চিরাচরিত আত্মার কথোপকথন। ভ্যান ডার বার্গ ভাবছে। তারা জিন্দেগীতেও কোনো কাজের কথা বলে না। শ্রোতার আশা আর ভয়ের প্রতিফলন হয় তাদের কথাতে। শূন্য খবর প্রতিধ্বনিত হয় অবচেতন…
বলে যাও।
তারপর প্রশ্ন করলাম, কোথায় গেল সবাই, কেন জায়গাটা এমন বিরান হয়ে আছে?
হাসলেন তিনি, তারপর এমন এক জবাব দিলেন যা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি এখনো।
জানতাম তোমরা কোনো ক্ষতি করতে আসনি। আসতে দেখেই ওয়ার্নিং দেয়া ছাড়া আর কিছু করার সময় ছিল না হাতে। সেই সব
তারপর এখানে এমন এক শব্দ ব্যবহার করলেন যা বোঝা দুষ্কর। অনেকটা যেন, পানির ভিতরে চলে গেল। দরকার হলে খুব দ্রুত চলতে পারে তারা। তোমাদের ফেরার সময় না হলে ওরা কিন্তু বেরুবে না। তাছাড়া বাতাস বিষটাকে উড়িয়ে নিয়েছে… এর মানে কী আল্লা মালুম। আমরা ছড়িয়েছিলাম সুন্দর, পরিষ্কার বাষ্প। সেই একই জিনিসে তাদের আবহাওয়া গঠিত। বিষ এল কোত্থেকে!
যাক! ভাবল ভ্যান ডার বার্গ, এমন কোনো মাথার কিরে কেউ দেয়নি যে কোনো অতিকল্পনাকে যুক্তির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। সম্ভবত বিষ ব্যাপারটা ক্রিসের মনের কোনো গভীরে লুকিয়ে ছিল। যা তার অত্যন্ত শক্তিশালী মানসিক গঠন সত্ত্বেও সময়মতো বেরুতে পেরেছে। ব্যাপারটা রোজির লাশ উগড়ে দেয়ার ঘটনা দেখার পরও হতে পারে। ব্যাপার যাই হোক না কেন, তাতে আমার কোনো ভয় নেই। এবং সেটাই দশ কথার এক কথা। পয়জন! হ্যাঁ গ্যানিমিডে দেখেছিলাম, বিল টির জেট দিয়ে শুধু পানির বাষ্প বা এর গাঠনিক আত্মীয়রাই বের হতে পারে। যাই বেরুক না কেন…
আরে, এক মিনিট। এক্সহস্ট থেকে বেরুনোর সময় কত গরম থাকে.বাপটা? কোথায় যেন পড়লাম…?
ক্রিস, রিয়্যাক্টরে পানিটা ঢোকার পর সবটাই কি বাষ্প হয়ে আসে?
আর কী করবে? ও, যদি সত্যি সত্যি গরম করে ফেলি তো দশ থেকে পনের পার্সেন্ট গ্যাস হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনে বিভক্ত হয়ে যাবে।
অক্সিজেন! হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে গেল ভ্যান ডার বার্গের মেরুদণ্ড-যদিও শাটলের তাপমাত্রা যথেষ্ট গরম। ক্রিসের কাজের পরিধি ভিন্ন; সেখানে অক্সিজেনের অন্য মাত্রার কথা জানার কথা নয় বা সে কথা জেনে মনে পুষে রাখার কথা নয় যে পরে
অবচেতন মন তার সেই অক্সিজেনকে বিষ হিসাবে অভিহিত করবে।
ক্রিস, তুমি কি জান যে প্রাথমিক পৃথিবীতে এবং প্রাথমিক পৃথিবীর মতো গঠনে অন্য সব গ্রহে অক্সিজেন প্রাণীদেহে প্রাণঘাতী হিসেবে কাজ করবে?
