অদ্যাবধি আবিস্কৃত সবচে দামী সম্পদ ডুবে যাচ্ছে, উইলিস আফসোসের সুরে পাদ্রীসুলভ কণ্ঠ করে বলল, দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা চূড়ান্ত মুহূর্তটাকে আর দেখাতে পারলাম না। কেন? এখনি দেখতে পাবেন আপনারা।
আবার অ্যাকশনটাকে রিয়েল টাইমে নিয়ে এলেন ড. গার। মাত্র কয়েকশ মিটার বাকী। আশপাশের তোলপাড় যেন ক্লান্ত হয়ে উঠেছে।
তারপর হঠাৎ করেই ক্যামেরার দৃশ্য হেলে পড়ল একদিকে। ক্যামেরার পাগুলো এততদিন যুদ্ধ করে ক্ষান্ত দিল। একবার মনে হয়েছিল যে পর্বতটা আবার জেগে উঠছে, কিন্তু দৃশ্যটা ক্যামেরার কারসাজি। পড়ার সময়, ব্যাটা উল্টোপাল্টা দৃশ্য দেখালো, যেমন সবাই দেখাতে চায়। ইউরোপার শেষ দৃশ্যটা একটু নাটকীয়। গলা সালফারের একটা ঢেউ গ্রাস করল ক্যামেরাকে।
হারিয়ে গেল চিরতরে। আরো দরদ ঝরে পড়ছে উইলিসের কণ্ঠে, গলকন্ডা আর কিম্বার্লি সারা জীবনে যতটুকু সম্পদ উৎপাদন করেছে তারচে অসীম গুণ বেশি সম্পদ মিশে গেল ধুলায়, কী আফসোসের কথা!
যেন সে জানে না এই সম্পদ পেলে উল্টো পৃথিবীর অর্থনীতির পাশাখেলার ছক যেত উল্টে। পাল্টে যেত সম্পদের হিসাব। হীরক সম্পর্কিত সবকিছুর দাম নেমে যেত পানির পর্যায়ে। ফলে ডুবত সেসব কোম্পানি, ভাসত উল্টোগুলো। ডুবে যেত পুরো আফ্রিকা। পৃথিবী পড়ত ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে, শুরু হত আর্থিক স্যাবোটাজ । এবং হয়তো শুরু হয়ে যেত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
স্টুপিড! ইডিয়ট! সমানে বকে চলেছেন ড. ক্রুগার। ব্যাটার কি ন্যূনতম কমনসেন্স নেই! ও, সেতো মাথামোটা উপস্থাপক, সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো বোঝার সেন্স থাকার কথাও নয়। তাও কি বোঝে না যে…।
ন্যাচার এ আরেকটা চিঠি পাঠানোর সময় হল। এবার আর এতো বড় রহস্য লুকিয়ে রাখা যায় না। উত্তেজনায় কাঁপছেন তিনি। খুলে গেছে। বন্ধ দুয়ার খুলে গেছে। অনন্তের পথে চলার হল শুরু। বৃহস্পতি-বিস্ফোরণ শুধু ইউরোপানদের স্বার্থে হয়নি। মানবজাতির স্বার্থও এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মানব সভ্যতার যুগ ছিল অনেক। প্রত্যেকটাকেই শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়েছে। প্রস্তর যুগ, তাম্র যুগ, লৌহ যুগ… মহাকাশ যুগ এবং…।
এবং তারা, তারা কি সেই দুয়ারটাই খুলে দিল মানুষের সামনে, জোর করে…
৫৬. ভড়কে দেয়া তত্ত্ব
হতে: প্রফেসর পল ক্রুগার, এফ আর এস, ইত্যাদি।
প্রতি: সম্পাদক, ন্যাচার ডাটা ব্যাঙ্ক (পাবলিক অ্যাক্সেস)
বিষয় : জিউস পর্বত ও বৃহস্পতীয় হীরাগুলো
আজ এ কথাটা সর্বজনবিদিত যে, ইউরোপার জিউস পর্বত নামে যে গড়নটাকে আমরা চিনতাম সেটা আদপে বৃহস্পতির একটা অংশ।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লরেন্স লিভেনমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে তকালে কর্মরত মারভিন রস সর্বপ্রথম গ্যাস জায়ান্ট গ্রহগুলোর ভিতরে হীরা থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন তার ক্লাসিক পেপার, ইউরেনাস ও নেপচুনে বরফের স্তর-মহাকাশে ডায়মন্ড? এ (ভলিউম ২৯২, নং ৫৮২২, পি পি ৪৩৫-৬, ত্রিশ জুলাই, ১৯৮১) অবাক ব্যাপার, রস তার লেখাটায় বৃহস্পতি নিয়ে তার সমাপ্তি টানেননি।
