ফ্লয়েড এখনো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে, আরো আরো নাম্বার প্রবেশ করাচ্ছে। কম্পিউটারে।
এখানে তো আর থাকতে পারব না…
কেন না, আদর্শ দৌহিত্র! কেন নয়! ভাবল ভ্যান ডার বার্গ। মরতে হয় এখানেই মরব। বাকী সময়টা যতটুকু সম্ভব কাজে লাগাব না কেন? বিজ্ঞান কিছু পাবে, মানবজাতি কিছু পাবে।
কিন্তু কথা শেষ হয়নি ফ্লয়েডের,–তো, আমরা এমন কোথাও থাকব যেখান থেকে ইউনিভার্সের শাটল সহজেই তুলে নিতে পারবে আমাদের।
ভ্যান ডার বার্গ বড় করে একটা মানসিক শ্বাস নিল। স্বস্তির শ্বাস। কী গাধা আমি! ব্যাপারটা মাথায় এল না কেন? আর চারদিনও নেই। ইউনিভার্স চলে আসছে ইউরোপায়। এম্নিতে বিল টি কে টেনেটুনে বিলাসবহুল বলা গেলেও এর মধ্যে জীবন ধারণের সব উপকরণই পাওয়া যাবে।
এই বিচিত্র আবহাওয়া থেকে সরে গিয়ে একটা সমতল, উষ্ণ পরিবেশে নামতে হবে। গ্যালাক্সির কাছাকাছি। আমি শিওর না তাতে খুব বেশি লাভ হবে কিনা। কিন্তু ঝামেলা হবার কথা নয়। পাঁচশো কিলোমিটার পেরুনোর রসদ আমাদের আছে ঠিকই, কিন্তু সাগর পেরুনোর ঝুঁকি না নেয়াই ভাল।
মুহূর্তের জন্য ভ্যান ডার বার্গ জিউস পর্বতের কথা ভাবল। যাওয়া যায় কোনোমতে। কিন্তু সিসমিক সমস্যাটা নিয়ম করে বাড়ছেই। আইও যত এগিয়ে আসছে লুসিফারের রেখায়, তততা বাড়ছে। কে জানে এখনো জিউসের কাছে সেই যন্ত্রপাতি কাজ করছে কিনা! এই সমস্যা থেকে উতরে যেতে পারলে সাথে সাথে সেটা নিয়ে ভাববে, ঠিক করে রাখল ভ্যান ডার বার্গ।
উপকূল ধরে নিরক্ষীয় এলাকায় উড়ে যাব। কোনো স্পেস শাটল ল্যান্ডিংয়ের জন্য সবচে ভাল জায়গা-এ পরিস্থিতিতে। রাডার ম্যাপে এমন কয়েকটা স্থান দেখা যাচ্ছে।
জানি। মাসাদা তেউ।
এবং সেই সাথে শুনিয়ে রাখল নিজের কানকে, ভ্যান ডার বার্গ, কখনো অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারের সুযোগ হাতছাড়া করো না।
তাহলে? মাসাদা প্লাতেউ এখন গন্তব্য। গুডবাই, ভেনিস। গুডবাই, দাদু…
* * *
ব্রেকিং রকেটগুলোর গর্জন থেমে আসতেই ক্রিস ফ্লয়েড শেষবারের মতো ফায়ারিং সার্কিটগুলো নিরাপদ করে। খুলে নেয় সিটবেল্ট। তারপর বিল টির স্বল্প জায়গায় হাত পা যথা সম্ভব ছড়িয়ে দেয় পাইলট।
খুব একটা খারাপ এলাকা নয় এই ইউরোপা, কী বল? উৎফুল্ল কণ্ঠ জুনিয়র ফ্লয়েডের, এখন, শাটলের রেশন যতটা দাবী করে ততটা খারাপ কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য আমাদের হাতে পাক্কা চার-পাঁচটা দিন পড়ে আছে। তো, কী নিয়ে কথা শুরু করতে চাচ্ছ তুমি, ভ্যান ভায়া?