মশকরা বাদ দাও, ভ্যান।
রসিকতা করছি না আমি। সেই প্রাচীন বৈশিষ্ট্য এখনো আমাদের শরীরে রয়ে গেছে।
তার মানে আমরা অক্সিজেনে মারা যাব! দারুণ বলেছ কিন্তু।
হু। মারা যাব, যদি ঘনত্ব, চাপ, বা অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় হার বেশি হয়। এই তিনটাই যে হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, বরং তিনটার যে কোনো একটা হলেই হল।
ও! তাইতো, আমাদের ডাইভিং কোর্সে ব্যাপারটা শিখিয়েছিল।
তোমার-দাদু-সত্যি কথাই বলছিল! ঠিক যেন আমরা নগরীটার উপর কার্বন মনোক্সাইড ছড়িয়েছি। অবশ্য ততটা খারাপ নয়, কারণ অক্সিজেন তাড়াতাড়ি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।
তার মানে এখন আমার কথা বিশ্বাস হল? কাঙালের কথা বাসি হলে ফলে।
আমি কখনো বলিনি যে অবিশ্বাস করছি।
তুমি যদি বলতে তাহলে পাগল হিসেবে গণ্য হতে আমার কাছে।
এবার টান টান ভাবটা একটু ঢিলেঢালা হয়ে গেল। হাসল দুজনেই। প্রাণ খুলে।
তার পরনে কী ছিল কখনোই কিন্তু বলনি।
আদিকালের ড্রেসিং গাউন। ছেলেবেলায় যেমন জিনিস পরতে দেখতাম। খুব আরামদায়ক মনে হয়েছিল।
আর কোনো বিস্তারিত ব্যাপার?
কথাটা যখন তুললেই, বলে ফেলি। দেখতে অনেক তরুণ লাগছিল তাঁকে। শেষবার দেখেছিলাম যেমন, তারচে অনেক বেশি চুল মাথায়। তো, আমার মনে হয় না–কী বলব, লোকটাকে ঠিক সত্যিকার বলে মনে হয়নি। যেন কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজ। যেন কোনো কৃত্রিম হলোগ্রাম।
মনোলিথ!
“ঠিক তাই। এ কথাই ভাবছিলাম। মনে আছে, কীভাবে ডেভ বোম্যান ডিসকভারিতে দাদুর সামনে হাজির হয়েছিল? সম্ভবত এবার তার পালা। কিন্তু কেন? তিনি তো আমাকে কোনো ওয়ার্নিং দেননি। বলতে গেলে, কোনো খবরও পাঠাননি। শুধু যেন বিদায় দিয়ে আমার জন্য শুভ কামনা করলেন…
কয়েকটা অপ্রস্তুত মুহূর্তের জন্য ফ্লয়েড কেমন নিথর হয়ে গেল। কী বলল সে? নিজের অজান্তে কী বলল? কিন্তু আন্দাজে ঘাবড়ে যাবার পাত্র নয় ক্রিস। ফিরল ফ্লয়েড, ভ্যান ডার বার্গের দিকে। হাসল একটু ফ্যাকাশে হাসি।
চিন্তাটাকে আর প্রশ্রয় দেয়া যায় না। কিন্তু কেন যেন ভাল লাগছে না তার। একটুও ভাল লাগছে না।
বেশি বকবক করে ফেললাম, না? এবার তোমার পালা। এখানে, সালফার আর বরফ দিয়ে গড়া বিশ্বে একটা মিলিয়ন-মিলিয়ন টন হীরা কী করছে? কারণটা ভাল হলেই ভাল।
কারণটা ভালোয় ভালোয় ভাল। বলল ড. রালফ ভ্যান ডার বার্গ।
৫৩. হৃদয়ের টুকরো
কাহিনী শুরু করল ভ্যান ডার বার্গ।
আমি তখন ফ্ল্যাগস্টাফে কাজ করছি। সে সময় একটা রদ্দি মার্কা পুরনো দিনের মহাকাশবিদ্যার বই পেলাম; তাতে লেখা, সৌর জগতে য আছে, আছে বৃহস্পতি, আর সেই সাথে আছে অনেক টুকরো।
তাই বলে সে বইটা কিন্তু পৃথিবীকে অস্বীকার করেনি। করেছে, বল? শনি, ইউরেনাস, নেপচুন-এই তিন বিশাল গ্যাস-দানবকে একেবারে অস্বীকার করে বসল। অথচ সেগুলো বৃহস্পতির অর্ধেক।