সব কাজে, যার কথা এখন অতিকল্পনা বলে মনে হয়।
এখন যে অযুত হীরক-পর্বত বৃহস্পতীয় অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেসবের দু একটাকে যদি আনা যায় তাহলে একদিন মানুষের কাছে কার্বনের ক্রিস্টালাইন আকৃতি নিয়ে বর্তমানের মাতামাতি একদম অসভ্যতা বলে মনে হবে।
আর, শুধু লেখাটা সঠিক সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে একটা কথা বলে রাখতে চাই। প্রকৃতিতে কার্বন মোটেও দুষ্প্রাপ্য নয়, শুধু গ্যাস জায়ান্ট আর ভূ-গর্ভ-ই এর জনক নয়। আরো একটা উৎস থেকে পাওয়া যেতে পারে অপার হীরক…।
শুধু বলার জন্য বলা আর কী, গ্যাস জায়ান্টের কোরে যাবার চেয়েও হাজারগুণ অসম্ভব সেসব তুলে আনা। নিউট্রন নক্ষত্রের গর্ভে লুকিয়ে থাকতে পারে আরো কোটি গুণ বেশি ভরের হীরা।
সবচে কাছের পরিচিত নিউট্রন স্টারটি পনের আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আর তার উপরিতলের আকর্ষণ ক্ষমতা পৃথিবীর উপরিতল থেকে সত্তর হাজার মিলিয়ন গুণ বেশি। এমন উৎস থেকে হীরা তুলে আনা মুখের কথা নয়।
মনে হচ্ছে হীরা চিরকালই অধরা আর দামী রয়ে যাবে।
কিন্তু কে কোকালে ভেবেছিল যে একদিন আমরা বৃহস্পতির হৃদয় ছুঁতে পারব?
৫৭. গ্যানিমিডে মধ্যবিরতি
আহারে আদ্যিকালের কলোনিস্টরা! আফসোস করল মাইকেলোভিচ, সারা জীবন, যারা কলোনি বানায় তারা হাড়ভাঙা খাটনি দিয়ে যায় আর বাকীরা পরের প্রজন্মে এসে পায়ের উপর পা তুলে খায়। যাক, আসল কথা হল… দেখতো দেখি কাণ্ড! পুরো গ্যানিমিডে একটাও কনসার্ট হল নেই! না থাক, আমার সিন্থেসাইজার একাই একশো। সকল বাদ্যের সর্বপ্রকার সুর লহরী ইহাতে পুলকিত হইয়া উঠিবেক। কিন্তু আসল সারিন্দা সারিন্দাই, যেমন পা দানি বলতে যে কোনো জায়গায় পা-দানিকেই বোঝাবে।
তার কথা স্থানীয় সুর-রসিকদের মনে বেশ দাগ কেটেছে বলে মনে হল। এমনকি স্থানীয় নিয়মিত অনুষ্ঠান মর্নিং মেড় এ তীর্যক কথাও উঠল এ নিয়ে।
এখানে সাময়িকভাবে উপস্থিত হয়ে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ শুধু আমাদেরকেই সম্মানিত করেননি, বরং দু ভুবনের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক মহান সাময়িক জোয়ার এনেছেন…
খোঁচাটা আসলে সরাসরি উইলিস, মাইকেলোভিচ আর ম্যাগি মবালার দিকে ভোলা হয়েছে। ম্যাগি বেঁচেবর্তে যেত, কিন্তু অতীতের দিকে আলোকপাত করার কাজে তার কোনো জুড়ি নেই। সে বৃহস্পতি বা জুপিটাররূপী দেবরাজ জিউসের সাথে আইও, ইউরোপা, গ্যানিমিড আর ক্যালিস্টোর অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কের কথা টেনে এনেছে আবার সবার সামনে। নিক্ষ২৮ উইরোপার সামনে সাদা ষাঁড়ের অনিন্দ্য মূর্তি ধরে আসাটাই যথেষ্ট খারাপ কাজ হয়েছে জিউসের; আর আইও এবং ক্যালিস্টোকেও তাই সব