৫২. অন্য দ্য কাউচ
মনস্তত্ত্ব পড়লে কী ভাল কাজই না হত! ভাবছে ভ্যান ডার বার্গ; তাহলে তার মনোভূমি চষে বেড়াতে পারতাম। এখনতো ব্যাটাকে পুরো সজ্ঞান লাগছে-কিন্তু কেন এখনো ব্যাপারটাকে অস্বীকার করছে না? সাধারণত মানুষ অস্বাভাবিক কিছু করে বসলে পরে অস্বীকার করে, সে কেন করছে না?
গ্র্যাভিটির ছ ভাগের এক ভাগে যে কোনো আসনই আরামদায়ক হবার কথা। তারপরও আয়েশী ভঙ্গীতে বসে আছে ফ্লয়েড, মাথার পেছনে হাত নিয়ে। হঠাৎ ভ্যান ডার বার্গের মনে পড়ে গেল আগের দিনের ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্ববিদ্যার রোগীরা এভাবেই বসে থাকত; বিদ্যাটা এখনো একেবারে ফেলনা হয়ে যায়নি।
অন্য ব্যাপারে কথা শুরু করল সে। এ নিয়ে কথা না বলাই ভাল। তার ধারণা যত তাড়াতাড়ি ফ্লয়েড এই কিম্ভূত কথাটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলবে ততো তাড়াতাড়ি সে মানসিকভাবে সেরে উঠবে।
কিন্তু অন্যদিকটাকে সে মন থেকে সরিয়ে দেয়নি। এমনও হতে পারে, কোনো বড় কারণ মনে ঘাপটি মেরে ছিল না থাকলে এমন সিরিয়াস সময়ে এমন অতিকল্পনা আসা অসম্ভব।
অবাক ব্যাপার, এতোক্ষণে ফ্লয়েড তার সাথে একমত হয়ে গেছে। স্বস্তির সাথে খেয়াল করছে সে, সেই সাথে নিজের চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছে ফ্লয়েড পরিবারের শেষ সদস্য।
আমার ক্রুর মানসিক রেটিং এক্কেবারে এ ওয়ান প্লাস। সে বলল, তার মানে সে আমার কাজে মনোযোগ দিতে দিবে। আসলে আমিও তোমার মতোই ধাঁধায় পড়ে গেছি। কিন্তু, বিশ্বাস কর আর নাই কর, দেখেছিলাম দাদুকে। তিনি আমার সাথে কথাও বলেছেন। কক্ষনো আমি ভূতে বিশ্বাস করিনি-কে করে রে ভাই?-আত্মার কথা যদি বলি, এর একটাই অর্থ হতে পারে। তিনি মৃত। তাকে যদি আরেকটু ভালভাবে জানতে পারতাম! যাক, দেখা হওয়ার আশায় আছি… এখনো কী যেন একটা কথা মনে পড়ছে না…
তাই সাথে সাথে প্রশ্ন তুলল ভ্যান ডার বার্গ, বলতো, ঠিক কী কী বললেন তোমাকে?
একটু অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে ক্রিস বলল, আমি কিন্তু সেই ক্ষণজন্মা স্মৃতিধরদের একজন নই। কাঁটায় কাঁটায় সব কথা বলি কী করে? অর্থবহভাবে তাকাল ভ্যান ডার বার্গের চেহারায়।
স্ট্রেঞ্জ! এখন পিছনে তাকিয়ে বুঝতে পারছি আমরা ঠিক শব্দ ব্যবহার করে কথা বলিনি।
আরো খারাপ খবর: শঙ্কিত ভ্যান ডার বার্গ ভাবল। টেলিপ্যাথির সাথে মরণের পর দেখা হওয়ার সংযোগ! সোনায় সোহাগা। তারপরও ইতস্তত করে বলল:
যাক। তাও, তোমাদের সেই… কথোপকথনের একটা সারমর্ম শুনিয়ে দাও। তুমি কিন্তু এখনো বলনি যে কি মনে নেই।
ঠিক। তিনি অনেকটা আবার তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম। খুব খুশি লাগছে। আশা করি সব ঠিকমতো চলবে। ইউনিভার্স তাড়াতাড়ি তুলে নেবে তোমাদের। গোছের কিছু একটা বলেছিলেন আর কী!