ও, তোর জন্য আরো কিছু সুসংবাদ আছে। সবার আগে শাটল তোদের তুলে নিবে। অবশ্য গ্যালাক্সিতে জরুরী কিছু মেডিক্যাল রসদও ছুঁড়ে দিবে। তারপরই তোদের কাছে। পরের অর্বিটেই উঠে আসবি। আরো পাঁচ চক্কর শেষ করে ইউনিভার্স নিচে নামবে। বন্ধুদের স্বাগত জানানোর জন্য উঠে থাকবি, কী বলিস?
আর কী… বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না। শুধু পুরনো দিনের ক্ষতিটুকু পুষিয়ে নিতে চাই। তোর জবাবের আশায় থাকছি… দাঁড়া, দেখে নিই, তিন মিনিট…।
বিল টির বুকে এক মুহূর্ত কোনো শব্দ ছিল না। ভ্যান ডার বার্গ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্ধুর দিকে তাকাবে না। ফ্লয়েড মাইক্রোফোনটা অন করে ধীরলয়ে বলল, দাদু-হোয়াট এ ওয়ান্ডারফুল সারপ্রাইজ-আমার শক এখনো কাটেনি। কিন্তু আমি জানি, তোমার সাথে এখানে-ইউরোপাতেই দেখা হয়েছিল আমার। আমি জানি, তুমি আমাকে বিদায় জানিয়েছিলে। আমি এ ব্যাপারে ঠিক ততটাই নিশ্চিত যতটা তোমার সাথে এ মুহূর্তে কথা বলার ব্যাপারে…
যাক, এ নিয়ে পরে তর্কের টেবিল মাতানো যাবে। কিন্তু ভুলে যেও না কীভাবে ডেভ বোম্যান ডিসকভারির বুকে তোমার সাথে কথা বলেছিল। হয়তো এটাও তেমন কোনো ঘটনা…
এখন আমরা এখানে বসে বসে শুধু প্রহর গুনব। চিন্তা নেই, আরামেই আছি। শুধু নিয়মিত ভূকম্পনটা চলে গেলেই বরং অস্বস্তি হবে। কিন্তু, বললাম না? চিন্তা করোনা। দেখা হবার আগ পর্যন্ত, আমার সমস্ত ভালবাসা তোমাকে ঘিরে রাখবে।
তার ঠিক মনে নেই শেষ কবে সে দাদুর জন্য এই শব্দটা ব্যবহার করেছিল। প্রথমদিনের পর শাটল হয়ে গেল গন্ধমাদন পর্বত। ঘ্রাণ ছুটল একটু একটু করে। দ্বিতীয় দিনে, ঠিক বলতে পারবে না, তবু মনে হয় খাবারের সেই আগের স্বাদটা আর নেই। তারপর ঘুমানো কষ্টকর হয়ে উঠল, শুরু হল নাক ডাকা।
তৃতীয় দিনে, গ্যালাক্সি, ইউনিভার্স, এমনকি পৃথিবী থেকে অবিরত আসতে থাকা মেসেজের ভিড় ঠেলে জায়গা করে নিল বিরক্তি। এদিকে নোংরা গল্পের ঝুলিও এক্কেবারে উদোম হয়ে গেছে। বাকী নেই কিছু।
কিন্তু এটাই ছিল শেষ দিন।
তারপর, লেডি জেসমিন তার হারানো সন্তানের খোঁজে নেমে পড়ল নিচে।
৫৫.ম্যাগমা
বস, অ্যাপার্টমেন্টের মাস্টার কমসেট বলল, আপনি ঘুমানোর সময় গ্যানিমিডের ঐ স্পেশাল অনুষ্ঠানটায় ঢুকেছিলাম। দেখবেন নাকি এখন?