মাউন্ট জিউসের ডুবে যাওয়া যেমন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে তেম্নি জন্ম দিচ্ছে হাজার গুজবের। এসবের বেশিরভাগই একেবারে ভিত্তিহীন। কারণটা নিচে দেয়া হল।
বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না আমরা। পরবর্তী যোগাযোগে ব্যাখ্যা করা হবে। আমি মনে করছি বৃহস্পতির হীরা-কোরটা অন্তত 10^28 গ্রাম ছিল। এটার মাউন্ট জিউসের চেয়ে দশ বিলিয়ন গুণ বড় হবার কথা।
এই গড়নের প্রায় পুরোটাই আপাতদৃষ্টিতে তথাকথিত কৃত্রিম সূর্য লুসিফারের গায়ে হারিয়ে গেছে বলে ধরা হয়। কথা বিশ্বাস করা শক্ত যে মাউন্ট জিউসই একমাত্র বেরিয়ে আসা খণ্ড।
ধরে নেয়া যায়, অনেক অনেক খণ্ড বেরিয়ে এসেছিল। স্বভাবতই বেশিরভাগ আবার ফিরে যাবে লুসিফারের গায়ে। কিন্তু কিছু না কিছু যে অর্বিটে ছড়িয়ে পড়েছিল তারই প্রমাণ এই পর্বতটা। এবং অবশ্যই, সেখানেই সেসবের খণ্ড এখনো মাথা কুটে মরছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বস্তুজগতের তত্ত্ব দেখায় যে সেগুলো আবার ফিরে আসবে তার আগের জায়গায়। একেবারে কাঁটায় কাঁটায় দেখানো সম্ভব নয়, অবশ্যই, হিসেব কষে দেখানো যাবে না। কিন্তু আমি জানি মাউন্ট জিউসের অন্তত দশ লক্ষ গুণ বেশি ভরের সমপরিমাণ বস্তু এখনো মহাকাশে লুসিফারের পাকচক্রে ঘুরে মরছে।
একটা ছোট্ট টুকরার পতন দেখা গেছে, তাও আবার একেবারে হঠাৎ করে, ইউরোপার বুকে। তাই, আসলেই, এর কোনো দাম নেই। নেই বিন্দুমাত্র মূল্য।
আমি অতি দ্রুত একটা রাডার বসানোর প্রস্তাব করছি লুসিফারীয় এলাকাতে শুধু এই বস্তুগুলো খুঁজে বের করার জন্য।
সেই বিরাশি সন থেকেই মানুষ অতি পাতলা হীরা বানাতে পারলেও এখনো শক্ত ভারী খণ্ড গড়তে পারেনি। মেগাটনের হিসাব-মাত্রায় এই জিনিস পাওয়া গেলে শিল্প কারখানার পথে নতুন যুগের উদয় হবে। এমনকি সৃষ্টি হবে নতুন ধরনের শিল্প ও প্রযুক্তি।
প্রায় এক শতাব্দী আগে, আইজ্যাক লিখিদ, এট এল এ এমন একটা কথা বলা হয়েছিল যে সাধারণ চিন্তা-চেতনার জগৎ দুমড়েমুচড়ে দেয় (দেখুন: সায়েন্স, ১৫১, পিপি ৬৮২-৩, ১৯৬৬)। তার মতে, হীরা হল তথাকথিত স্পেস এলিভেটর এর একমাত্র সম্ভাব্য উপাদান। কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন যে এই বই সবচে শক্ত এবং এর গাঠনিকতা থেকে তাই যেকোনো গাঠনিকতায় যাওয়া সম্ভব, নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে, অবশ্যই। এর ফলে পৃথিবী থেকে দূরের কোনো নক্ষত্রের দূরত্ব সামান্য হয়ে যাবে; নদী আর নদীর পাড়ের মতো। নেয়া যাবে জিনিসপত্র অনেক অনেক দূরে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপারটা সমর্থন করি, প্রমাণ ছাড়া পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না।