“লেখক তখনকার ইউনাইটেড স্টেটস অব-বুঝতেই পারছ, সাউদার্ন আফ্রিকার তখনো জন্ম হয়নি; আমেরিকায়, সবচে নামী ল্যাবের একটায় কাজ করতেন। সেখানে রাতদিন পারমাণবিক বোমা নিয়ে গবেষণা চলত, সেই সাথে তৈরি করাতেও কোনো দোষ ছিল না। তাই তারা তাপ আর চাপের ব্যাপারে বেশকিছু জানেন, যা ভাল ভাল বিজ্ঞানীরাও জানে না….
“জানি না ড, রস-তার নাম-পারমাণবিক বোমার প্রজেক্টের সাথে যুক্ত ছিলেন কিনা। জানা সম্ভবও নয়। এটুকু জানি, তিনি বড় গ্রহগুলোর একেবারে গভীরের অবস্থা নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতেন। তাঁর উনিশো চুরাশি… স্যরি, উনিশো একাশি সালের পেপারটায় বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু ব্যাপারের অবতারণা করেন…
“এক পৃষ্ঠার চেয়েও ছোট প্রবন্ধে বলেন, গ্যাস জায়ান্টগুলোতে মিথেন, সি এইচ ফোর রূপে প্রচুর কার্বন জমে আছে। সমস্ত ভরের তুলনায় প্রায় সতের পার্সেন্ট। হিসাব করে দেখিয়েছেন যে মূল অংশের তাপমাত্রা খুব বেশি। আর চাপ? মিলিয়ন মিলিয়ন অ্যাটমোসফিয়ার। এ অবস্থায় সেখানে কার্বন আলাদা হয়ে যাবে। এবং, কার্বনটাই আরো নেমে যাবে কেন্দ্রের দিকে। কেন? কারণ কার্বনের ভর বেশি, তাই আকর্ষণ বেশি। তারপর? সহজেই অনুমান করা যায়, ক্রিস্টালাইজড হয়ে যাবে। তত্ত্বটা কিন্তু দারুণ। মনেতো হয় না তিনি কখনো স্বপ্নেও ভেবেছিলেন যে এ থিওরি কখনো খতিয়ে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে…
“তো, এই হল কাহিনীর প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব প্রচারিত হবে কফি ব্রেকের পর। কী বল?
এইতো, নাও। আর মনে হচ্ছে আমি দ্বিতীয় পর্ব বুঝে গেছি। এর সাথে বৃহস্পতি
অভিযানের কোনো না কোনো সম্বন্ধ আছে, কী বল? জুপিটার এক্সপ্লোশন?
নট এক্সপ্লোশন, ইমপ্লোশন। বৃহস্পতি নিজের ভিতরেই ভেঙে পড়েছিল। তারপর ছড়িয়ে পড়ে বাইরে। অন্য অর্থে, ব্যাপারটা পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের মতো। শুধু একটা দিকে পার্থক্য, বৃহস্পতির নতুন আকৃতিটা খুবই সুস্থির, ছোট্ট সূর্য।
“এখন, এক্সপ্লোশন বা বাইরে ছড়ানোর বিস্ফোরণ নয়, বরং ইমপ্লোশন বা ভিতরদিকে গুটানোটা বেশ জটিল। কিন্তু তখন কী হবে ভেবে দেখ তো। উলট পালট হয়ে যাবে না? ভিতরের দিক বাইরে, বাইরের দিক ভিতরে চলে আসবে।
ব্যাপারটা যাই হয়ে থাক না কেন, পৃথিবীর যে কোনো পর্বতের চেয়ে বড় আকৃতির একটা টুকরা মূল কোর থেকে ছিটকে অর্বিটে চলে এসেছিল।
“জিনিসটা বেরিয়ে গিয়ে মূলত একটা গোলকধাঁধায় পড়ে। এতে উপগ্রহের হাজারটা টানাপোড়েনে পড়ে অবশেষে অনেক দিন পর ইউরোপায় তার কুল ফিরে পায়। কিন্তু পতন গতি অনেক অনেক বেশি হয়নি। কেন হয়নি? কারণ এখানে ইউরোপার আকর্ষণে শুধু জিউস পর্বত ছুটে আসেনি। দু বই বেশ বড়, তাই একজন আরেকজনের কাছে গেছে। ইউরোপার অর্বিট খুব একটা নড়েনি, জিউস এসেছে বেশি। ফলে পতনগতিটা হয়েছে একদম কম। সেকেন্ডে মাত্র দু কিলোমিটার।