হু। বললেন ড. ক্রুগার, গতি দশ গুণ করে দাও। নো সাউন্ড।
অখাদ্য টাইপের প্রচুর বকবকানি থাকবে প্রথমদিকে, তিনি জানেন। কিছু বাদ পড়ে গেলে ক্ষতি নেই, পরে দেখে নেয়া যাবে। আসল খবর যত তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় ততই মঙ্গল।
শুরুর লেখাজোকা চলে গেল হুড়মুড় করে। তারপর মনিটরে ভেসে উঠল বিরক্তিকর ভিক্টর উইলিসের চেহারা। বেচারা গ্যানিমিডের কোনো এক জায়গায় পাগলের মতো শূন্যে হাত ছুঁড়ছে, স্বাভাবিক গতিতে দেখলে ব্যাপারটাকে তেমন মনে হত না। আর সব কর্মঠ বিজ্ঞানীর মতো ড, পল ক্রুগারও উইলিসের দিকে রক্তচক্ষু মেলে তাকালেন। এবং সবার মতোই মনে মনে স্বীকার করলেন যে ব্যাটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ বেশ ভালভাবেই করছে অনেক বছর ধরে।
এলোমেলোভাবে উইলিস হারিয়ে গেল, তারপর একটু কম বিরক্তিকর বিষয় ভেসে উঠল স্ক্রিনে। জিউস পর্বত।
জিনিসটা আর যে কোনো স্বাভাবিক পর্বতের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়; ইউরোপার শেষ ট্রান্সমিশনের পর সেটা কতো দেবে গেছে দেখে অত্যন্ত অবাক হলেন তিনি।
রিয়েল টাইম। আদেশ করলেন সাথে সাথে, সাউন্ড।
…দিনে প্রায় একশ মিটার। নামার সময় পর্বতের উপরের দিকটা প্রায় পনের ডিগ্রি সরে গেছে। এখন টেকটোনিক সক্রিয়তা ভয়ংকর-উপচে পড়া লাভায় ভিত্তিভূমি ভরে উঠেছে। আমার সাথে আছেন ড, ভ্যান ডার বার্গ। ভ্যান, আপনি কী মনে করেন?
আমার ভাস্তের হাল এখনো ভাল, ভাবলেন ড. পল ক্রুগার। অন্তত সে যে ঝড় থেকে উঠে এসেছে আর যে ঝড়ে পড়তে যাচ্ছে সে তুলনায় বেশ শক্তই তো দেখা যায়…
জিনিসটা নেমে যাচ্ছে আরো। আবিষ্কারের পর থেকে আজো জিউস পর্বত ডুবছেই। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গতিটা অত্যন্ত বেশি। প্রতিদিনই আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
পুরোপুরি মিলিয়ে যেতে আর কতদিন লাগবে বলে মনে করেন?
আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটা ডুববেই…।
তারপর হঠাৎ পাহাড়ের অন্য দৃশ্য চলে এল। ক্যামেরার বাইরে ভিক্টর উইলিসের কথা শোনা যাচ্ছে।
মাত্র দু দিন আগে এই কথাটা বলেছিলেন ড, ভ্যান ডার বার্গ। কোনো মন্তব্য, ভ্যান?
ইয়ে… মানে… দেখে মনে হচ্ছে হিসেবে ভুল করেছিলাম। এখনো নেমে যাচ্ছে পাহাড়টা-বেশ অবিশ্বাস্যভাবেই। মাত্র আধ কিলোমিটার বাকী! আমি আর কোনো মন্তব্য করব না আগ বাড়িয়ে…
জ্ঞানীর মতো কথা বলেছেন, ভ্যান-যাই হোক। ঘটনাটা মাত্র গতকালের। তো, এখন থেকে আপনাদের আমি নিয়মিত দেখিয়ে যাব ঘটনাচিত্র-যে পর্যন্ত ক্যামেরাটা না হারিয়ে যায়…
ড. পল ক্রুগার সামনে ঝুঁকে এলেন, সেই খেলার সমাপ্তি দেখার জন্য যেটায় দূর থেকে নিজেও গুরুত্বপূর্ণ কলকাঠি নেড়েছিলেন।
তার চোখের সামনেই, ডুবে যাচ্ছে দেবরাজের পর্বত। চোখের সামনে ডুবে যাচ্ছে। চারপাশ থেকে উথলে উঠছে গলিত সালফার, চোখ ধাঁধিয়ে চলে যাচ্ছে আরো আরো উপরে। মুগ্ধ করা নীলের খেলা চলছে চারদিকে। ঠিক যেন কোনো রাজকীয় জাহাজ ডুবে যাচ্ছে ঝড়-ঝঞ্ঝায় অস্থির সমুদ্রের বুকে। চারদিকে যেন সেইন্ট এলমোর আগুন।