তর, ধান ভানতে শিবের গীত না গাওয়াই উচিত। অবশ্য এখানে কথাটা প্রযোজ্য, কিন্তু তোমার ধৈর্যচ্যুতির রিস্ক নিতে চাচ্ছি না। শুরু করা যাক ইউরোপা থেকেই, তুমিতো জান-ইউরোপা এক কালে বরফের টুকরা ছিল। তারপর লুসিফার তাকে গরম করতে শুরু করে। বাকীটাও তোমার জানা-অনেক অনেক পানি উবে গেল, বাসা বাঁধল অপর প্রান্তে।
দু হাজার পনেরতে শুরু হল আমাদের ব্যাপক খোঁজ-খবর। দেখতে পেলাম, পানি গলছে। কিন্তু কোনো ভূমি জাগছে না। সে সময় থেকে আটত্রিশ সাল পর্যন্ত পুরো চাঁদটায় মাত্র একটাই উঁচু স্থান ছিল। আর সবখানের মতো এখানেও সে ঘাপটি মেরে বসে ছিল অনাদিকাল থেকে। আর, এখন আমরা জানি সেটা কী।
“অবশ্যই জানি। পৃথিবীর চাঁদের টাইকো জ্বালামুখের পাথরের নিচে, বৃহস্পতির অর্বিটে আলো, আঁধারীতে এবং সবশেষে এই উপগ্রহটার বরফের ভিতর লুকিয়ে থাকার অভ্যাস তাদের অনেক আগে থেকেই। তারপরও, নিজের চোখে দেখেও মনোলিথটাকে ঠিক দেয়াল বলে মনে হচ্ছে না। এখনো আমার চোখে মনোলিথ বলতেই দাঁড়িয়ে থাকা কোনো স্তম্ভ কিংবা অর্বিটে চক্কর দিতে থাকা কোনো গুপ্ত পথ।
“আমার মনে হয় আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির ত্রুটির কোনো অভাব নেই। দেখ, আমরা শিখেছি এটা যে কোনো ক্ষতি করে বসতে পারে। আমরা যা চিন্তা করতে পারি, কল্পনার চোখে যা দেখতে পারি তার সবই সে পারে এমনকি যা কল্পনা করতে পারি না তাও ঐ কালো জিনিসগুলো নির্দ্বিধায় করতে জানে।
“যাক, ইউরোপায় সাইত্রিশ সালে কী এক গণ্ডগোল যেন লেগে গেল-এক পরীক্ষার পর আরেক পরীক্ষায় যেতে না যেতেই দশ কিলোমিটার বড় মাউন্ট জিউসের দেখা পেলাম আমরা। না, বলা নেই, কওয়া নেই।
“প্রথমত, এতো বড় অগ্নিগিরির কথা ভাবতেও আক্কেল গুড়ুম হওয়ার কথা। সেগুলো মাত্র কয়েক সপ্তায় জন্মাতে পারে না। তার উপর ইউরোপা আইওর মতো এতো অ্যাকটিভ নয়।
আমার হিসেবে, অনেক সক্রিয়। যতটুকু অ্যাকটিভ তাই অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিতে কাফি। এরচে বেশি কী চাও? শেষ কম্পনটা টের পাওনি?
রসিকতায় কান দেয়ার সময় কোথায়? একজন বিজ্ঞানী তার গত ক বছরের গবেষণার খবর বলার সুযোগ পেয়েছে, আর কী চাই?
“তাছাড়া, এটা আগ্নেয়গিরি হয়ে থাকলে, যদিও আমরা জানি-এখন আর সে প্রশ্ন নেই। জানি-এটা হীরা। কিন্তু তখন যেসব যুক্তি-পাল্টা যুক্তি উঠেছিল তার আলোকে বলছি, আগ্নেয়গিরি হয়ে থাকলে আকাশে অনেক অনেক গ্যাস ছড়িয়ে দিত। তাছাড়া একটা পাহাড়ের জন্মকথা নিয়ে কাঁহাতক খোঁচাখুঁচি করা যায়? আমাদের নিজস্ব প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আর উদ্ভট থিওরী যাতে না আসে সে চেষ্টাও করা হল। নিরুৎসাহিত করা হল সবাইকে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাস্তবের চেয়ে উদ্ভট আর কিছু নেই…
“আমি প্রথম সন্দেহ করি ফিফটি সেভেনে। কিন্তু আমলে নিইনি। পরের দু বছর এমি এমি কেটে গেল। কাজের চাপেই নাভিশ্বাস ওঠার দশা, তার উপর পাহাড় পর্যবেক্ষণের ভূত ঘাড়ে থাকতে পারে বেশিক্ষণ, বল?