“যাই হোক, জাহান্নামে যাক ইউরোপা। কথা বলছিলাম জিউস পর্বত নিয়ে। মাঝে মধ্যেই দুঃস্বপ্ন দেখি, জিনিসটা আমাদের দিকেও আসতে পারত। সেক্ষেত্রে পৃথিবীর সাথে জিউসের ভরের পার্থক্য হত অনেক বেশি, পৃথিবী তার জায়গা ছেড়ে নড়ত না, জিউসকেই ছুটে আসতে হত, গতির কথা বা বাকীটা গ্যাভিটিশনাল ফিল্ড।
“তার পরও, যত কম ধাক্কাই হোক না কেন, পরিবেশ আর আবহাওয়ার উপর বিরাট আঘাত আসার কথা, তাই না? আমাদের ইউরোপান বন্ধুরা কী ক্ষতির মুখে পড়েছিল কে জানে! এবং, ফলে সে নিশ্চই এক নাগাড়ে অনেকগুলো সিসমিক অস্থিরতার জন্ম দেয়। শুধু চাবিটা ঘুরিয়ে দিয়েছিল জিউস, অস্থির করে দিয়েছিল ইউরোপার দাঁড়িপাল্লা । সেই জের, এত বছর পর এখনো চলছে এবং কন্দিন চলবে কে জানে!
“আর… অন্য কথা পাড়ছে ফ্লয়েড, রাজনৈতিক ব্যাপারে কী মত? আমি এখন তাদের কারো কাজকে দাম দিতে শুরু করেছি মনে মনে। এ নিয়ে ইউ এস এস এ নিশ্চই যার পর নাই দুঃখিত।
অন্য সবার সাথে।
আর কেউ কি সিরিয়াসলি ভেবেছে যে এই হীরার কাছেধারে ঘেঁষতে পারবে?
“কাজটা এতো কাঁচাভাবে করা হয়নি। বলল সে, শাটলের পিছনে তাকিয়ে, ইন্ডাস্ট্রির উপর মানসিক চাপটাই অসীম হয়ে দাঁড়াবে; বদলে যাবে পৃথিবীর অর্থনীতি, থমকে যাবে অনেক দিনের জন্য, বাস্তবে বাজারে হীরা নামলে কী হবে সেই কথাটাতো ছেড়েই দিলাম। তাই এত পক্ষ-বিপক্ষ-প্রতিপক্ষ পাগল হয়ে গেছে সত্যিটা জানার জন্য।
এখন, তারাতো সব জানে। কী হবে পরবর্তীকালে?
হাজার শুকরিয়া আল্লাহর দরবারে, সমস্যাটা আমার নয়। আমার একটাই পরিতৃপ্তি, গ্যানিমিডের সায়েন্স বেসগুলোর জন্য বেশ মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ করানো গেল।
তারপর, একটু লজ্জিত মনে মনে নিজের কথাটাও যোগ করল, আমার জন্যও।
৫৪. তোমার কি রথ পৌঁছুবে না মোর দুয়ারে…
যা দেখেই তোর মনে হয়ে থাক না কেন, আমি মরে গেছি, যেন কেঁদেই ফেলবে হেউড ফ্লয়েড, কত বছর ধরে আমার শরীরটা ভাল নেই!
অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ক্রিস স্পিকার গ্রিলের দিকে। নেচে উঠছে তার মনটা। কেউ একজন-কিছু একটা-তার সাথে কী নিষ্ঠুর ঠাট্টাই না করেছিল তখন! ভিজে উঠছে চোখ, এতোক্ষণে। কেন এমনটা করল?
পাঁচ কোটি কিলোমিটার দূরে, প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশ কিলোমিটার এগিয়ে আসতে থেকে হেউড ফ্লয়েডও যেন কেমন আবেগিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখনো তার কণ্ঠে ঝরে পড়ছে আনন্দ। ক্রিস এখনো ভাল আছে, বেশ ভাল।