সময় দেব-মহিষী হেরার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হত তাঁকে। কিন্তু দেব-রাণী ছেড়ে কথা বলার পাত্রী ছিলেন না। আকাশ পাতাল ফুড়ে তাদের খুঁজতেন। এসবে লোকজন তেমন ক্ষেপেনি বরং শুনে মজাই পেয়েছে, কিন্তু স্থানীয়রা এরপর তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে পরের কথাটা শুনতে পেয়ে। মিথোলজিক্যাল বিখ্যাত চরিত্র গ্যানিমিডের জেন্ডার ছিল ব্যতিক্রমী।
তাদের প্রতি সুবিচার করতে নিজের বিবেকের কাছেই সাংস্কৃতিক দূতেরা বেশ অপরাধী হয়েছিল। সবাই না, কেউ কেউ। হঠাৎ যখন জানতে পারল যে তাদের এখানে থাকতে হবে, তাও আবার দু দশদিন নয়, কয়েক মাস-দুঃখটা মূলত তখনি মনের কোণে দানা বাঁধে। একে তো এখানে বিনোদন আর আবহের বিস্তৃতি নেই, তার উপর বিখ্যাতরা ছোট্ট পরিসরে বেশিদিন থাকতে পারে না এবং সর্বোপরি, এখানকার পরিবেশ তাদের কেউ কেউ নিজেদের শখের বশেই বিষাক্ত করে তুলেছে নিজেদের জন্য।
তারপর, তারা সবাই চারপাশের সবার জন্য যথাসম্ভব কল্যাণকর কাজ করার সিদ্ধান্ত নিল সর্বান্তকরণে। অবশ্য সবার ইচ্ছা বা সময় নেই উপকৃত হবার। তারা সৌর জগতের অগ্রসর প্রযুক্তির এই সম্মুখ সমরের রণক্ষেত্রে নিজেদের কাজে নাক মুখ ডুবিয়েই নাকি কুল পায় না।
উল্টোটা সব সময় যার ক্ষেত্রে ঘটে এবারও তার ক্ষেত্রেই ঘটল। ইভা মারলিন এখানে শুধু মানিয়েই নেয়নি, বরং উপভোগ করছে পুরো ব্যাপারটাকে। পৃথিবীতে তার ভুবন দোলানো জয়জয়কার থাকলেও এই এখানে, মেড়রা তার নাম খুব কমই শুনেছে। সে খোলামেলা চলাচল করতে পারে! পাবলিক করিডোর, সেন্ট্রালের প্রেশার ডোমগুলোতে, সে চলতে পারে বিনা বাধায়। লোকজন ফিরে তাকায় না, ফিসফাস করে না নিজেদের মধ্যে। অবশ্যই, তাকে দেখে সবাই চিনতে পারছে, কিন্তু ইভা মারলিন হিসেবে নয়, বরং পৃথিবী থেকে আসা মানুষগুলোর একজন হিসেবে।
আর, যেখানেই যাক না কেন, মিশে যাওয়ার মানুষটা-কাজে জোর করে ঢুকে যাবার মানুষটা-গ্রিনবার্গ ঠিকই মিশে গেল গ্যানিমিডের মাটির সাথে। এরই মধ্যে অন্তত আধ-ডজন বিজ্ঞান সংস্থার মূল বোর্ডে সে একজন অস্থায়ী উপদেষ্টা অথবা সদস্য অথবা সচিব। প্রশাসন আর প্রযুক্তির জগতে তার দোর্দণ্ড প্রতাপ। তার কাজে গ্যানিমিড এতোই খুশি যে ছাড়ার নাম করছে না বরং না-ও যেতে দেয়া হতে পারে টাইপের হুমকি দিচ্ছে জোরেসোরে।
হেউড ফ্লয়েড ঠাণ্ডা মাথায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে তার শিপমেটদের কাণ্ড কারখানা; তবু, সেতো আর সমাজছাড়া নয়, এক আধটু অংশগ্রহণও খারাপ না। তার মূল সমস্যা ক্রিসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন। মনের গভীরে প্রবেশ করতে চাচ্ছে সে। দেখতে চাচ্ছে দৌহিত্রের অন্তস্থল; ভবিষ্যতের পরিকল্পনা পাকা করে দিতে চাচ্ছে।