“কিন্তু তারপর, প্রমাণগুলো আরো বেশি করে ভেসে উঠল চোখের সামনে। ঠেকানোর তেমন কোনো উপায় থাকল না।
“জিউস পর্বতকে হীরার টুকরো ধরে নেয়ার আগে চাই ব্যাখ্যা। কাঠখোট্টা ব্যাখ্যা না পেলে আমার মনই মানবে না আর অন্যকে মানানো তো দূরের কথা। অন্যদিকে, একজন ভাল বিজ্ঞানীর কাছে বাস্তবের কোনো দাম নেই যদি যথাযথ প্রমাণ না থাকে। কিন্তু প্রমাণ না থাকলেও চলে, থাকতে হবে অপ্রমাণিত একটা ব্যাপার, যা বিজ্ঞানের জন্মকাল থেকে সবকিছুর উপর ছড়ি ঘুরিয়ে এসেছে-তত্ত্ব। আর জানোই তো, আমি নিজেকে ভাল বিজ্ঞানী বলে মানি।
“সাধারণত তত্ত্বগুলো বাস্তব হয় না। এমনকি সত্যের ধার ঘেঁষেও যায় না। কিন্তু এর ফলে চিন্তার একটা পথ বেরিয়ে যায়, যা আসল ব্যাপারটাকে এক-আধটু ব্যাখ্যা করতে পারে। না পারলেও ক্ষতি নেই। তত্ত্ব বা থিওরীটা থাকতেই হবে।
“আর যে কথা তুমি বললে, দেখেও যা তোমার মনের খটকা দূর না করে সেটা আমি আন্দাজ করেছিলাম অনেক দূর থেকে কীভাবে আমার মনে তুষ্টি আসবে? মিলিয়ন মিলিয়ন টন একটা হীরা সালফার আর বরফের রাজত্বে কী করছে? এখন জবাবটা একেবারে সহজ হলেও আমি কী গাধার গাধা, বছর কয়েক আগে কেন সেগুলো মাথায় এল না? এলে অনেক ঝামেলা থেকে বাঁচা যেত, আর অন্তত একটা জীবন যেত বেঁচে।
সে চিন্তাম্বিত মনে থামল। তারপর ধুম করে বলে বসল ফ্লয়েডকে :
কেউ কি তোমাকে ড, পল ক্রুগারের কথা বলেছিল?
নাতো, হঠাৎ কেন বলতে যাবে? আমি অবশ্য তার কথা শুনেছি, অবশ্যই।
“এই হঠাৎ মনে হল আর কী! এতো ঘোলাটে ব্যাপার ঘটছে চারপাশে যে বুঝে ওঠা কঠিন…
“যাই হোক, ব্যাপারটা এখন আর গোপনীয় নয়। বছর দুয়েক আগে আমি একটা অত্যন্ত গোপনীয় মেসেজ পাঠিয়েছিলাম পলের কাছে-ওহ, বলতে ভুলে গেছি, তিনি আমার চাচা। আমি একটা দাবী জানিয়েছি সেই সাথে, হয় আমার কথাটা প্রমাণ করুন, নয়তো বাতিল করুন, তাও প্রমাণের সাথে।
“তিনি বেশি সময় নেননি। হয় তার আঙুলের ডগায় কোনো বাগড়া ছিল নয়তো তার পার্সোনাল নেটওয়ার্কে নজরদারি করছিল কেউ, তোমাদের কেউ হবে। তবে যে-ই করে থাক না কেন, কাজটায় দারুণ ফল পেয়ে গেছে তারা।
“দুদিনের মধ্যেই তিনি সায়েন্টিফিক পেপারের একটা আশি বছরের পুরনো কপি পেলেন-নামটা যেন কী… ও, ন্যাচার। জিনিসটা তখনো পেপারব্যাকে ছাপা হত। সেই পত্রিকাই সব খুলে দিল। কী বলছি, বুঝলে, প্রায় সব।